বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে রাজনৈতিক প্রস্তাবের কথা জানাতে এসেছিলেন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। যা বললেন তার মোদ্দা কথা— ২০২২ সালে দেশে কেউ গরিব থাকবে না, জাত-পাত-ধর্মের ভেদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি থাকবে না। মোদীর অসাধারণ নেতৃত্বে ‘নতুন ভারত’ তৈরি হবে। মোদী আর অমিত শাহের জুটি সঙ্কল্প পূর্ণ করবেন।
তার পরেই ধেয়ে এল প্রথম প্রশ্ন, ‘‘২০২২ সালের সেই ‘নতুন ভারত’-এ পেট্রল-ডিজেলের দাম ঠিক কত টাকায় নিয়ে যাওয়া হবে?’’ পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কালই ‘ভারত বন্ধ’-এর ডাক দিয়েছেন বিরোধীরা।
ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন মন্ত্রীমশাই। ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর জয়ধ্বনি করতে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। জবাব কী দেবেন, বুঝতে পারছেন না। কোনও রকমে সামলে বললেন, ‘‘ইউপিএ আমলে মূল্যবৃদ্ধি ১০ শতাংশের উপরে ছিল, আমাদের সময় অনেক কম।’’ কিন্তু রেহাই মিলবে কবে? তার কোনও জবাব নেই।
সোমবারই ‘ভারত-বন্ধ’ ডেকেছে কংগ্রেস। রাহুল গাঁধীর অনুপস্থিতিতে সনিয়া গাঁধী তাতে শামিল হতে পারেন। বিরোধী নেতারা সকাল ৮টায় রাজঘাট থেকে কিছুটা পদযাত্রা করে ধর্নায় বসবেন। সেখানে থাকছেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ও। দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় মাকেন জানাচ্ছেন, বামেরা-সহ ২১টি দল এই আন্দোলনে শামিল হচ্ছে। বন্ধে শামিল না হলেও তৃণমূল ও সমাজবাদী পার্টি প্রতিবাদে থাকছে। এমনকি এনডিএ-র শরিক শিবসেনাও বন্ধ সমর্থন করেছে। মুম্বইয়ের রাস্তায় পেট্রোপণ্যের দাম লিখে শিবসেনা প্রশ্ন তুলেছে— ‘এ-ই কি অচ্ছে দিন’?
কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়েছেন, বন্ধ ডাকলেও মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা তাদের উদ্দেশ্য নয়। বরং মোদী সরকারের নীতিতে মানুষ যে ভোগান্তিতে পড়েছে, তার প্রতিবাদ জানাতেই তাঁরা পথে নামছেন। জোর করে যানবাহন বা দোকানপাট বন্ধ করা হবে না। বিরোধী দলের কর্মীরা মিছিল করে, অবস্থানে বসে পেট্রোপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং বিষয়টি নিয়ে মোদী সরকারের হাত গুটিয়ে থাকার প্রতিবাদ জানাবেন। যে যে রাজ্যে কংগ্রেস ছাড়া অন্য বিরোধী দলের পাল্লা ভারী, সেখানে তারাও কর্মসূচি নিয়েছে। সেই হিসেবে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী ঐক্যের একটা ময়দানি মহড়াও সোমবারের এই বন্ধ পড়ুয়ারা যাতে হেনস্থা না-হয়, সে জন্য বিহারে সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে নীতীশ কুমার সরকার। কর্নাটকেও সব স্কুল বন্ধ থাকছে।
তবে বিজেপির রাজনৈতিক প্রস্তাবে পেট্রোপণ্যের দামবৃদ্ধির কারণে আম জনতার ভোগান্তির উল্লেখটুকুও নেই। প্রধানমন্ত্রী, অমিত শাহও তাঁদের বক্তৃতায় এর ধারে-কাছে যাননি। মুখ বন্ধ পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানেরও। উল্টে অমিত গলা চড়িয়ে দাবি করেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কোনও বড় অসন্তোষ মানুষের নেই।
কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘মানুষের অসন্তোষ কতটা, কালই টের পাবেন প্রধানমন্ত্রী। শুল্ক চাপিয়ে ১১ লক্ষ কোটি টাকা লুট করেছে মোদী সরকার। মানুষের কোনও অসুবিধা না করেই কাল দেশ জুড়ে বন্ধ হবে।’’ তিনি জানান, যত দিন না শুল্ক কমানো হচ্ছে আর পেট্রোপণ্যকে জিএসটি-র আওতায় আনা না-হচ্ছে, রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে তত দিন আন্দোলন চলবে।
তবে জিএসটিতে পেট্রোপণ্য নিয়ে আসার ব্যাপারে দায় এড়িয়েছেন প্রকাশ জাভড়েকর। তাঁর কথায়, ‘‘জিএসটি নিয়ে যা সিদ্ধান্ত হয়, সব রাজ্য সরকার মিলে তা নেয়। কংগ্রেস-তৃণমূলও তাতে শামিল। ফলে একা বিজেপি কী করবে?’’