#AgustaWestland

আমিরশাহী প্রত্যর্পণ করল রাজীব সাক্সেনাকে, ৪ দিনের হেফাজতে নিল ইডি

লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাফাল দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিরোধীরা, সেই সময় রাজীব সাক্সেনার প্রত্যর্পণকে নরেন্দ্র মোদীর সাফল্য হিসাবে তুলে ধরতে শুরু করেছে বিজেপিও।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ১৯:০৫
Share:

পাটিয়ালা হাউস কোর্টে রাজীব সাক্সেনা। ছবি: রয়টার্স।

অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ড কেলেঙ্কারিতে চার দিনের ইডি হেফাজত রাজীব সাক্সেনার। প্রায় এক দশক পুরনো দুর্নীতি কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত দুবাইয়ের এই ব্যবসায়ী। বুধবার সংযুক্ত আরব আমিরশাহী থেকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয় তাঁকে। মামলার অন্যতম অভিযুক্ত দীপক তলোয়ারকেও তাঁরই সঙ্গে দেশে ফেরানো হয়। দিল্লিতে তাঁদের গ্রেফতার করেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট গোয়েন্দারা। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ দিন দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্টে তোলা হয় দু’জনকে। সেখানেই রাজীব সাক্সেনার চার দিনের ইডি হেফাজত মঞ্জুর করেন বিশেষ সিবিআই বিচারপতি অরবিন্দ কুমার। পেশায় কর্পোরেট এভিয়েশন লবিইস্ট দীপক তলোয়ারের ইডি হেফাজত হয়েছে ৭ দিনের।

Advertisement

এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা যদিও আদালতে রাজীব সাক্সেনার আট দিনের হেফাজত চেয়েছিলেন। তবে এর বিরোধিতা করেন রাজীব সাক্সেনার আইনজীবী গীতা লুথরা। তাঁর যুক্তি ছিল, বুধবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ নিজের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী। যার পর দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জোর করে প্রাইভেট বিমানে বসিয়ে দেওয়া হয়। বেআইনি ভাবে ভারতের নিয়ে আসা হয় তাঁকে। পরিবার এবং আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। সঙ্গে নিতে দেওয়া হয়নি রোজকার জরুরি ওষুধপত্রও। দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে রাজীব সাক্সেনার ৪ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারপতি।

তবে রাজীব সাক্সেনা ও দীপক তলোয়ারের বিরুদ্ধে তাঁদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ হাতে রয়েছে বলে দাবি ইডি-র। দু’জনে মিলে ৯০ কোটি টাকা হাতিয়েছে বলে অভিযোগ। গত বছর ডিসেম্বরে অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ড দুর্নীতিকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত, ব্রিটিশ নাগরিক ক্রিশ্চিয়ান মিশেলকে ভারতের হাতে প্রত্যর্পণ করা হয়। তাঁকে জেরা করেই রাজীব সাক্সেনার নাম উঠে আসে। জানা যায়, ঘুষের টাকা পাচার করতে টিউনিশিয়া, মরিশাস এবং দুবাইয়ে একাধিক সংস্থা গজিয়ে উঠেছিল রাতারাতি। তাতে শামিল ছিল রাজীব সাক্সেনার ইন্টারস্টেলার টেকনোলজিস সংস্থা (মরিশাস), ইউএইচওয়াই সাক্সেনা (দুবাই) এবং ম্যাট্রিক্স হোল্ডিং (দুবাই)। টিউনিশিয়ার গর্ডিয়ান সার্ল এবং আইডিএস টেকনলজিসের হাত ঘুরে টাকা পৌঁছেছিল ওই তিন সংস্থায়। সেখান থেকে রাজীব সাক্সেনার সুইস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। যে আইডিএস টেকনলজিস থেকে টাকা গিয়েছিল, তার মালিক আবার গৌতম খৈতান। দুর্নীতিকাণ্ডে নাম জড়িয়েছে তাঁরও। এই মুহূর্তে ইডির হেফাজতে রয়েছেন গৌতম খৈতান। ক্রিশ্চিয়ান মিশেল রয়েছেন বিচারবিভাগীয় হেফাজতে। সবিস্তার তথ্য হাতে পেতে গোয়েন্দাদের তরফে ইতালি এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

বিজেপির টুইট।

আরও পড়ুন: নিশানায় বেকারত্ব রিপোর্ট! মোদীকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা রাহুলের, জবাবে ‘মুসোলিনি’ কটাক্ষ বিজেপির​

আরও পড়ুন: পাখির চোখ গ্রাম ভারতে, ভোটের আগে কাল জনমোহিনী হবেন মোদী?​

অন্য দিকে, লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাফাল দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিরোধীরা, সেই সময় রাজীব সাক্সেনার প্রত্যর্পণকে নরেন্দ্র মোদীর সাফল্য হিসাবে তুলে ধরতে শুরু করেছে বিজেপিও। প্রধানমন্ত্রীকে ব্যাটমানের উত্তরসূরি বলে উল্লেখ করেছে তারা। বৃহস্পতিবার সকালে দলের টুইটার হ্যান্ডলে বলা হয়, ‘চাইলে সব কিছুই করে দেখানো সম্ভব। শেষবার এত মসৃণ প্রত্যর্পণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন ব্যাটমান। হংকং থেকে লউকে জিম গর্ডনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এ বার করে দেখালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।’

রাফাল দুর্নীতি কাণ্ডে ‘চৌকিদার’ নরেন্দ্র মোদীকে সরাসরি চোর বলে উল্লেখ করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। রাজীব সাক্সেনা ও দীপক তলোয়ারের প্রত্যর্পণ নিয়ে এ দিন তাঁকে আক্রমণ করেন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। নিজের টুইটার হ্যান্ডলে রাহুলকে কটাক্ষ করে লেখেন, ‘আপনাদের আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত দালালদের নাগাল মিলেছে। চৌকিদারকে ধন্যবাদ জানাবেন না? আপনাদের পোষা লোকগুলো এতদিন গা ঢাকা দিয়ে ছিল। মোদী সরকার তাদের দেশে ফিরিয়ে এনেছে। এতে খুশি হননি আপনি? যাই হোক, হাও ইজ দ্য জোশ রাহুল?’

বাবুল সুপ্রিয়র টুইট।

প্রায় এক দশক আগে, মনমোহন সিংহ নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-২ আমলে অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ড দুর্নীতি ঘটে বলে অভিযোগ। দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং ভিভিআইপিদের জন্য ১২টি বিলাসহুল চপার কিনতে ২০১০ সালে ব্রিটিশ সংস্থা অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি হয় ভারতের। ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ওই চুক্তিতে বিপুল অঙ্কের ঘুষের লেনদেন হয়েছিল বলে অভিযোগ। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ২০১৩ সালে। তাতে নাম জড়ায় প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এস পি ত্যাগীরও। তদন্ত শুরু হলে ক্রিশ্চিয়ান মিশেল-সহ তিন দালালের নাম উঠে আসে। তা নিয়ে বিতর্কের জেরে ২০১৪ সালে ওই চুক্তি বাতিল করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement