Rahul Gandi

Rahul Gandhi: হরিয়ানায় মাকেনের হার, রাহুলের ভুলেই কি জেতা আসন হারাল কংগ্রেস?

রাহুলেরই আস্থাভাজন অজয় মাকেন রাজ্যসভা নির্বাচনে হেরে গেলেন। কুলদীপ বিষ্ণোই আগেই বলেছিলেন, তিনি ‘অন্তরাত্মা’-র ডাক শুনে ভোট দেবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২২ ০৭:২২
Share:

ফাইল ছবি

ছ’বছর আগে চৌধরি ভজন লালের ছেলে কুলদীপ বিষ্ণোইকে কংগ্রেসে নিয়ে আসা, কংগ্রেস ভেঙে তৈরি হওয়া কুলদীপের হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেসকে ফের মূল দলের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার পিছনে রাহুল গান্ধীই প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন। কুলদীপকে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবেও মনোনীত করেছিলেন রাহুল। কিন্তু সেই কুলদীপ যখন হরিয়ানা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হতে না পেরে ক্ষুব্ধ, তখন রাহুল গান্ধী তাঁর সঙ্গে দেখা করে বোঝানোর সময়ই পেলেন না!

Advertisement

হরিয়ানার রাজ্যসভা নির্বাচনে তারই খেসারত দিতে হল কংগ্রেসকে। রাহুল গান্ধীকেও। রাহুলেরই আস্থাভাজন অজয় মাকেন রাজ্যসভা নির্বাচনে হেরে গেলেন। কুলদীপ বিষ্ণোই আগেই বলেছিলেন, তিনি ‘অন্তরাত্মা’-র ডাক শুনে ভোট দেবেন। কংগ্রেসের প্রার্থীর বদলে কুলদীপ বিজেপি-জেজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী কার্তিকেয় শর্মাকে ভোট দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আর এক বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস বিধায়ক কিরণ চৌধরির ভোটও ঠিক মতো না দেওয়ায় বাতিল হয়ে গিয়েছে। ইচ্ছাকৃত ভাবেই কিরণ ভুল করেছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিরণ অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর ভোট বাতিল হয়নি। সে ক্ষেত্রে কার ভোট বাতিল হয়েছে, তারও খোঁজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এই ডামাডোলে পড়ে শেষ পর্যন্ত হেরেই গিয়েছেন রাহুলের প্রার্থী মাকেন। হরিয়ানায় রাজ্যসভার দু’টি আসনের একটিতে বিজেপি, অন্যটিতে বিজেপি-জেজেপি জোট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী জিতে গিয়েছেন।

অজয় মাকেনকে জিতিয়ে আনার জন্য রাহুল পুরোপুরি হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা ও তাঁর পুত্র দীপেন্দ্রর উপর ভরসা করেছিলেন। কুলদীপের সঙ্গে তাঁদের সাপে-নেউলে সম্পর্ক। কংগ্রেস হাইকমান্ড হরিয়ানার পরিষদীয় দলনেতার পদেভূপেন্দ্র হুডাকে বসিয়ে রেখে তাঁরই অনুগামী উদয় ভানকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করার পরেই কুলদীপ চটেছিলেন। শেষ পর্যন্ত হুডাদের নাক কেটে কুলদীপ বলেছেন, ‘‘সাপের ফণা পা দিয়ে চেপে দেওয়ার কৌশল জানা রয়েছে। সাপের ভয়ে আমি জঙ্গল ছেড়ে পালাই না।’’

Advertisement

কুলদীপের এই দলবিরোধী কাজের জন্য আজ সনিয়া গান্ধী তাঁকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করেছেন। কিন্তু গোটা ঘটনার জন্য গান্ধী পরিবারের দিকেই আঙুল উঠছে। হরিয়ানার সিংহ ভাগ কংগ্রেস নেতারই মত, হরিয়ানা এখন জাঠ বনাম অ-জাঠদের লড়াইয়ে বিভাজিত। জাঠ নেতা হুডার কাছে যখন পরিষদীয় দলনেতার পদ ছিল, তখন প্রদেশ সভাপতির পদে কুলদীপের মতো কোনও অ-জাঠ নেতাকে বসিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত ছিল।

রাজ্যসভা নির্বাচনে যে এর ফল ভুগতে হবে, তা হরিয়ানার নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা আঁচ করেছিলেন। তাই নিজের রাজ্য থেকে প্রার্থী না হয়ে সুরজেওয়ালা রাজস্থান থেকে রাজ্যসভায় প্রার্থী হয়েছেন। রাজীব শুক্লও হরিয়ানা থেকে প্রার্থী হতে চাননি। শেষে অজয় মাকেনকে রাজি করানো হয়। ভোটাভুটি নিয়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের ঠেলায় শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত হরিয়ানার ভোটগণনা বন্ধ ছিল। ৯০ আসনের হরিয়ানা বিধানসভায় মাকেনের জয়ের জন্য ৩১ জনের ভোট দরকার ছিল। কংগ্রেসের কাছে ৩১ জন বিধায়কই ছিল। কুলদীপ তাঁকে ভোট না দেওয়ায় এবং কিরণের ভোট বাতিল হয়ে যাওয়ায় মাকেনের ভাগে ভোট কম পড়েছে। অন্য দিকে শাসক জোটের বিজেপি ও শরিক দুষ্যন্ত চৌটালার জেজেপি (জননায়ক জনতা পার্টি)-র বিধায়কেরা বিজেপির প্রার্থী কৃষ্ণ লাল পনওয়ারকে জিতিয়ে অতিরিক্ত ভোট নির্দল প্রার্থী, হরিয়ানার ‘মিডিয়া ব্যারন’ কার্তিকেয় শর্মাকে দেন। ফলে শর্মা মাকেনের থেকে বেশি ভোট পাওয়ায় জিতে যান।

কার্তিকেয় শর্মার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হরিয়ানার চৌটালা পরিবারও ফের এককাট্টা হয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌটালা ও তাঁর বড় ছেলে অজয় সিংহ চৌটালা এখন দুর্নীতিতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে। আবার কার্তিকেয়র দাদা, প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা বিনোদ শর্মার বড় ছেলে মনু শর্মাও জেসিকা লাল খুনের দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে। অভিযোগ, মনু জেলে চৌটালাদের ঠিক মতো খাবার, ওষুধ পেতে খুবই সাহায্য করেছেন। তাই অজয় চৌটালার ছেলে দুষ্যন্তের দল জেজেপি সকলের আগে মনুর ভাই কার্তিকেয়কে সমর্থন জানিয়েছেন। অজয়ের ভাই অভয় চৌটালার সঙ্গে দুষ্যন্তের এমনিতে বিবাদ হলেও তিনিও কার্তিকেয়কে ভোট দিয়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement