অজিত ডোভাল। ফাইল চিত্র।
দেশের নাগরিক সমাজই জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় বিপদ হয়ে উঠতে পারে বলে দাবি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের। শুক্রবার হায়দরাবাদে সর্দার বল্লভভাই পটেল ন্যাশনাল পুলিশ অ্যাকাডেমির অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘নাগরিক সমাজই এখন নতুন যুদ্ধক্ষেত্র, কারণ নাগরিক সমাজকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় স্বার্থে আঘাত হানার চেষ্টা হতে পারে।’’
ডোভালের এই মন্তব্য নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষত এমন একটা সময়ে এই কথাগুলো বললেন ডোভাল, যার কিছু দিন আগেই খোদ সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, জাতীয় নিরাপত্তার জুজু দেখিয়ে রাষ্ট্র অবাধ ছাড়পত্র পেতে পারে না। প্রসঙ্গত সাম্প্রতিক অতীতে বারবারই নাগরিক সমাজের বিরোধী স্বরকে দমন করার অভিযোগ উঠেছে বর্তমান শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে। জেএনইউ, জামিয়া মিলিয়া, ভীমা কোরেগাঁও, শাহিন বাগ, দিল্লি সংঘর্ষ, কৃষক আন্দোলন থেকে হালের পেগাসাস— অসংখ্য ঘটনায় নাগরিক সমাজের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপরে দমননীতি চাপানো হয়েছে বলে ঘরে-বাইরে সমালোচিত হয়েছে মোদী সরকার। কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে টুইট করলেও তাকে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র বলে। এই প্রেক্ষাপটে ডোভাল যে ভাবে নাগরিক সমাজকে কার্যত বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করলেন, তা চলতি বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করল।
জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্বের কথা বলতে গিয়েই ডোভাল গত কাল বলেন, ‘‘নাগরিক সমাজই এখন যুদ্ধের নবতম ক্ষেত্র, বলা যায় চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধক্ষেত্র। নাগরিক সমাজের মধ্যেই এখন অন্তর্ঘাত ঘটিয়ে, তাকে বাগে এনে, বিভাজন করে, ফুসলিয়ে জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজে লাগানো যায়।’’ ব্যাখ্যা দিয়ে ডোভাল যোগ করেন, রাজনৈতিক বা সামরিক লক্ষ্যসাধনে যুদ্ধ এখন আর কার্যকরী নয়। কারণ তা একাধারে খরচসাপেক্ষ, অসাধ্য এবং অনিশ্চিত। সেইখানেই নাগরিক সমাজকে দিয়ে কাজ হাসিল করানোর প্রবণতা আসে বলে তাঁর মত। নতুন পাশ করা আইপিএস-দের প্রতি তাঁর আহ্বান, ‘‘নাগরিক সমাজ যাতে সুরক্ষিত থাকে, সেটা দেখা আপনাদের দায়িত্ব।’’
বিরোধী শিবির এবং নাগরিক সমাজের বড় অংশই অবশ্য মনে করেন, সমাজে বিদ্বেষ এবং বিভাজনের বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটা অনেক বেশি করেছে গেরুয়া শিবিরই। গোরক্ষা, ঘর ওয়াপসি, লাভ জেহাদ, মন্দির-মসজিদ, নাম বদলের ধুয়ো তুলে তারাই সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করেছে। উল্টো দিকে বিরোধী স্বর দেখলেই তাকে কখনও দেশদ্রোহী, কখনও শহুরে নকশালের তকমা দিয়েছে। দেশের নাগরিককেই দেশের বিপদ বলে বর্ণনা করে ডোভাল সেই প্রবণতাকেই আরও উস্কে দিলেন কি না, এ প্রশ্ন তাই উঠতে শুরু করেছে।