সীতারাম ইয়েচুরি ও মানিক সরকার। ছবি: পিটিআই
দলের একাংশের ‘বিভ্রান্তি’ কাটাতে রাজনৈতিক লাইনের স্পষ্ট ব্যাখ্যা করে দিলেন সাধারণ সম্পাদক। আবেদন জানালেন, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়়াইয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার। আর বাংলার সিপিএমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিচ্যুতির অভিযোগ এনে পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনে ভর্ৎসিত হলেন দুই প্রতিনিধি। যে ঘটনা সচরাচর পার্টি কংগ্রেসে ঘটে না!
দ্বিতীয় বার সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে সীতারাম ইয়েচুরি আজ বারবারই বার্তা দিয়েছেন, দলকে এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগোতে হবে। সামনে কঠিন লড়়াই। রাজনৈতিক লাইন ঘিরে টানা বিতর্কের জেরে সিপিএমের শীর্ষ স্তরেও পারস্পরিক সমন্বয়ের অভাব দেখা দিয়েছে বলে এ বার পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক রিপোর্টে সমালোচনা রয়েছে। হায়দরাবাদে পাশ হওয়া রাজনৈতিক প্রস্তাবের ব্যাখ্যায় কাল বৃন্দা কারাট যা করেছেন এবং মহম্মদ সেলিমকে দিয়ে যে ভাবে পাল্টা বলাতে হয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই দলে ঐক্যের বাতাবরণ নিয়ে আরও সক্রিয় হতে হয়েছে ইয়েচুরিকে। পার্টি কংগ্রেসের সমাপ্তি অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য, ‘‘হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয় না। কিন্তু সেই আঙুল মুষ্টিবদ্ধ হলে শক্তি আসে। আমাদেরও ঐক্যবদ্ধ দল নিয়ে সঙ্ঘ-বিজেপির ফ্যাসিবাদী কর্মসূচির মোকাবিলা করতে হবে।’’
একই সঙ্গে দলের লাইনও পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন ইয়েচুরি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিকল্প নীতির উপরে দাঁড়়িয়ে লড়়াই হবে। আরএসএস-বিজেপিকে পরাস্ত করা প্রথম লক্ষ্য। কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট হবে না। সংসদের ভিতরে-বাইরে সাম্প্রদায়িকতাকে রুখতে সমঝোতা হবে।’’ আর নির্বাচনী কৌশল? ইয়েচুরির সাফ কথা, ‘‘যে প্রান্তে নির্বাচন আসবে, সেই সময়ে সেখানকার পরিস্থিতি বিচার করে আমাদের রাজনৈতিক লাইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
তার আগেই অবশ্য সেলিমের শাস্তি দাবি করে বসেছিলেন দলের কেন্দ্রীয় মুখপত্র ইউনিটের কর্মী জি মমতা! ঘটনাচক্রে, তিনি সিটুর সর্বভারতীয় সভানেত্রী কে হেমলতার পুত্রবধূ। হেমলতার ছেলে অরুণ কুমার আবার আজই কেন্দ্রীয় কমিটিতে এসেছেন! মমতা কাল রাতেই পার্টি কংগ্রেসে দাবি করেন, বৃন্দার বক্তব্যের পরে সেলিম দলের লাইন নিয়ে বাইরে ভিন্ন কথা বলেছেন। তার জন্য জগমতী সাঙ্গওয়ানের মতো তাঁরও সদস্যপদ কেড়়ে নেওয়া উচিত! সিটুর কেন্দ্রীয় ইউনিটের সদস্য অমিতাভ গুহ আবার অভিযোগ করেন, বাংলার সিপিএম শ্রমিক-বিরোধী পথ নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী কর্মসূচিকে সাহায্য করছে!
সাংগঠনিক আলোচনার জবাবি ভাষণে পলিটব্যুরোর কারাট-ঘনিষ্ঠ নেতা এস আর পিল্লাই আজ দু’জনকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন অপ্রাসঙ্গিক অভিযোগ আনার জন্য! বিধানসভায় কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে বাংলার সিপিএম দলের লাইন ভেঙেছিল, তাই তাদের শাস্তি চাই— এই দাবিও উড়়িয়ে দিয়েছেন এসআরপি। বলেছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির অবস্থানের সঙ্গে বাংলার কাজ ‘সঙ্গতিপূর্ণ’ নয়, এই যা বলা হয়েছিল, সেটাই যথেষ্ট।
এসআরপি-র এমন ভূমিকায় বিস্মিত বাংলার এক নেতার কথায়, ‘‘বোঝা যাচ্ছে, ইয়েচুরি দলের রাশ হাতে নিচ্ছেন। নইলে এসআরপি-কে দিয়ে এমন বার্তা দেওয়া হত না!’’