রাহুল গান্ধী এবং অখিলেশ যাদব। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব, বিহারের পরে এ বার উত্তরপ্রদেশেও আসন সমঝোতা নিয়ে জটিলতা তৈরি হল। পশ্চিমবঙ্গের মতো উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রেও কংগ্রেস চাইছে, রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা উত্তরপ্রদেশে ঢোকার আগে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির মধ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করে ফেলা হোক। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা এও মানছেন, গত দু’তিন দিনে জোট নিয়ে জট পাকিয়েছে।
প্রথমে সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, তিনি কংগ্রেসকে প্রাথমিক ভাবে উত্তরপ্রদেশে ৮০টির মধ্যে ১১টি আসন ছাড়ছেন। কংগ্রেস আরও আসন দাবি করছিল। তা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সমাজবাদী পার্টি আচমকা ১৬টি আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। এর মধ্যে লখনউ, অযোধ্যা, ফারুকাবাদ, খেরি-র মতো আসন রয়েছে। যেখানে কংগ্রেস লড়তে চাইছে। আজ কংগ্রেসে উত্তরপ্রদেশের ভারপ্রাপ্ত নেতা অবিনাশ পাণ্ডে এসপি নেতৃত্বকে নিশানা করে বলেছেন, সমাজবাদী পার্টি জোটের ধর্ম পালন করছে না। তারা একতরফা ঘোষণা করে দিচ্ছে। কংগ্রেসকে জানানোই হচ্ছে না। এটা বিপজ্জনক।
এ দিকে কংগ্রেসকে চাপে রাখতে অখিলেশ যাদব ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় অংশ নেবেন কি না, তা নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করছেন না। আজ অখিলেশ উত্তরপ্রদেশে রাহুলের যাত্রা সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘সব দলই নিজেদের কর্মসূচি করছে। লোকসভা ভোটের আগে মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছে।’’ সেই সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘জোট হবে। আসন বণ্টনও ভাল ভাবেই হবে।’’
এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে দু’টির বেশি আসন ছাড়তে না চাওয়ায় আসন সমঝোতা ভেস্তে গিয়েছে। আজ কংগ্রেসের অবিনাশ পাণ্ডে বলেন, ‘‘কংগ্রেস বড় শক্তি ছিল, আবার শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এখন যদি অন্য দল বলে তারা কংগ্রেসকে আসন ছাড়ছে বা দিচ্ছে, তা হলে হাসি পায়। কিছু বলার থাকে না।’’
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশে তাঁরা ২০টি আসনে লড়তে চাইলেও সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে শেষ পর্যন্ত ১৩টি আসনে সমঝোতা হতে চলেছে। দিল্লিতে আম আদমি পার্টির সঙ্গে বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস চারটি, আম আদমি পার্টি তিনটি আসনে লড়বে। বিহারে নীতীশ কুমারের জেডিইউ বেরিয়ে যাওয়ার পরে নতুন পরিস্থিতিতে ফের আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হবে। মহারাষ্ট্রেও ৪৮টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিরোধী জোটে ৩৮টি আসনে কোন দল ক’টি আসনে লড়বে, তা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। প্রকাশ অম্বেডকরের বহুজন বিকাশ আঘাড়ী কংগ্রেস, পওয়ার-এনসিপি, ঠাকরে-শিবসেনার জোট তথা জাতীয় স্তরে ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিয়েছে। ইন্ডিয়া জোটে আরও কিছু ছোট দল যোগ দিতে পারে বলে খবর।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার অবশ্য আজও আসন সমঝোতা না হওয়া নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের দুষেছেন। তাঁর বক্তব্য, এই কারণেই তিনি জোট থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তিনি জোটের নাম ইন্ডিয়া রাখতেও বারণ করেছিলেন বলে তাঁর দাবি। কংগ্রেস সূত্রের পাল্টা যুক্তি, নীতীশ বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবেন বলে চার-পাঁচ সপ্তাহ আগেই ঠিক করে ফেলেছিলেন। তার পরেও ১৩ জানুয়ারি ইন্ডিয়া জোটের ভার্চুয়াল বৈঠকে আহ্বায়ক হিসেবে নীতীশ কুমারের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে ঠিক হওয়ায় নীতীশ আচমকা রাহুল গান্ধীর নাম ইন্ডিয়া জোটের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রস্তাব করেন। তখনই বোঝা গিয়েছিল, নীতীশ আসলে জোটে ভাঙন ধরাতে চাইছেন। তা বুঝেই রাহুল বলেছিলেন, কংগ্রেসের কেউ চেয়ারম্যান হলে সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেই যোগ্য। নীতীশকে আহ্বায়ক করা নিয়ে ডিএমকে, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনারও আপত্তি ছিল।