প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো এক রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণের মুখেই নরেন্দ্র মোদী সে দেশে পা রাখতে চলেছেন, তিন দিনের ঠাসা কর্মসূচি নিয়ে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনের মূল মঞ্চে মোদী দেশের হয়ে বক্তৃতা দেবেন না ঠিকই, কিন্তু আন্তর্জাতিক দৌত্যে ভরপুর থাকবে তাঁর ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বরের আমেরিকা সফর। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে একটি শান্তি প্রস্তাব নিয়ে রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে কথা বলছে নয়াদিল্লি। সূত্রের খবর, মোদীর সফরে চেষ্টা থাকবে এই প্রস্তাবে ঐকমত্য তৈরির।
এর পাশাপাশি, এক দিকে মধ্য এশিয়ায় সংঘাত নিরসনের রাস্তা খোঁজা, ভারত-আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত আলোচনা, চতুর্দেশীয় অক্ষের (কোয়াড) বৈঠকে সমুদ্রপথে চিনের একাধিপত্যের মোকাবিলার মতো বিষয়ও রয়েছে। অন্য দিকে রাষ্ট্রপুঞ্জে উপস্থিত বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন মোদী। ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সম্মেলনে বক্তৃতা দেবেন। ক্যানসার চিকিৎসায় কোয়াডভুক্ত রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সহযোগিতার দরজাও খুলবে ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘সামিট অব দ্য ফিউচার’ সম্মেলনে বক্তৃতা দেবেন মোদী।
বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রি আজ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “কোয়াডের পার্শ্ববৈঠকে মুখোমুখি হবেন জো বাইডেন এবং নরেন্দ্র মোদী। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বেশ কিছু নতুন উদ্যোগের জন্য বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ পাবেন প্রধানমন্ত্রী। উচ্চ পর্যায়ের বেশ কিছু প্রযুক্তিগত উদ্যোগ দু’দেশের সহযোগিতায় শুরু হয়েছিল বাইডেনের সময়ই। মোদীর সফরকালে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক কাঠামো এবং ভারত-আমেরিকা ওষুধ শিল্পের ফ্রেমওয়ার্ক সংক্রান্ত চুক্তিপত্র বিনিময় হবে।” মোদীর সফরের সার্বিক প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরতে চেয়ে আজ বিদেশসচিব বলেছেন, ‘‘এমন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফর হচ্ছে, যখন সংঘাত, উত্তেজনা এবং বিভাজনের শিকার বিশ্ব। গ্লোবাল সাউথের আরও পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শক্তিক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য, ডিজিটাল বিভাজনে আক্রান্ত বিশ্ব। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় এই বিষয়গুলি উঠে আসবে। থাকবে সুশাসনের কথা, ভারতের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক উদ্যোগের খতিয়ান।”
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের তরফ থেকে মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের বার্তা দেওয়া হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পও গত কাল বলেছেন, মোদী তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদোমির জ়েলেনস্কি-ও দেখা করতে চান ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। চিনা নেতৃত্বের সঙ্গেও নয়াদিল্লির দ্বিপাক্ষিক আদানপ্রদান হয় কি না, সে দিকে নজর থাকবে আন্তর্জাতিক মহলের। কিন্তু এখনই মোদীর সম্ভাব্য দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলির বিষয়ে খোলসা করতে চাননি বিক্রম মিশ্রি। শুধু বলেছেন, কম সময়ের মধ্যে বৈঠকগুলিকে সাজাতে হবে। কার কার সঙ্গে বৈঠক সম্ভব, তা পরে জানানো হবে।
তবে ইউক্রেনের যুদ্ধ থামাতে মোদী তাঁর আমেরিকা সফরে কী ভূমিকা নেন, বা কোনও শান্তি প্রস্তাব দেন কি না, সে দিকেও নজর থাকবে কূটনৈতিক শিবিরের। এর আগে তিনি আলাদা ভাবে মস্কো এবং কিভ সফর করে সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে সংঘাত কমানোর সওয়াল করেছেন। এরই মধ্যে ইউক্রেনের নতুন বিদেশমন্ত্রী আন্দ্রি সাইবিনা আজ ফোনে কথা বলেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে। ইউক্রেনের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে ও সার্বিক সহযোগিতা বাড়াতে শর্তবদ্ধ হয়েছি। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনের আগে নিজেদের মতামত বিনিময় ও পরবর্তী রাজনৈতিক সংলাপের বিষয়েও সমন্বয় করেছি।”
রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ভারত কোনও শান্তি প্রস্তাব আনবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু উড়িয়ে দেননি মিশ্রি। বলেছেন, ‘‘সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া এবং ইউক্রেন সফর করেছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেছেন। এটুকুই বলব, নেতাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা চলছে। কোনও শান্তি প্রস্তাব আনার আগে দেখতে হবে কতটা ঐকমত্য আনা সম্ভব হয়।”