গুরমিত রাম রহিম।
ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল ২০০২ সালে। ১৫ বছর পেরিয়ে মামলার রায় ঘোষণা হবে শুক্রবার। হরিয়ানার পঞ্চকুলায় বিশেষ সিবিআই আদালত রায় ঘোষণা করবে। কিন্তু এমন এক জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের জেরে এই মামলা যে, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বারুদের স্তূপে পরিণত হয়েছে দেশের দু’টি রাজ্য। ধর্মীয় সংগঠন ‘ডেরা সচ্চা সৌদা’-র প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংহের বিরুদ্ধে দুই শিষ্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। তাঁর প্রবল প্রতিপত্তি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের জেরে প্রথম পাঁচ বছর মামলাই শুরু করা যায়নি। পরে সেই মামলার বিচার শুরু হয় এবং এত দিনে রায় ঘোষণার সময় এসেছে। কিন্তু রায় ঘোষণার দিনে গুরমিত রাম রহিমের লক্ষ লক্ষ অনুগামী পঞ্চকুলা-চণ্ডীগড়-মোহালির দখল নেওয়ার ছক কষেছেন বলে প্রশাসনের কাছে খবর। ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে গোটা হরিয়ানায়। পঞ্জাব এবং হরিয়ানার বিভিন্ন এলাকায় জারি হয়েছে হাই অ্যালার্ট।
পঞ্জাব এবং হরিয়ানাতে বাবা রাম রহিমের তথা ডেরা সচ্চা সৌদার অনুগামীর সংখ্যা বিপুল। বাবা রাম রহিমের যে কোনও প্রকাশ্য কর্মসূচিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ পথে নামেন ওই দুই রাজ্যে। এ হেন রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি সংবেদনশীল ছিল অনেক দিন ধরেই। সেই মামলার রায় ঘোষণার সময় এসে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে পঞ্জাব-হরিয়ানায়।
সোমবার থেকেই পুলিশি টহল শুরু হয়ে গিয়েছে পঞ্জাবের ভাতিন্ডায়। ছবি: পিটিআই।
চণ্ডীগড় সংলগ্ন পঞ্চকুলার বিশেষ সিবিআই আদালতে বিচার হয়েছে বাবা রাম রহিমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের। শুক্রবার রায় ঘোষণার সময় তাঁকে আদালতে হাজির হতেও বলা হয়েছে। বাবা রাম রহিম শেষ পর্যন্ত আদালতে হাজির হবেন কি না, প্রশাসন নিশ্চিত নয়। কিন্তু ডেরা সচ্চা সৌদার অনুগামীরা ইতিমধ্যেই চণ্ডীগড়, পঞ্চকুলা, মোহালিতে জড়ো হতে শুরু করেছেন বলে পুলিশের দাবি। ইতিমধ্যেই রাম রহিমের হাজার দশেক অনুগামী চণ্ডীগড়ে ঢুকে পড়েছেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, শুক্রবার ডেরা সচ্চা সৌদার প্রায় ১০ লক্ষ অনুগামী পঞ্চকুলা-চণ্ডীগড়-মোহালিতে জড়ো হতে পারেন।
আরও পড়ুন: তিন তালাককে তালাক কোর্টের
বিশেষ সিবিআই আদালতের রায় যদি রাম রহিমের বিরুদ্ধে যায়, তা হলে চণ্ডীগড় এবং আশপাশের অঞ্চলে তো বটেই পঞ্জাব-হরিয়ানার বিভিন্ন এলাকায় আগুন জ্বলতে পারে বলে প্রশাসনের আশঙ্কা। সেই কারণেই ১৪৪ ধারা এবং হাই অ্যালার্ট জারির পথ নিচ্ছে প্রশাসন। ডেরা অনুগামীরা খালি হাতে সমবেত হবেন না বলেই পুলিশ মনে করছে। ডেরার বিভিন্ন উপাসনা স্থলে ইতিমধ্যেই অস্ত্রশস্ত্র এবং পেট্রল মজুত করা শুরু হয়েছে বলে পুলিশের কাছে খবর রয়েছে।
আরও পড়ুন: তিন তালাক নিয়ে মত আলাদা ছিল প্রধান বিচারপতিরই
শুক্রবার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হতে পারে বলে ধরে নিয়ে পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্ত সিল করছে পুলিশ। ওই দিন ৭০০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন থাকবেন চণ্ডীগড়-পঞ্চকুলা-মোহালি ঘিরে। ৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীও চেয়েছে হরিয়ানা প্রশাসন। ৩১ অগস্ট পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখার প্রয়োজন পড়তে পারে বলে প্রশাসন মনে করছে। শুক্রবার ডেরা সমর্থকরা আইন ভাঙার চেষ্টা করলেই গণ-হারে গ্রেফতার করার পরিকল্পনা করেছে পুলিশ। চণ্ডীগড়ের একটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী কারাগারে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। অন্তত ২০ হাজার লোককে গ্রেফতার করে সেই অস্থায়ী কারাগারে রাখা সম্ভব হবে বলে হরিয়ানা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে ডেরা সমর্থকরা যাতে চণ্ডীগড় এবং সংলগ্ন এলাকায় ঢুকতেই না পারেন, তেমনটাই নিশ্চিত করতে চাইছে প্রশাসন। সব হোটেল, গেস্ট হাউজ এবং ধর্মশালায় কড়া নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ। আগামী কয়েক দিন পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া কাউকে ঘর হোটেলে ঘর ভাড়া দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসন।