আরও একটি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। দিল্লি থেকে নতুন রুটে ইউক্রেন যেতে সময় লাগে প্রায় সাত ঘণ্টা। যাওয়ার সময় ফাঁকা বিমান নিয়ে যাবেন কর্মীরা। আগে সাত ঘণ্টার উড়ান শেষে হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে তবেই ফিরতি উড়ানের ককপিটে বসতেন পাইলটেরা।
প্রতীকী ছবি।
উড়ান সব সময়েই উত্তেজনার, আনন্দের। কিন্তু ককপিটে বসে ওঁদের উড়ানকালটা খুব সুখে কাটে না। নিত্যই টান টান হয়ে থাকে স্নায়ু। এত জন যাত্রী ও সহকর্মীর প্রাণ হাতের মুঠোয় নিয়ে উড়তে হয় পাইলটদের। আর যুদ্ধের দামামা বেজে যাওয়া দেশের আকাশ হলে তো কথাই নেই।
ইউক্রেনের বর্তমান যা হাল, তাতে সেখানে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর নিজেদের জীবন বাজি রেখে তাঁদের উদ্ধার করতে যাচ্ছেন বিমানকর্মীরা।
মাত্র আট বছর আগের কথা। ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই আমস্টারডাম থেকে কুয়ালা লামপুর যাচ্ছিল মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের উড়ান। বিমানে ২৮৩ জন যাত্রী। দুই পাইলট-সহ ১৫ জন বিমানকর্মী। ইউক্রেনের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় রাশিয়া সীমান্ত থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার ভিতরে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বিমানটি উড়িয়ে দেওয়া হয়। মারা যান সকলেই। তখনও রাশিয়া-বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল ইউক্রেন। তবে বিমান ধ্বংসের দায় বর্তেছিল রাশিয়ার সমর্থকদের উপরে।
আবার সেই যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব। আবার সেই ইউক্রেনের আকাশ! মঙ্গলবার রাতেই ইউক্রেন উড়ে গিয়ে এক দল ভারতীয়কে ফিরিয়ে এনেছে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ান। আজ, বৃহস্পতিবার কাকভোরে দিল্লি থেকে উদ্ধারকারী দ্বিতীয় বিমানের উড়ে যাওয়ার কথা।
বিমানকর্মীদের একাংশের মতে, এখন এই উদ্ধারকাজে উড়ে যাওয়াটা কপালে মৃত্যুর তিলক কেটে যাওয়ারই শামিল। কেউ জানে না, আকাশে বিমান দেখে কখন কে দুম করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে উড়িয়ে দেবে। ভারতের আকাশসীমায় ফিরে আসার আগে পর্যন্ত স্বস্তি নেই!
বিমান মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারত থেকে সাধারণ ভাবে যে-আকাশপথে ইউক্রেন যাওয়া হয়, সেই নিয়মিত রুট বদলে ফেলা হয়েছে। এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে রাশিয়ার আকাশ। যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, রাশিয়ার তরফে যে-কোনও সময়েই ইউক্রেনের উপরে আক্রমণ চালানো হতে পারে। এমন অবস্থায় রাশিয়ার আকাশ দিয়ে ইউক্রেনে ঢোকা মূর্খামি ছাড়া আর কিছু নয়। তাতে বিপদ আসতে পারে দু’দিক থেকেই। তাই রুট বদলে ঠিক হয়েছে, তুরস্কের আকাশপথ বরাবর বিমান চলাচল করবে। তাতে জ্বালানি বেশি পুড়লেও জীবনের ঝুঁকি কমবে বলেই মন্ত্রক-কর্তাদের বিশ্বাস।
আরও একটি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। দিল্লি থেকে নতুন রুটে ইউক্রেন যেতে সময় লাগে প্রায় সাত ঘণ্টা। যাওয়ার সময় ফাঁকা বিমান নিয়ে যাবেন কর্মীরা। আগে সাত ঘণ্টার উড়ান শেষে হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে তবেই ফিরতি উড়ানের ককপিটে বসতেন পাইলটেরা। কিন্তু এখন কিয়েভে পৌঁছে হোটেলে বিশ্রামের কোনও সুযোগ নেই। তার অনুমতিও পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। তা ছাড়া আটকে পড়া ভারতীয়দের নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরতে হবে দেশে। ফলে দু’দল বিমানকর্মী পাঠাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। এক দল বিমান নিয়ে যাওয়ার সময় অন্য দল বিশ্রাম নেবে। ফেরার সময় বিমানের ভার দ্বিতীয় দলের।
তবে যতই ঘুরপথে যাক, স্বস্তি নেই মনে। কারণ, মাত্র বছর দুয়েক আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরানের তেহরান থেকে ১৭৬ জন যাত্রী নিয়ে কিয়েভের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পরে পরেই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় ইউক্রেন উড়ান সংস্থার বিমান। সে-বার অভিযোগের তির ছিল ইরানের ইসলামিক গ্রুপের দিকে।
বাধ্য হয়ে এখন আপৎকালে সেই রুটেই যেতে হচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়াকে।