আল কায়দা নেতা জাওয়াহিরি।
সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্তে ইতিমধ্যেই প্রচারের যুদ্ধে অনেকটাই পিছু হটতে হয়েছে। ওসামা বিন লাদেনের মতো নেতাও আর নেই। আজ ভারতীয় উপমহাদেশে শাখা খোলার ঘোষণা করে আল-কায়দা তাই ফের প্রচারের আলোয় আসতে চাইল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
আজ একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করেছেন আল কায়দার বর্তমান প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি। তাতে তিনি জানিয়েছেন, আফগানিস্থান, পাকিস্তান, ভারতের একটি বড় অংশ, বাংলাদেশ ও মায়ানমারকে নিয়ে বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। সে জন্য প্রয়োজন জেহাদ।
জাওয়াহিরির ওই ভিডিওটি সামনে আসার পরেই তৎপর হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আজ দুপুরে গোয়েন্দাবাহিনীর প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও।
প্রথমে ভিডিও-র সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে ওই ভিডিওটি আসল। গোটা ঘটনাটি জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। এখনও পর্যন্ত খাতায়-কলমে এ দেশে আল কায়দার উপস্থিতি স্বীকার করে না কেন্দ্র। কিন্তু ওই ভিডিওতে যে ভাবে আল কায়দা প্রধান ভারতের মাটিতে সন্ত্রাস ছড়ানোর হুমকি দিয়েছেন তাঁর প্রেক্ষিতে প্রতিটি রাজ্যের প্রতিটি থানাকে সতর্ক করে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সন্ত্রাসের আশঙ্কায় বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান, গুজরাত, অসম-সহ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে।
ভিডিও বার্তায় নির্দিষ্ট ভাবে কাশ্মীর, গুজরাত, অসম, আমদাবাদের কথা উল্লেখ করেছেন জাওয়াহিরি। গোয়েন্দাদের মতে, কাশ্মীরে তথাকথিত ভারতীয় দখলদারি, গুজরাত দাঙ্গা, অসমে গোষ্ঠী সংঘর্ষের কথা বলে মুসলিম যুবকদের মন জয়ের চেষ্টা করছে আল কায়দা। তাই গুজরাতের পাশাপাশি আলাদা ভাবে আমদাবাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার তীব্রতা আমদাবাদে ছিল অনেকটাই বেশি। এই ভিডিও বার্তা থেকে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে আল-কায়দার নিবিড় যোগের কথাও অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেল বলে মনে করছেন তাঁরা। কারণ, ভারতের বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের স্থানীয় ভাবাবেগের কথা পাক জঙ্গিরাই আল-কায়দাকে সরবরাহ করতে পারে বলে ধারণা কেন্দ্রের।
পাক জঙ্গি সংগঠন ও সে দেশের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে আল-কায়দার যোগের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। গোয়েন্দাদের মতে, তালিবানকে মদত দিতে গিয়েই আফগানিস্তানে ওসামা বিন লাদেনের সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল পাক সেনা ও জঙ্গিদের। পরে সেই যোগ আরও নিবিড় হয়। ১৯৯৮ সালে কেনিয়া ও তানজানিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে হামলার পরে প্রচারিত বার্তায় কাশ্মীরেও জেহাদ চালানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন বিন লাদেন।
ছিনতাই করে আফগানিস্তানে নিয়ে যাওয়া ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানের যাত্রীদের বদলে ভারতের জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিল জঙ্গি নেতা মৌলানা মাসুদ আজহার ও শেখ ওমর শরিফ। পরে পাকিস্তানে মার্কিন সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লের খুনের ঘটনায় ফের গ্রেফতার হয় ওমর শরিফ। তখন পাক গোয়েন্দারাই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন যে ওমর আল-কায়দার সদস্য। পরে পাক সেনা শহর অ্যাবটাবাদে মার্কিন কম্যান্ডো হানায় বিন লাদেনের মৃত্যুও আইএসআই-আল কায়দা যোগের বড় প্রমাণ বলে মনে করে ভারত।
ভিডিওতে ভারতের মুসলিম যুবকদের জেহাদে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন জাওয়াহিরি। অনেক চেষ্টার পরে ভারতীয় উপমহাদেশে নয়া শাখা ‘কায়েদাত আল-জেহাদ’ তৈরি করা গিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, সিরিয়া ও ইরাকে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন আইএসের আকর্ষণ এখন জঙ্গি সন্ত্রাসে যোগ দিতে চাওয়া মানুষের কাছে অনেক বেশি। তাদের প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির জনপ্রিয়তা আপাতত তুঙ্গে। সম্প্রতি উপমহাদেশেও প্রভাব ছড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে আইএস। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে মহারাষ্ট্রের চার যুবক সিরিয়ায় লড়তে গিয়েছিলেন বলে দাবি কেন্দ্রের। পাকিস্তানে সম্প্রতি লিফলেট বিলি করেছে আইএস। সিরিয়া ও ইরাকে এক সময়ে আল-কায়দারই অংশ ছিল আইএস। এখন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে মূল সংগঠন। ওসামা বিন লাদেনের মতো নেতা না থাকায় বাগদাদির সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ায় দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছেন জাওয়াহিরিরা। এ বার ভারতীয় উপমহাদেশেও আইএসের প্রভাব ছড়ানোর চেষ্টায় আতঙ্কিত হয়ে পাল্টা অভিযানে নেমেছে আল-কাদো।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি পাক জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের কোমর অনেকটাই ভেঙে গিয়েছে। তাদের একটি অংশের সঙ্গে আল-কায়দার যোগ ছিল বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। তাই এ বার ভারতে নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণে আল-কায়দা নিজেরাই নাশকতা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রের। এক গোয়েন্দা কর্তার কথায়, “আল-কায়দার এই উদ্যোগে মদত দিতে পারে আইএসআই। উৎসবের মরসুমে ভারতে বড় ধরনের নাশকতা ছড়ানোর পরিকল্পনা তাদের আছে বলে আমরা আগেই জানতে পেরেছি।” তাঁর দাবি, বড় ধরনের কোনও পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই জাওয়াহিরির ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। তাই সতর্কতায় ঢিল দিচ্ছে না মন্ত্রক।