Air pollution

Air Pollution: ‘নিখোঁজ’ পুলিশ, বাজি আর দূষণে কালীপুজোর রাতে একে অপরকে টেক্কা দিল কলকাতা-দিল্লি

অনেকের বক্তব্য, আতশবাজি দূর অস্ত্, রাজ্য প্রশাসন এখনও শব্দবাজিই বন্ধ করতে পারেনি। প্রশাসন আদৌ শব্দবাজি ঠেকাতে ইচ্ছুক কি না, সন্দেহ জনমনে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

আইনি অস্ত্র থেকে প্রশাসনিক প্রতিশ্রুতি। ঘাটতি ছিল না সমরসজ্জায়। কিন্তু বাজি ও দূষণের যুগলতাণ্ডব চলল সমানে। যা চাননি পরিবেশ-সচেতন সামাজিকেরা। তাঁরা যা চেয়েছিলেন, দেখা গেল না বাজি ও দূষণের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনের সেই লড়াইটাই।

শুধু পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি বিক্রি এবং পোড়ানো যেতে পারে বলে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যের কৌঁসুলি শীর্ষ আদালতে দাঁড়িয়ে নিষিদ্ধ বাজি রোখার জন্য পদক্ষেেপর কথা শুনিয়েছিলেন। কিন্তু কালীপুজোর রাতে দেখা গেল, দূষণের দৌড়ে কলকাতা ও দিল্লি পরস্পরকে বলছে, আমাকে দেখ!

Advertisement

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির আনন্দ বিহার এবং কলকাতার বিটি রোড মিশে গিয়েছিল এক দূষণবিন্দুতে। দু’জায়গারই বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার সর্বাধিক মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৫০০ পিপিএম। অর্থাৎ দূষণের সর্বোচ্চ স্তরে দাঁড়িয়ে দেশের বর্তমান ও প্রাক্তন রাজধানী। কলকাতার পড়শি শহর হাওড়াতেও সূক্ষ্ম ধূলিকণার সর্বাধিক মাত্রা একই— ৫০০ পিপিএম।

বিটি রোডের থেকে সামান্য পিছিয়ে ছিল শিলিগুড়ি। সেখানকার বাতাসে সূক্ষ্ম ধূলিকণার সর্বাধিক মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৪৯০ পিপিএম। যাদবপুর, রবীন্দ্র সরোবর, বালিগঞ্জেও কালীপুজোর রাতে সূক্ষ্ম ধূলিকণার মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৪০০ পিপিএমের উপরে ঘোরাফেরা করেছে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ স্থানে না-পৌঁছলেও দূষণ ছিল ভয়াবহ। পরিবেশপ্রেমীদের বক্তব্য, সবুজ বাজির আলখাল্লার আড়ালে নিষিদ্ধ আতশবাজিই যে দেদার বিকিয়েছে, দূষণের ভীষণ ছবিতে সেটা স্পষ্ট। এটাও স্পষ্ট যে, রাজ্য প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার দায়ে শীর্ষ আদালত কি প্রশাসনিক কর্তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে, উঠছে প্রশ্ন।

Advertisement

পরিবেশবন্ধুদের অভিযোগ, রাজ্যে কালীপুজোর রাতে কোনও নিয়মবিধি মানা হয়নি। পরিবেশকর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চের কাছে বৃহস্পতিবার রাতে ৭৪টি অভিযোগ জমা পড়েছে। ওই সংগঠনের সম্পাদক নব দত্ত বলেন, “আতশবাজির দূষণ যেমন লাগামছাড়া ছিল, তেমনই শব্দবাজির দৌরাত্ম্য ছিল চরমে। প্রশাসনের ইতিবাচক ভূমিকা চোখে পড়েনি। ব্যারাকপুর, বিধাননগর কমিশনারেট বাজি ঠেকাতে পুরোপুরি ব্যর্থ।” তাঁর অভিজ্ঞতা, অন্যান্য বছর পুলিশের উচ্চ মহলে অভিযোগ জানালে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করতে দেখা যেত। এ বার সেটারও দেখা মেলেনি।

