দিল্লিতে জারি কৃষকদের বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই
কেন্দ্রের তরফ থেকে নতুন করে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণের চব্বিশ ঘণ্টা পরেও সাড়া মিলল না। দিল্লি সীমানায় অবরোধকারী কৃষক সংগঠনগুলি জানিয়ে দিল, তারা মোদী সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তৈরি। কিন্তু শর্ত হল, তার আগে সরকারকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জানাতে হবে।
গত কাল রাতে কৃষক সংগঠনগুলিকে ফের আলোচনার টেবিলে বসার আমন্ত্রণ জানান কৃষি মন্ত্রকের যুগ্মসচিব বিবেক আগরওয়াল। জানতে চেয়েছিলেন, কবে কৃষক নেতারা ফের বৈঠকে বসতে পারেন। তিন কৃষি আইনে কিছু সংশোধনে কেন্দ্র রাজি। তার পরেও চাষিদের মনে আর কী কী আশঙ্কা দানা বেঁধে রয়েছে, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছিল। আজ কৃষক নেতারা জানান, এই চিঠির প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবেন তাঁরা। চাষিদের অভিযোগ, যুগ্মসচিবের চিঠিতে নতুন কিছু নেই। কৃষকরা আগেই জানিয়েছেন, তাঁদের একমাত্র দাবি তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার। এমনকি আইন সংশোধনের প্রস্তাবও আগে খারিজ করেছেন তাঁরা। তাই এই অবস্থায় বৈঠকে নতুন কী কথা হতে পারে, সে বিষয়ে তাঁরা আতান্তরে।
কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, পঞ্জাবের মান্ডির এজেন্টদের আয়কর নোটিস পাঠানোর পরে এ বার কৃষক সংগঠনগুলিকেও সরকার হেনস্থা করার চেষ্টা করছে। পঞ্জাবের ভারতীয় কিসান ইউনিয়নকে (একতা উগ্রহণ) কেন্দ্রীয় সংস্থা নোটিস পাঠিয়ে জানতে চেয়েছে, কিসের ভিত্তিতে বিদেশ থেকে চাঁদা নিচ্ছে তারা। সোমবার কৃষক নেতারা দিল্লি-হরিয়ানার সিংঘু সীমানায় পালা করে অনশনে বসেছেন। তারই মধ্যে সন্ধ্যাবেলায় সিংঘুতে নিরঞ্জন সিংহ নামে ৬৫ বছরের এক চাষি বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কেন্দ্রের অবস্থানের বিরুদ্ধেই তাঁর প্রতিবাদ বলে কৃষক নেতাদের অভিযোগ। তর্ণতারণের বাসিন্দা ৬৫ বছরের নিরঞ্জনকে রোহতকের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত সপ্তাহে হরিয়ানার করনালের সন্ত রাম সিংহ আত্মঘাতী হয়েছিলেন এই সিংঘুতেই। রোহতকের হাসপাতাল থেকেই নিরঞ্জন বলেন, ‘‘সাধারণত কেউ আত্মহত্যা করতে গেলে আত্মহত্যায় যে প্ররোচিত করে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আমার ক্ষেত্রে প্ররোচিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। তাঁদের গ্রেফতার করা হোক।’’ আজ পঞ্জাবের ফিরোজ়পুরের আরও এক কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।
কৃষকদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে আজ মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে সিপিএমের কৃষক সভার হাজার তিনেক চাষি গাড়ির মিছিল করে দিল্লির দিকে রওনা হয়েছেন। নাসিকেরই চান্দবডে তাঁদের সঙ্গে আরও সাত হাজার কৃষক যোগ দেবেন। পঞ্জাবের কিসান সমিতির নেতা কাশ্মীর সিংহ বলেন, “সরকার আলোচনার দিন ক্ষণ জানতে চাইছে। আমরা তো দিল্লির সীমানায় বসেই রয়েছি। যাতে সরকার আমাদের কথা শোনে। সরকারের মন্ত্রী-আমলাদেরই সময় নেই। তাঁরা দিনক্ষণ ঠিক করুন। না হলে আমাদের তাঁবুতে এসে কথা বলুন। দেখে যান, কী ভাবে রয়েছি।” কৃষক সমন্বয় কমিটির তরফে হান্নান মোল্লা কৃষি মন্ত্রকের যুগ্মসচিবকে চিঠির জবাবে জানিয়েছেন, সরকার প্রথম দিন থেকেই কৃষকদের দাবি জানে। তাতে কান না-দিয়ে ছোট ছোট প্রশ্নে আলোচনা করতে চাইছে। এতে লাভ হবে না। বরং এ থেকে কৃষকদের দাবি নিয়ে সরকারের বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা স্পষ্ট বলে তাঁর অভিযোগ।