ফাইল ছবি
মধ্যরাতে নয়ডার রাস্তায় দৌড়চ্ছেন এক তরুণ। চিত্র পরিচালক বিনোদ কাপরি গাড়িতে তাঁকে পৌঁছে দিতে চাইলে প্রদীপ মেহরা নামে ওই তরুণ সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যন করে জানিয়েছিলেন, কাজ সেরে ফেরার পথে রোজ ১০ কিলোমিটার এ ভাবে দৌড়ে ফেরেন। বাড়ি ফেরার উদ্দেশে দৌড় শুরু করলেও আসল গন্তব্য সেনা। অনেকের অভিযোগ, চার বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে টাল খেয়েছে এমন অনেক প্রদীপের স্বপ্ন। তার বিরুদ্ধে গোটা দেশ জুড়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন তরুণ-যুবকেরা। যদিও কেন্দ্র অটল থেকেছে অগ্নিপথে। এ বার খাপ পঞ্চায়েত নেতৃত্ব এবং কিছু কৃষক সংগঠনও অগ্নিপথের বিরোধিতায় শামিল হল।
খাপ পঞ্চায়েতের তরফে জানানো হয়েছে, হরিয়ানায় যাঁরা অগ্নিপথ প্রকল্পে আবেদন করবেন, তাঁদের সামাজিক ভাবে ‘একঘরে’ করে দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি হরিয়ানার শাসক জোট বিজেপি এবং জেজেপি-র নেতাদেরও ‘বয়কটের’ হুমকি দিয়েছেন খাপ পঞ্চায়েত নেতৃত্ব। শুধু নেতা নন, অগ্নিপথ সমর্থনকারী সমস্ত কর্পোরেট সংস্থার পণ্য বয়কটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
ইতিমধ্যে কংগ্রেসও সেনায় নিয়োগের এই প্রকল্পের বিরোধিতায় যন্তর মন্তরে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে নেমেছে। রাহুল গান্ধী আজ টুইট করে জানিয়েছেন, গত ২ বছরে সেনায় এক জনও নিয়োগ পাননি। পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছেন রাহুল। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-১৯ সালে ৫৩ হাজার ৪৩১ এবং২০১৯-২০ সালে ৮০ হাজার ৫৭২ জন সেনায় নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু গত দু’বছরে তা ঠেকেছে শূন্যে।
রাহুল লিখেছেন, ‘‘চার বছর পরে অগ্নিবীর এনে বিজেপি লক্ষ লক্ষ যুবকের দেশসেবার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। এই চোখের জলে এমন ঢেউ উঠবে যে, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার অহংকেও ভেঙে দেবে।’’ প্রসঙ্গত অগ্নিপথ প্রকল্পে জানানো হয়েছে, নিয়োগের চার বছর পরে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অগ্নিবীরকে সেনায় রাখা হবে। বাকিদের অবসর নিতে হবে। তাঁদের মিলবে না পেনশনের সুবিধাটুকুও। গত কাল হরিয়ানার রোহতকে সাম্পলা টাউনে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন হরিয়ানা, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাবের বিভিন্ন খাপ এবং সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন খনখড় খাপের ওম প্রকাশ ধনখড়। তিনি ঘোষণা করেন, ‘‘যাঁরা ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য আবেদন জানাবেন, তাঁদের সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন করা হবে। এই প্রকল্প (অগ্নিপথ) আমরা বয়কট করছি।’’ এর পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, অগ্নিবীরের নামে যুব সম্প্রদায়কে স্রেফ শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ করা হচ্ছে। তবে যাঁরা ওই প্রকল্পে অংশ নেবেন, তাঁদের খাতায় কলমে ‘বয়কট’ নয়, কিন্তু আবেদনকারীদের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হবে বলেও জানান খাপ নেতারা।
এর পাশাপাশি কর্পোরেট সংস্থাগুলির প্রতি ওই বৈঠকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, যারা অগ্নিপথকে সমর্থন করবে, তাদের পণ্য ব্যবহার করা হবে না। ধনখড় জানিয়েছেন, অগ্নিপথ বাতিলের পাশাপাশি তাঁদের দাবি, বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করতে হবে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।