অনেকের বক্তব্য, আতশবাজি দূর অস্ত্‌, রাজ্য প্রশাসন এখনও শব্দবাজিই বন্ধ করতে পারেনি। প্রশাসন আদৌ শব্দবাজি ঠেকাতে ইচ্ছুক কি না, সন্দেহ দানা বাঁধছে জনমনে। শুক্রবারেও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দেদার ফেটেছে শব্দবাজি। শিক্ষিত সমাজের একাংশ যে-ভাবে আইনকে ফাঁকি দিয়ে বাজি ফাটিয়েছে, তা নিয়েও সমালোচনা চলছে নানা মহলে। সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে, কলকাতার কসবা, গরফা, যাদবপুর, উত্তর শহরতলির বাঙুর অ্যাভিনিউ, সল্টলেক, লেক টাউন, বাগুইআটি, বরাহনগর, খড়দহ, নিউ ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রাম, দমদমে বৃহস্পতি-শুক্রবার রাতে শব্দবাজির দাপট ছিল লাগামছাড়া। কিন্তু পুলিশের ভূমিকা সে-ভাবে চোখে পড়েনি। তবে কলকাতা পুলিশের দাবি, কালীপুজোয় রাত ৮টা পর্যন্ত ৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ওই রাতে সব ধরনের অপরাধ মিলিয়ে ৭২০ জনকে গারদে পোরা হয়েছে। কিন্তু বাজি পোড়ানোর জন্য গ্রেফতারের সংখ্যা আলাদা ভাবে জানায়নি তারা।

কালীপুজোর রাতে বাজির তাণ্ডবে পিছিয়ে থাকেনি বিভিন্ন জেলাও। রাত যত বেড়েছে, শব্দবাজির তাণ্ডব ততই তীব্র হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, মেদিনীপুর শহর, খড়্গপুর-সহ গোটা পশ্চিম মেদিনীপুরে, পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর, আসানসোল ও পাণ্ডবেশ্বরে, হুগলির শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটী, উত্তরপাড়া ও পোলবায়, বীরভূমের সিউড়ি, বোলপুর ও রামপুরহাটে, পূর্ব বর্ধমানের কালনায় এবং বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে।

বৃহস্পতিবার রাতে মেদিনীপুরের হবিবপুরে বাজি ফাটাচ্ছিলেন এক দল যুবক। প্রশ্ন করা হয়, ওগুলো কি সবুজ বাজি? এক যুবকের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘সবুজ বাজি আবার কী?’’ পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে কালীপুজোর মণ্ডপেই দেদার শব্দবাজি পোড়ানো হয়েছে। ফেটেছে দোদোমা, গেছোবোম, ফুলবোম. কলসিবোম। বিভিন্ন মণ্ডপে আতশবাজির প্রদর্শনী দেখতে ভিড়ও ছিল। তবে এসডিপিও (এগরা) মহম্মদ বৈদুজামানের দাবি, ‘‘আদালতের নির্দেশে অমান্য করে কোথাও নিষিদ্ধ বাজি পোড়ানো হয়নি।’’ শব্দবাজি কম পুড়লেও আতশবাজি পোড়ানোয় খামতি ছিল না মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর পুলিশ-জেলায়। জঙ্গিপুর পুলিশ-জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “রাত একশো শতাংশ শব্দহীন ছিল, এমন দাবি করছি না। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় শব্দবাজি এ বার অনেক কম পুড়েছে।” বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীর মন্তব্য, “শেষ মুহূর্তে বাজিতে কিছু ছাড় দেওয়ায় সমস্যা হয়েছে।’’

শুক্রবারেও সন্ধ্যা থেকে বাজি ফেটেছে রাজ্য জুড়ে। পুড়েছে আতশবাজিও। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, মালদহ, বালুরঘাট, কোচবিহার, রায়গঞ্জে বাজির দাপট উত্তরোত্তর বেড়ে চলা সত্ত্বেও পুলিশি সক্রিয়তা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। বাজির উপদ্রব ছিল নদিয়ার কল্যাণী, রানাঘাট, দুই ২৪ পরগনাতেও। তবে নদিয়ায় সক্রিয় ছিল পুলিশ। গ্রামীণ হাওড়ায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টার পর থেকে বাজি ফাটানো অনেকটাই কমে যায়। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দু’একটি জায়গায় পটকার শব্দ শোনা গেলেও মোটের উপরে জেলায় বাজি-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে বাগনানে বাজির প্রতিবাদ করায় একটি পরিবার আক্রান্ত হয়েছে বলে পরিবেশকর্মী সংগঠনের অভিযোগ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement