আদিবাসী লেখক-সাংবাদিক তথা ঝাড়খণ্ড মহিলা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ভাসাভি কিরো। নিজস্ব চিত্র।
জমি এবং জীবন-জীবিকার দাবিতে পথে নামতে এক ছাতার এল বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন। রবিবার অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে আদিবাসীদের সর্বভারতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তার নাম ‘সর্বভারতীয় আদিবাসী মঞ্চ’। আদিবাসীদের উপর নিপীড়ণ এবং তাঁদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে লড়াইয়ের ডাক দেওয়া হয় এই কনভেনশন থেকে।
মোট ১১ রাজ্য থেকে ৬০০ আদিবাসী প্রতিনিধি রবিবারের এই কনভেনশনে হাজির ছিলেন। তাঁদের সকলের সম্মতিতেই ১৫ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি হিসাবে রয়েছেন স্বপন হাঁসদা এবং সুশীল লাকড়া। সম্মেলনে চারটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে— ১) মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আদিবাসীদের উপর নিপীড়ন এবং দণ্ডকারণ্যে ‘এয়ার স্ট্রাইক’-এর তীব্র নিন্দা করা, ২) বিজেপি সাংসদ ব্রিজ ভূষণ সিংহের গ্রেফতারির দাবি তোলা, ৩) মণিপুরে অশান্তি এবং আরএসএসের মদতে সাম্প্রদায়িক হিংসার সমালোচনা করা, ৪) অন্ধ্রপ্রদেশের ভাকাপল্লিতে আদিবাসী মহিলাদের গণধর্ষণের ঘটনার নিন্দা করা।
এক দিনের এই কনভেনশনের প্রারম্ভিক সুরটি বেঁধে দেন আদিবাসী লেখক-সাংবাদিক তথা ঝাড়খণ্ড মহিলা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ভাসাভি কিরো। আদিবাসীদের ভাষা এবং সংস্কৃতির উন্নতি সাধনে নয়া নীতির দাবিতে লড়াইয়ের আহ্বান জানান তিনি। ৪২ মিনিটের ভাষণে কিরো বলেন, সরকারি নীতির কারণেই দেশের আদিবাসীরা আজ ‘নিপীড়িত’। জঙ্গলের সম্পদ লুট করতে গিয়ে তাঁদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। দেশের উচ্ছেদ হওয়া ১০ কোটি মানুষের মধ্যে ৮০ শতাংশ মূলত আদিবাসী। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকেও নিশানা করেন কিরো। তাঁর বক্তব্য, জঙ্গল আদিবাসীদেরই সম্পত্তি। কংগ্রেস জমানায় যে ভাবে বহুজাতিক সংস্থার হাতে জঙ্গলের সম্পদ তুলে দেওয়া হত, বর্তমান বিজেপি সরকারও সেই পথেই হাঁটছে। দেশের রাষ্ট্রপতি আদিবাসী জনজাতির প্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও আদিবাসীদের বনের অধিকার কার্যকর করা হয়নি বলেই অভিযোগ করেন ঝাড়খণ্ডের এই আদিবাসীকর্মী।
কমিটির অবৈতনিক চেয়ারম্যান তথা ভারত সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব ইএএস শর্মার অভিযোগ, সরকার আদিবাসীদের ‘বুলডোজ়’ করছে! তাঁদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আদিবাসী-সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ে গ্রামসভা এবং আদিবাসী পর্ষদের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু কোনও নিয়ম-নীতিই মানা হচ্ছে না। রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালদের হাতে সাংবিধানিক অধিকার থাকা সত্ত্বেও তাঁরা আদিবাসীদের জন্য কিছু করেন না বলেও অভিযোগ করেছেন শর্মা।