জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তারুরকে চিঠি মোদীর।—ফাইল চিত্র।
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে ভাঙিয়ে এনেছেন ইতিমধ্যেই। এ বার কি তাঁদের লক্ষ্য শশী তারুর? মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা দখল নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে যখন টানাপড়েন অব্যাহত, ঠিক সেইসময়েই তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের জন্মদিনে তাঁকে চিঠি লিখে জল্পনা উস্কে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সোমবার ৬৪-তে পা রেখেছেন শশী। সেই উপলক্ষে মালয়ালম ভাষায় চিঠি লিখে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান নরেন্দ্র মোদী। তারুর নিজেই সেই চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন।ওই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘জন্মদিনে মন থেকে শুভেচ্ছা জানাই আপনাকে। কামনা করি, আপনার আগামী দিনগুলি সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক। জীবনে শান্তি, সৌভাগ্য আসুক। আপনার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও পাণ্ডিত্য দেশ গঠনের পক্ষে সহায়ক হোক।’’
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এই চিঠি পেয়ে তিনি আপ্লুত বলে টুইটারে জানিয়েছেন তারুর। আর তাতেই রাজনৈতিক মহলে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, মাস দুয়েক আগে পর্যন্ত যেখানে মৃত স্ত্রী সুনন্দা পুষ্করকে টেনে তারুরকে তীব্র আক্রমণ করেছিল বিজেপি, সেখানে দলের শীর্ষ নেতা চিঠি লিখে জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, কারণটা কী?
তারুরের টুইট।
আরও পড়ুন: রাজমাতা থামিয়ে দিয়েছিলেন ইন্দিরা ঝড়, দেউটি নিভিয়ে দিলেন মহারাজা
এর পিছনে বিজেপির রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। তাঁদের মতে, জ্যোতিরাদিত্যের মতো হেভিওয়েট নেতাকে ইতিমধ্যেই কংগ্রেস থেকে ভাঙিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে তারুরের মতো জনপ্রিয়, বাগ্মী নেতাকে পাশে পেলে, দলের নবীণ ব্রিগেডকে চাঙ্গা করতে আরও সুবিধা হবে মনে করছেন তাঁরা।
আবার কংগ্রেসে যাঁরা কোণঠাসা, বেছে বেছে ঠিক তাঁদেরই হৃদয় জয় করতে বিজেপি আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অন্য একটা অংশের। তাঁদের যুক্তি, গাঁধী পরিবারের নেতৃত্বে আজীবন ক্ষমতার ভরকেন্দ্র ১০ জনপথেই বেঁধে রাখতে চেয়েছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। সেখানে একটু হলেও ব্যতিক্রমী ছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। কমলনাথ, দিগ্বিজয় সিংহের মতো প্রবীণ নেতাদের জন্য কল্কে না পেয়ে অসন্তোষ জমা হয়েছিল তাঁর মনে। প্রবীণদের হাতে রাশ থাকলে দলে তাঁর ভবিষ্যৎ যে খুব একটা উজ্জ্বল হবে না, তাঁকে তা বোঝাতে সফল হয়েছে বিজেপি। শেষমেশ কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়েও এসেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ? সিন্ধিয়া দিয়ে শুরু, এর পর কি আরও অনেকে
অন্য দিকে, লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের দায় নিয়ে রাহুল গাঁধী যখন সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ান, বাকিরা তখন তাঁর মানভঞ্জনে ব্যস্ত ছিলেন। সেই সময়ে প্রকাশ্যেই রাহুলের বিকল্প খোঁজার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারুর। তাঁর বক্তব্য ছিল, রাহুল যদি ফিরতে না চান, তাহলে অন্য কথা ভাবতে হবে। কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই সনিয়া গাঁধীর হাতেই কংগ্রেসের রাশ ওঠে। এর পর লোকসভায় দলনেতা বাছার সময় যখন আসে, তখনও তারুরকে টপকে তুলে আনা হয় বঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীকে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, কংগ্রেসের মধ্যে থেকেও যাঁরা পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন, বেছে বেছে তাঁদেরকেই নিশানা করছে বিজেপি। মোদীর চিঠিও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।