Air Traffic Control

সৌজন্য উপগ্রহ, অধরা আকাশও এটিসি-র মুঠোয়

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় দুই বিমানের দূরত্ব বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হতেন বিমানবন্দরে থাকা এটিসি অফিসারেরা। অবশেষে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সমগ্র আকাশের দখল নিতে চলেছে এটিসি।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ ০২:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

মাটিতে পা রেখেই তাঁরা যাবতীয় উড়ানের নিয়ন্ত্রক। কিন্তু আকাশের কিছুটা অংশ এত দিন সেই এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল বা এটিসি অফিসারদেরও অধরা ছিল। সেই এলাকা দিয়ে বিমান উড়ে গেলে তার ছবি বিমানবন্দরের মনিটরে ফুটে উঠত না। এমনকি ওই এলাকা দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় পাইলটদের সঙ্গেও সরাসরি কথা বলা যেত না।

Advertisement

ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় দুই বিমানের দূরত্ব বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হতেন বিমানবন্দরে থাকা এটিসি অফিসারেরা। অবশেষে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সমগ্র আকাশের দখল নিতে চলেছে এটিসি। এ বার বিমান তার তথ্য সরাসরি উপগ্রহ মারফত পাঠিয়ে দেবে বিমানবন্দরে। উপগ্রহের দৌলতে মৌখিক যোগাযোগও পরিষ্কার হবে।

প্রায় এক বছর ধরে কলকাতা, মুম্বই ও চেন্নাই বিমানবন্দর থেকে উপগ্রহ মারফত পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগের পরীক্ষা চলছিল। তা সফল হয়েছে। ‘‘প্রতি মুহূর্তে প্রত্যেক বিমানের গতিবিধি বিমানবন্দরের মনিটরে দেখা গেলে এবং পাইলটদের সঙ্গে মৌখিক যোগাযোগ করা গেলে আমরা অনেকটাই নিরাপদ বোধ করি। তা ছাড়া বিমান যোগাযোগে থাকলে বা তাকে মনিটরে দেখা গেলে দুই বিমানের পারস্পরিক দূরত্ব কমিয়ে আনা যায়। বিমানকে তুলে দেওয়া যায় কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায়। তাতে জ্বালানি কম পোড়ে, সময়ও অনেকটা বাঁচে,’’ দিল্লি থেকে বললেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এয়ার ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্টের এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর কল্যাণ চৌধুরী।

Advertisement

এখন যে-ব্যবস্থা চালু আছে, তাকে বলা হয় এডিএস-বি বা ‘অটোমেটিক ডিপেনডেন্স সার্ভেল্যান্স-ব্রডকাস্টার’। তাতে মাটিতে কয়েকশো কিলোমিটার অন্তর ‘রিসিভার’ বসানো রয়েছে। আর প্রতিটি বিমানে রয়েছে ‘ট্রান্সমিটার’। উড়ন্ত বিমান তার ঠিক অবস্থান রিসিভারকে পাঠায়। সেই তথ্য মাটির তলার কেব্‌ল মারফত বিমানবন্দরকে জানায় রিসিভার। বিমানের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবং তাকে যথাযথ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে যে-সব তথ্যের প্রয়োজন, তা এটিসি-র বসে মনিটরে ফুটে ওঠে। তার মধ্যে বিমানের ছবি, তার অবস্থান, গতি, উচ্চতা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য থাকে। ফলে তার সঙ্গে আশেপাশে থাকা বিমানের দূরত্ব পরিষ্কার দেখতে পান এটিসি অফিসারেরা। বিশ্বে প্রায় সর্বত্রই এই ব্যবস্থায় বিমানের অবস্থান জানা হয়।

কিন্তু কলকাতা, মুম্বই, ও চেন্নাই বিমানবন্দরের এটিসি-র অধীনে বড় সামুদ্রিক আকাশ রয়েছে। কলকাতার ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগর, চেন্নাইয়ের ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে রয়েছে ভারত মহাসাগর। মুম্বইয়ে আরব সাগর। গভীর সমুদ্রে রিসিভার বসানো সম্ভব নয়। সেগুলি বসানো থাকে উপকূলে, দ্বীপে। গভীর সমুদ্রের উপরের আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানের সঙ্কেত ধরতে পারে না রিসিভার। তাই তার ছবিও ফুটে ওঠে না মনিটরে।

কলকাতা বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে পোর্ট ব্লেয়ারে একটি এডিএস-বি রয়েছে। সে অনেকটা আকাশের ছবি ধরে রাখে। কয়েক বছর আগে মায়ানমারের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে তাদের কোকো ও সিটুয়ে দ্বীপে বসানো দু’টি এডিএস-বি ব্যবহার করছে ভারত। তার ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে আসা বিমানের ছবি কলকাতায় বসে প্রথম থেকেই পেতে শুরু করেন এটিসি অফিসারেরা। শুধু মাঝখানে আকাশের প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকায় ছবি পাওয়া যায় না।

বিমানবন্দরের কর্তারা জানান, কলকাতায় অধরা এলাকা তো মাত্র ৮০ কিলোমিটার। মুম্বই ও চেন্নাইয়ে সেটা অনেক বড়। ওই এলাকায় থাকা বিমানের ছবি পাওয়া যায় না। পাইলটের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা মুশকিল হয়ে যায়। হাইফ্রিকোয়েন্সি মারফত পাইলট তার তথ্য লিখিত ভাবে পাঠান বিমানবন্দরে। নতুন ব্যবস্থায় উপগ্রহের দাক্ষিণ্যে তথ্য পেতে, যোগ রাখতে সুবিধা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement