প্রতীকী ছবি।
অ্যামালগামেটেড প্ল্যানটেসন্স বা এপিপিএল চা কোম্পানির বাণিজ্যিক দফতর অসম থেকে কলকাতায় সরানোর চেষ্টা হচ্ছে— এই ইঙ্গিত পেয়ে অসমে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল। অবশেষে হস্তক্ষেপ করল কেন্দ্রীয় সরকার। গত রাতে টাটা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চালান দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সিদ্ধান্ত হয়েছে, অ্যামালগামেটেড প্ল্যানটেসন্স বা এপিপিএল চা কোম্পানির বাণিজ্যিক দফতর অসম থেকে কলকাতায় সরানো হবে না।
এপিপিএলের দফতর সরানোর খবর পেয়ে চা জনজাতির প্রতিনিধি, কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রতিমন্ত্রী রামেশ্বর তেলি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য সংস্থার সিইও এবং রতন টাটাকে অনুরোধ জানান। এর পর গত কাল সন্ধ্যায় তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে দেখা করেন। পীযূষ কথা বলেন টাটা কোম্পানির সঙ্গে। তেলি জানান, আলোচনার পরে টাটা তাদের দফতর সরানোর সিদ্ধান্ত বদল করেছে। সেই সঙ্গে তারা রাজ্যে নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবে বলেও জানিয়েছে।
আলফা স্বাধীন ৮ এপ্রিল হুমকি দিয়েছিল, এপিপিএল (পূর্বতন টাটা টি) অবিলম্বে তাদের সদর দফতর ও অন্যান্য দফতর কলকাতা থেকে অসমে স্থানান্তরিত না-করলে অসমে তাদের সব বাগান ও ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু দফতর অসমে আনা দূরের কথা, টাটা তাদের বাণিজ্যিক দফতরটিও গুয়াহাটির খ্রিস্টান বস্তি থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করতে উদ্যোগী হচ্ছে বলে খবর ছড়িয়েছিল। এতেই রাজ্যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল।
এপিপিএল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদক। বর্তমানে তাদের সদর দফতর রয়েছে কলকাতার বিশপ লেফ্রয় রোডে। দফতর সূত্রে গত কাল জানা গিয়েছিল, টাটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৩০ এপ্রিলের মধ্যেই তাদের প্রধান বাণিজ্য দফতর ও অন্যান্য দফতর অসম থেকে কলকাতায় সরানো হবে। সংস্থার তরফে কর্মীদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানানোও হয়েছে। এপিপিএলের ২৫টি চা বাগানের মধ্যে ২১টিই অসমে। অসমে তারা বছরে প্রায় ৪৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে।
অসমের চা জনজাতির প্রতিনিধি তথা কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণমন্ত্রী রামেশ্বর তেলি দফতর সরানোর উদ্যোগ নিয়ে বলেন, এই সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। এখানে তাদের বাগান ও দফতরের কাজকর্ম বিনা সমস্যায় চলছিল। তাদের উপরে কোনও ধরনের চাপ আসেনি। সরকার তাদের সব ধরনের সাহায্য করেছে। সব বাগানকে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১ কোটি টাকা করেও দিয়েছে। তিনি অ্যামালগামেটেডের সিইও ও রতন টাটাকে অনুরোধ জানান, সংস্থা যেন এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে। যদি কোনও সমস্যা থেকে থাকে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকার তার সমাধানে উদ্যোগী হবে।
অসম চা মজদুর সঙ্ঘের দাবি করে, রাজ্য সরকার অবিলম্বে টাটা টির দফতর অসমে রাখার ব্যবস্থা করুক। আটসা সভাপতি ধীরাজ গোয়ালা ঘোষণা করেন, রাজ্যের শ্রমিককে শোষণ করে বাণিজ্যিক দফতর কলকাতায় নিয়ে যাওয়া মেনে নেওয়া হবে না। সরকার ব্যবস্থা না নিলে চা শ্রমিকরা আন্দোলনে নামবেন। কোম্পানির দফতর কলকাতায় চলে গেলে অসমিয়াদের নিয়োগের আর সম্ভাবনাও থাকবে না।
নেসোর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য মত প্রকাশ করেন, এপিপিএলের সিদ্ধান্ত অসম-বিরোধী। যে রাজ্যে তাদের প্রধান উৎপাদন, সেখান থেকে দফতর সরিয়ে নেওয়া অযৌক্তিক। এর ফলে রাজ্যের চা শিল্পে বিরাট প্রভাব পড়বে।
রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ-হুমকির মুখে সংস্থার তরফে গত কাল বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, তারা অসমের প্রতি দায়বদ্ধ। রাজ্যে মরশুমি শ্রমিক-সহ তাদের মোট কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। অফিস-কর্মীদের অধিকাংশই অসমিয়া। তাঁদের মধ্যে ১২ হাজার কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার। তারা গুয়াহাটির মুখ্য অপারেটিং কার্যালয়ের রক্ষণাবেক্ষণ অব্যাহত রাখবে। এপিপিএল রাজ্যের প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আলফার অভিযোগ ও হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে তারা আরও জানিয়েছে, বিভিন্ন অপপ্রচার ও হুমকির ঘটনায় তারা দুঃখিত। কোম্পানি ও কর্মীদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার জন্য তারা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করছে। এতে তৎপর হয় কেন্দ্রীয় সরকার। দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তেলিও গয়াল মাঠে নামেন। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদলায় এপিপিএল।