অখিলেশ সিংহ যাদব।
এসপি নেতা মুলায়ম সিংহের জন্মদিন আগামী ২২ নভেম্বর। ওই দিন যদুবংশ তার ঐক্যবদ্ধ ছবি তুলে ধরে ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশবাসীকে বার্তা দেবে। স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে খুড়ো-ভাইপোর ছ’বছরের শীতলতার আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটবে।
মুলায়ম পুত্র অখিলেশ সিংহ যাদব জানিয়েছেন, আগামী ২২ তারিখ শিবপালের দলের সঙ্গে জোটের কথা ঘোষণা করা হবে। তাঁর কথায়, “সমাজবাদী পার্টি এ বার চাইছে, রাজ্যের সমস্ত ছোট দলগুলির সঙ্গে জোট গড়ার কাজ করতে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রগতিশীল সমাজবাদী পার্টি (লোহিয়া)-র সঙ্গে আমরা গাঁটছড়া বাঁধব। কাকা শিবপালের এই দলটিকে আমরা পুরো সমর্থন করব।” তবে পাশাপাশি এ কথাও তিনি জানিয়েছেন, “কাকার দলের সঙ্গে এসপি-র জোট হবে। তারা এসপি-র সঙ্গে মিশে যাবে না। পাশাপাশি ওম প্রকাশ রাজভড়ের দল সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টি-র সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছে। তারা মাউ-য়ে ঐতিহাসিক সমাবেশ করেছেন আমাদের নিয়ে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকার দায়েই কাছাকাছি আসছেন খুড়ো-ভাইপো। যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে যে ভাবে প্রবলভাবে ময়দানে নেমেছে বিজেপি, তাতে খড়কুটোর মতো ভেসে যাওয়ার কথা ছোট দলগুলির। অথবা নিঃশর্তে বিজেপি কাছে আত্মসমর্পন করতে হয়। সে ক্ষেত্রে যাদব এবং মুসলমান বলয়ে যে নিজেদের শেষ রাজনৈতিক চিহ্নও মুছে যাবে, সে কথা ক্রমশ বুঝেছেন একদা অখিলেশের প্রতি বিদ্রোহী হয়ে ওঠা শিবপাল। ২০১৬ সালে অখিলেশ যখন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, সে সময় দলের অন্দরে তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। বাবা মুলায়ম এবং কাকা শিবপাল মিলে তাঁর ঘনিষ্ঠ রামগোপাল যাদবকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। যা নিয়ে শিবপালের সঙ্গে বিবাদ চরমে ওঠে অখিলেশের। এর জেরে ২০১৮ সালে শিবপাল তৈরি করেন প্রগতিশীল সমাজবাদী পার্টি (লোহিয়া)। তবে তার আগেই অর্থাৎ ২০১৭ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয় এসপি।
অখিলেশ ও শিবপাল যে পরস্পরের প্রতি নরম হচ্ছিলেন, সেই ইঙ্গিত মিলছিল বেশ কিছু দিন আগেই। সম্প্রতি শিবপাল বলেন, ‘‘এসপির সঙ্গে মিশে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু বিজেপিকে হারাতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এসপি-র সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করা যেতেই পারে।’’ সন্ধির ইঙ্গিত মিলেছিল অখিলেশের কথাতেও। সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘‘আমাদের জোটে প্রগতিশীল সমাজবাদী পার্টিকে সামিল করা যেতেই পারে। যশবন্তনগর তাঁর (শিবপাল) আসন। সেখানে এসপি প্রার্থী দেবে না। আমরা সরকার গড়লে ওই দলের নেতা মন্ত্রিসভার সদস্য হবেন।’’ প্রগতিশীল সমাজবাদী পার্টি (লোহিয়া)-র নেতা দীপক মিশ্রের কথায়, “আমরা বেশ কিছু দিন ধরেই বলছিলাম, সমমনস্ক সমাজবাদী দলগুলি একজোট হোক। যত বার সমাজবাদীরা এক হয়েছে, তারা ভোটে জিতেছে।”
সম্প্রতি এক বক্তৃতায় জিন্নার প্রসঙ্গ তুলে বিতর্কে জড়িয়েছেন অখিলেশ। খুড়ো-ভাইপোর একজোট হওয়ার বিষয়টির সঙ্গে ওই বিতর্ককে জুড়ে বিজেপি-র উত্তরপ্রদেশের মুখপাত্র হরিশ শ্রীবাস্তব কটাক্ষের সুরে বলেছেন, “একটি পরিবারের আবার জোড়া লাগা খুবই ভাল ব্যাপার। আমরা চাই, পরিবার এক সঙ্গে থাকুক। কিন্তু ব্যাপার হল, এসপি-র বিধায়ক এবং নেতারা তো বিজেপি-তে ঢুকতে চাইছেন। তাই এটাই
দেখার যে, জিন্নাপ্রেমী দলীয় নেতার অধীনে এসপি নিজে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারবে তো!”