দিল্লিতে আন্দোলনে সামিল ঋণগ্রস্ত কৃষকরা।—ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনে বাকি আর মাত্র কয়েক মাস। অথচ সেমিফাইনালে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। মঙ্গলবার পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়েছে।তাতে পর্যুদস্ত হওয়ার পরেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে মোদী সরকার। বিজেপি-বিমুখ গ্রামীণ ভোটারদের ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে তারা। যার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে, বিপুল পরিমাণ কৃষিঋণ মকুবের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে। খুব শীঘ্রই সেই সংক্রান্ত ঘোষণা হতে পারে বলে বুধবার সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই মুহূর্তে ভারতে কৃষিজীবী মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৬ কোটি ৩০ লক্ষ। যাঁদের উপর নির্ভরশীল গোটা দেশ।কিন্তু খরায় জর্জরিত হয়ে, ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে, ঋণের বোঝা সইতে না পেরে গত কয়েক বছরে কৃষক আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। মিটিং-মিছিল, আন্দোলন সত্ত্বেও এতদিন তা নিয়ে উদাসীন ছিল সরকার। তাতে মানুষের মনে ক্ষোভ ক্রমশ বেড়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ, মোদী সরকারের উপর আস্থা হারিয়েছেন তাঁরা। লোকসভা নির্বাচনে পাঁচ মাস বাকি থাকতে এখন তা নিয়ে টনক নড়েছে সরকারের। জমে থাকা প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকার কৃষি ঋণ মকুব করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে তারা।
কিন্তু তাদের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন কৃষি-অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ অশোক গুলাটি, একসময় যিনি শস্য মূল্য নির্ধারণে মনমোহন সরকারের পরামর্শদাতা ছিলেন। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনেই। জানে, কৃষকদের সমস্যা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে, তাই এখন ঋণ মকুব করার ব্যাপারে এত আগ্রহী মোদী সরকার। অন্যভাবেও তো সাহায্য করতে পারত! তা না করে সহজ উপায়ে ভোটব্যাঙ্ক ভারী করতে চাইছে। যদিও মোদী সরকারই প্রথম নয়, এর আগে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারও একই পথ বেছে নিয়েছিল। ২০০৮ সালে ৭২ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণ মকুবের কথা ঘোষণা করে তারা, যা ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরতে সাহায্য করেছিল তাদের।
ভোটের ফলই চিন্তা বাড়িয়েছে নরেন্দ্র মোদীর।
আরও পড়ুন: ছিন্দওয়াড়ার মসিহা, নাকি গ্বালিয়রের মহারাজা, মুখ্যমন্ত্রী কে? বল সেই রাহুলের কোর্টেই
আরও পড়ুন: এই প্রবণতা থাকলে লোকসভায় ১০০ আসন খোয়াতে পারে বিজেপি?
নোটবন্দির পর দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এমনিতেই উদ্বিগ্ন অর্থনীতিবিদরা। মোদী সরকারের ঋণ মকুবের সিদ্ধান্তে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের। তাঁদের দাবি, চলতি বাজেটে কৃষিঋণ মকুব করলে সরকার তার আয়-ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য তো রাখতে পারবেই না, বরং রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ যতটা হবে বলে ভাবা হয়েছিল, তার পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। আবার কর মকুব না করলেও রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে ৬ লক্ষ ৬৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের একাংশের। তাঁদের মতে, এই পরিমাণ দেশের জি়ডিপি-র ৩.৫ শতাংশ। আবার এতে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলির১৫ হাজার কোটি টাকা উদ্ধারেরও কোনও উপায় থাকবে না।
এতে কৃষকেরা কতটা উপকৃত হবেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁদের দাবি, সরকার ঋণ মকুব করলে তাতে শুধু মাত্র অবস্থাপন্ন কৃষকরাই উপকৃত হবেন, যাঁদের কাছে বিঘা বিঘা জমি রয়েছে। ছোট জমির মালিকরা, যাঁরা কি না দেশের কৃষক জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, তাঁরা তো ব্যাঙ্কে যেতেই পারেন না! স্থানীয় মহাজনদের থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিতে বাধ্য হন। তাঁদের কাছে ওই টাকা পৌঁছবে কী করে?
মঙ্গলবার হিন্দি বলয়ের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য— রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ় হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। দীর্ঘদিন ধরে কৃষকদের মনে জমে থাকা ক্ষোভের জেরেই এমন পরিণতি হয়েছে বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের একাংশের। তা মেনে নিয়েছেন কৃষি আন্দোলনের নেতা ধর্মেন্দ্র মালিক। তিনি বলেন, “কৃষকরা মোদী সরকারের উপর কতটা চটে রয়েছেন, মঙ্গলবার প্রকাশিত ভোটের ফলেই তা স্পষ্ট। রাজ্য সরকারের ঋণ মকুবের ক্ষমতা নেই তা সকলেই জানেন। পারলে মোদী সরকারই কৃষিঋণ মকুব করতে পারেন।”