ঐশ্বর্য রাই। -ফাইল চিত্র।
পারিবারিক দ্বন্দ্ব এ বার থানা পর্যন্ত গড়াল। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা শাশুড়ি রাবড়ি দেবীর নামে এ বার শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনলেন তাঁরই বড় বৌমা। শাশুড়ি রাবড়ি দেবী তাঁকে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে বার করে দিয়েছেন, এমনকি নিজের নিরাপত্তা রক্ষীদের দিয়ে মাথায় এবং দেহের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করিয়েছেন বলেও পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন বড় বৌমা ঐশ্বর্য রাই।
লালু-রাবড়ির বড় বৌমা ঐশ্বর্য রাই এবং বড় ছেলে তেজপ্রতাপ যাদবের বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে বহু দিন ধরেই টানাপড়েন চলছিল। তা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, বিয়ের ছ’মাসের মধ্যেই ডিভোর্সের মামলা দায়ের করেন তেজপ্রতাপ। বিবাহবিচ্ছেদের সেই মামলা ঝুলে রয়েছে। তবে দুই পরিবারই তেজপ্রতাপের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ছিল। দুই পরিবারই চেয়েছিল, যাতে দুজনের মধ্যে সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি মিটে যায়।
তাই প্রতিদিনই ১০ সার্কুলার রোডে, শাশুড়ির বাংলোয় আসেন ঐশ্বর্য। বেশ খানিকক্ষণ কাটিয়ে ফিরে যান কয়েকশো মিটার দূরে বাবা চন্দ্রিকা রাইয়ের বাড়িতে। গত শুক্রবারও তাই হয়েছিল। কিন্তু ওই দিন তার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই দু’টি ব্যাগ নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে তিনি গাড়িতে উঠে বেরিয়ে যান।
আরও পড়ুন: উন্নাও ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার
কী হয়েছে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে শুধু জানা গিয়েছিল, বিষয়টি ভীষণই ব্যক্তিগত। তবে জামাই ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আচরণে যে চন্দ্রিকা রাই ভীষণ বিরক্ত তা বোঝা যাচ্ছিল।
আরও পড়ুন:আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে এই আইন প্রয়োগ করতে হবে: মমতা
এত দিনে শুক্রবারের সেই ঘটনা সামনে এল। রবিবার থানায় গিয়ে শাশুড়ি রাবড়ি দেবীর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন ঐশ্বর্য। তিনি জানিয়েছে, নিজের ঘরে টিভি দেখছিলেন তিনি। সে সময়ই মোবাইলে একটি মেসেজ মারফত জানতে পারেন যে, তেজপ্রতাপের সমর্থকেরা পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জুড়ে আমার এবং আমার বাবা-মার নামে অশ্লীল কথা ছড়াচ্ছেন।
ঐশ্বর্যর কথা মতো এটা মেনে নিতে পারেননি তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই নীচে নেমে এসে শাশুড়ি রাবড়ি দেবীর কাছে বিষয়টি জানান। তারপর রাবড়ি দেবীও তাঁকে ভর্ত্সনা করতে শুরু করেন। নিজের দেহরক্ষীদের সাহায্যে তাঁকে প্রথমে মাথায় এবং পরে হাঁটু ও পায়ে আঘাত করেন। তারপর চুল ধরে টেনে বাড়ির বাইরে বার করে দেন। জুতো এবং চাদরটাও নিতে দেওয়া হয়নি তাঁকে, অভিযোগে এমনই জানিয়েছেন ঐশ্বর্য। তার উপর নির্যাতনের সময় নিজের মোবাইলে ভিডিয়ো করেছিলেন তিনি, প্রমাণ লোপাটের জন্য মোবাইলটাও ছিনিয়ে নেওয়া হয় তাঁর কাছ থেকে।
এই ঘটনা খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন চন্দ্রিকা রাই। তিনি বলেছেন, ‘‘এতটাই জানতাম যে শুধু আমার জামাই বিপথে চালিত হয়েছে, পরিবারের সহযোগিতায় সে ঠিক পথে চলতে শুরু করবে। এখন দেখছি আমার মেয়ের প্রতি ওঁরা সকলেই নির্মম।” তিনি আরও বলেন, “লালু প্রসাদকে আমার ক্ষমতা দেখিয়ে দেব, আমার সমর্থন ছাড়া এই জায়গায় পৌঁছনো তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না, এই সব মানুষের সঙ্গে আমি সামাজিক এবং রাজনৈতিক ভাবে লড়ব”।
এ দিকে পাল্টা তেজপ্রতাপ সমর্থকদের দাবি, চন্দ্রিকা রাই রাজনৈতিক স্বার্থে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে লালুর কাছে এসেছিলেন। যখন দেখেছেন যে, তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সফল হয়নি, তাই তিনি এ সব করছেন। পুলিশ বিষয়টির তদন্ত করছে।