Delhi Air Pollution

প্রাক্ শীতে বাড়ছে দূষণ দিল্লিতে

শীতের শুরুতে দিল্লির বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হল খেতের আগাছা পোড়ানো। রবি মরসুম শুরু হওয়ার আগে পঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের চাষিরা খেতের আগাছা পুড়িয়ে ফসলের জমি তৈরি করে থাকেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:২১
Share:

দিল্লির দূষণ-দৃশ্য। —ফাইল চিত্র।

শীতের মরসুম কড়া নাড়ছে। ফি বছরের মতো দিল্লি ও রাজধানী সংলগ্ন এলাকায় হাজির বায়ুদূষণ। দীপাবলির ১০ দিন আগেই দিল্লি, নয়ডা, গুরুগ্রামের বেশ কয়েকটি জনবহুল এলাকায় বায়ু মানের সূচক ‘অতি খারাপ’ বলে চিহ্নিত করেছে পরিবেশ দফতর। বায়ুদূষণের পাশাপাশি, দিল্লি সরকারের উদ্বেগ বাড়িয়েছে যমুনার দূষণ। গত কয়েক দিন ধরে যমুনার জলে সাদা ফেনা দেখা যাচ্ছে। যা অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে জানান পরিবেশবিদেরা। আর দূষণ নিয়ে আম আদমি পার্টি (আপ) এবং বিজেপির তরজা শুরু হয়েছে।

Advertisement

শীতের শুরুতে দিল্লির বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হল খেতের আগাছা পোড়ানো। রবি মরসুম শুরু হওয়ার আগে পঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের চাষিরা খেতের আগাছা পুড়িয়ে ফসলের জমি তৈরি করে থাকেন। ওই সময়ে বায়ুপ্রবাহের অভিমুখ দিল্লির দিকে থাকায় আগাছা পোড়ানো ধোঁয়ার চাদর জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের আকাশে দীর্ঘ সময় থাকতে দেখা যায়। সাধারণত নভেম্বরের শুরুতে এ ঘটনা দেখা গেলেও, এ বারে অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আগাছা পোড়ানো ধোঁয়ার কবলে দিল্লি। দীপাবলিতে বাজির ধোঁয়ায় পরিস্থিতি আরও কতটা খারাপ হবে, তা ভেবেই এখন থেকে উদ্বেগে পরিবেশবিদরা।

আজ সকালে দিল্লির অন্যতম বাস ডিপো আনন্দ বিহারে বায়ু সূচকের মান ছিল ৪৫৪। পরিবেশবিদদের মতে যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। দিল্লির বায়ুর মান খারাপ হওয়ার পিছনে আজ হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ সরকারকে দায়ী করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশী। তবে যেহেতু পঞ্জাবে গত দু’বছর ধরে আপের সরকার তাই পঞ্জাবকে ক্লিনচিট দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় রিপোর্ট বলছে আপ সরকার আসার আগে (২০২১) পঞ্জাবে যেখান প্রায় ৭১,৩০০ আগাছা পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছিল, ২০২৩ সালে তা ৩৬,৬০০-র কাছাকাছি। পঞ্জাব সরকার যদি আগাছা পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তা হলে হরিয়ানা বা উত্তরপ্রদেশ সরকার কেন তা পারবে না? আসলে দিল্লির মানুষকে শাস্তি দিতেই আগাছা পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ করছে না ওই দুই বিজেপি পরিচালিত সরকার।’’ পাশাপাশি, আজ সকালে উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লি সীমানা সংলগ্ন আনন্দ বিহার বাস ডিপো ঘুরে দেখেন অতিশী। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘দিল্লিতে কোনও ডিজ়েল বাস চলে না। অথচ উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা ডিজ়েল বাস দিল্লিতে প্রবেশ করছে। ওই বাসগুলিই বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে।’’ কিন্তু বায়ুদূষণ কম করার জন্য গত ১০ বছরে আপ সরকার কী পদক্ষেপ করেছে তার কোনও সদুত্তর দিতে ব্যর্থ দলীয় নেতৃত্ব।

Advertisement

কেবল বায়ুই নয়, যমুনার দূষণও বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মত পরিবেশবিদদের। গত কয়েক দিন ধরেই দিল্লির কালিন্দি কুঞ্জ এলাকায় যমুনার জলস্তরের উপরে সাদা ফেনা। পরিবেশবিদদের মতে, যমুনায় বন্যার জল বাড়লে এ ধরনের ফেনা থাকে না। বন্যার জলে ক্ষতিকারক পদার্থ মিশে যায়। শীতে জলস্রোত কম থাকলে সাধারণত এ ধরনের ফেনা দেখা যায়। কিন্তু এ বার বর্ষার শেষেই এ ধরনের ফেনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত জলে অ্যামোনিয়া ও ফসফেটের পরিমাণ বেড়ে গেলে ওই সাদা ফেনা তৈরি হয়। স্থানীয় অনেককে ওই ফেনা মেখে স্নান করতে দেখা গিয়েছে। যা শরীরের জন্য ভীষণ খারাপ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কয়েক দিন পরেই ছট উৎসব রয়েছে। সে সময়ে পুণ্যার্থীদের যমুনায় স্নান এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

পূর্ব দিল্লির বিজেপি সাংসদ হর্ষ মলহোত্রার অভিযোগ, ‘‘প্রত্যেক বার বিধানসভা ভোটের আগে যমুনা সাফ করার প্রতিশ্রুতি দেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। এর জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ সেস হিসাবে হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ হয়েছে। সেই টাকার কী হল তার কোনও হদিস নেই।’’ হর্ষের দাবি, দিল্লি সরকারের দূষণ নিয়ন্ত্রণে ঢিলেঢালা মনোভাব যমুনাকে শেষ করে দিয়েছে। দিল্লিতে প্রবেশের পরে দূষণের কারণে যমুনার জলে অক্সিজেনের মাত্রা ৯% কমে যায়। যমুনা যখন উত্তরপ্রদেশ প্রবেশ করে, তখন জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কার্যত শূন্যতে নেমে আসে। যা ভীষণ ক্ষতিকর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement