জহিদ আবদুল মজিদ। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।
অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে দুর্বল আলোয় ভাল করে ঠাহর হচ্ছিল না কিছু। তাই পরনের পিপিই খুলেই রোগীর দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। সেই অবস্থায় রোগীর শ্বাসনালিতে লাগানো নল ঠিক করে দিলেন। লকডাউনের মধ্যেও গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে সামনে থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তার মধ্যেই এ ভাবে মানবিকতার পরিচয় দিলেন দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এমস)-এর এক তরুণ চিকিৎসক।
গত ৭ মে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। আদতে কাশ্মীরের অনন্তনাগের ওয়ানিহামা-ডায়ালগাঁওয়ের বাসিন্দা জহিদ আবদুল মজিদ গত দু’বছর ধরে এমসে আবাসিক চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলা কাজ সেরে রোজা ভাঙতে যাচ্ছিলেন তিনি। সেইসময় আচমকা ফোন আসে তাঁর কাছে। বলা হয়, অ্যাম্বুল্যান্সে করে ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক করোনা রোগীকে। সেখানে তাঁর সাহায্য লাগবে।
ফোন পাওয়া মাত্রই সেখানে ছুটে যান জহিদ আবদুল মজিদ। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সের কাছে গিয়ে দেখেন, রোগীর শ্বাসনালিতে যে নল লাগানো রয়েছে, সেটি ঠিক ভাবে বসেনি। তার জেরে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে রোগীর। অবিলম্বে সেটি ঠিক করতে না পারলে রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারতেন। তাই আগুপিছু না ভেবে নিজেই হাত লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন জহিদ।
আরও পড়ুন: বাড়ি ফিরতে চাওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু ঠেকাতে হবে সংক্রমণও: মোদী
আরও পড়ুন: ৭ দিনেই ১০০ আক্রান্ত, হাওড়ার রাস্তায় নমুনা সংগ্রহে বসল কিয়স্ক
কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সের স্তিমিত আলোয় ঠিক ভাবে কিছু ঠাহর হচ্ছিল না। তার উপর পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পরে থাকায়, স্পষ্ট ভাবে দেখতেও অসুবিধা হচ্ছিল। তাই পিপিই খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেই মতো প্রথমে ফেস শিল্ড খুলে রাখেন তিনি। খুলে ফেলেন চোখের গগলসও। শুধুমাত্র এন-৯৫ মাস্ক পরা অবস্থায় নল ঠিক করতে হাত লাগান তিনি।
কাজ মিটে গেলে নিজেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পিপিই খুলে ফেলার বিষয়টি জানান জহিদ। রোগীর সংস্পর্শে আসায় সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কোয়রান্টিন সেন্টারে পাঠানো হয়। এখনও সেখানেই রয়েছেন জহিদ। আর ওই রোগী রয়েছেন ভেন্টিলেটরে ।
বিষয়টি সামনে আসার পর রবিবার সংবাদমাধ্যমের তরফে জহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আজই বাবা ফোন করেছিলেন। বললেন করোনার চিকিৎসা করতে গিয়ে যদি মারাও যাই, উনি দুঃখ করবেন না। অনেকের জীবন বাঁচিয়ে ছেলে শহিদ হয়েছে বলে মনে করবেন। বাবার সঙ্গে কথা বলে বুকের উপর থেকে পাথরটা নেমে গেল। যে ভাবে ওই সময় এগিয়ে গিয়েছিলাম আমি, বাবা-মা তার প্রশংসাই করেছেন।’’
তবে এত কিছুর পরেও তিনি শুধু কর্তব্যই পালন করেছেন বলে জানান জহিদ। তিনি বলেন, ‘‘পবিত্র রমজান মাস চলছে। একজন মুমূর্ষু মানুষকে সাহায্য করেছি। ডাক্তার হিসাবে এবং মানুষ হিসাবে কোনও রোগীর ক্ষতি হোক এমনটা চাইব না। তবে এমসে সিনিয়রদেরও এ ভাবেই এগিয়ে যেতে দেখেছি।’’তবে পিপিই না পরে করোনা রোগীর কাছে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, তাই কেউ যেন এমন পদক্ষেপ না করেন, সে ব্যাপারেও সতর্ক করেন জহিদ।