অমদাবাদে ভোটের লাইন। ছবি: এপি।
রাহুল গাঁধী গত কাল দাবি করেছিলেন, গুজরাতের ফল দেখে চমকে যাবেন সবাই। হইহই করে জিতবে কংগ্রেস। ২৪ ঘণ্টা পরে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সব ক’টা বুথ-ফেরত সমীক্ষাই কিন্তু বলছে, গুজরাতে চমক কিছু নেই। অনায়াসেই নিজের গড় ধরে রাখছেন নরেন্দ্র মোদী। শুধু তা-ই নয়, রাহুলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছেন হিমাচলপ্রদেশ।
এটা ঠিক যে, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের ঘোষণামাফিক ১৮২ আসনের গুজরাত বিধানসভায় বিজেপি দেড়শো আসন পাবে এমন ভবিষ্যদ্বাণী কোনও সমীক্ষাই করছে না। কিন্তু লড়াইটা খুব তুল্যমূল্য, এমন ইঙ্গিতও নেই। এবিপি নিউজ-সিএসডিএস বলছে, বিজেপি পাবে ১১৭টি আসন, কংগ্রেস ৬৪টি। যার অর্থ ২০১২-র ভোটের তুলনায় ২টি আসন বেশি পাচ্ছে বিজেপি। কংগ্রেসের আসনও ৩টি বেড়েছে বটে, কিন্তু তারা লড়াইয়েই নেই। বাকি সমীক্ষাগুলির হিসেবে বিজেপি এ বার সব চেয়ে বেশি ১৪৬টি এবং সব চেয়ে কম ৯৯টি আসন পেতে পারে।
গুজরাতি সংবাদমাধ্যমগুলি অবশ্য অন্য কথা বলছে। তাদের মতে, বিজেপির ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে কংগ্রেস। একটি চ্যানেল তো আবার কংগ্রেসকে জিতিয়েই দিয়েছে।
বুথ-ফেরত সমীক্ষার হিসেব মিলবেই, এমনটা অবশ্যই হলফ করে বলা যায় না। এ দিনই লালুপ্রসাদের পুত্র তেজস্বী মনে করিয়ে দিয়েছেন বিহারে বুথ-ফেরত সমীক্ষা না-মেলার কথা। আম আদমি পার্টির নেতারাও বলছেন, দিল্লিতে তো ডাহা ফেল হয়েছিল সমীক্ষা। প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি এ দিনও টুইট করে বলেছেন, ‘‘আমি বরাবরই বলে এসেছি, দায়িত্বে থাকার সময়েও বলেছি— কেবল মাত্র মনোরঞ্জন চ্যানেলগুলিতেই বুথ-ফেরত সমীক্ষা সম্প্রচার করা উচিত।’’ তবে ভোটারদের মনোভাব বুঝতে এই ধরনের সমীক্ষা করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন
গুজরাতে ভোট দিয়ে ‘রোড শো’ প্রধানমন্ত্রীর, অভিযোগ কংগ্রেসের
হিমাচলেও বিজেপির জয় দেখছে সব সমীক্ষা। এবিপি নিউজের মতে, ৬৮ আসনের বিধানসভায় ৩৮টি আসন পাবে বিজেপি। কংগ্রেস ২৯টি। বাকি সমীক্ষাগুলি বিজেপি-কে আরও অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে। একটি সমীক্ষার মতে, বিজেপি ৬২টি আসনও পেয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন
দেশের ভিতরেই ‘বর্ডার’! এক দিকে হিন্দু, অন্য দিকে মুসলমান
সোমবার ভোটবাক্স খোলার পরে যদি এই ছবিই বহাল থাকে, তা হলে মোট ১৯টি রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। সামনের বছর আরও কয়েকটি বিধানসভা ভোট এবং ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে যা আরও অক্সিজেন জোগাবে মোদীকে। আর শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নিতে চলা রাহুলের পক্ষে সেটা হবে বড়সড় ধাক্কা। তিনি গুজরাতে জয়ের স্বপ্ন অতি বড় কংগ্রেস সমর্থকও দেখছিলেন না। তাঁদের আশা ছিল, বিজেপি-কে একশোর নীচে বেঁধে রাখা যাবে।
আরও পড়ুন
গুজরাত, হিমাচলে বিজেপি-কেই এগিয়ে রাখছে বুথ ফেরত সমীক্ষা
প্রকাশ্যে অবশ্য এই সমীক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না কংগ্রেস নেতারা। পিছিয়ে থাকা দলের নেতারা সাধারণত যেমন বলেন, সেই সুরেই কংগ্রেস নেতা রাজীব শুক্লের মন্তব্য, ‘‘গুজরাতের মানুষ বিজেপির শাসনে ত্রস্ত। তাই সমীক্ষার সময়েও ভয়ে সত্যি বলেন না।’’ তাঁর দাবি গুজরাতে কংগ্রেস ১১০টির মতো আসন পাবে। আর হিমাচলে টক্কর কাঁটায় কাঁটায়। রাজীবের মন্তব্যকে কটাক্ষ করে বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, ‘‘হারের দায় এখন ভোটারদের ঘাড়ে ঠেলার চেষ্টা করছে কংগ্রেস।’’
প্রশ্ন হল, মাত্র দশ দিন আগেও গুজরাতে বিজেপির দ্রুত জমি হারানোর যে ছবি জনমত সমীক্ষায় উঠে এসেছিল, তা আজ উল্টে গেল কী করে? সমীক্ষকদের মতে, পাতিদার আন্দোলনের জেরে বিজেপি-কে খেসারত দিতে হলেও সব পাতিদার কংগ্রেসের সঙ্গে যাননি। আবার কংগ্রেস পাতিদারদের সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ক্ষোভকে সুকৌশলে কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। রাহুলের প্রচার সত্ত্বেও যুব ভোট পুরোপুরি হাতছাড়া হতে দেয়নি তারা। আর শেষ বাজারে মোদীর ঝোড়ো প্রচার ফারাক গড়েছে।
গুজরাত নির্বাচন নিয়ে সব খবর পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের সব খবর পড়তে এখানে ক্লিক করুন