একসঙ্গে: ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদে হেমন্ত সোরেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে (বাঁ দিক থেকে) তরুণ গগৈ, সীতারাম ইয়েচুরি, কানিমোঝি, তেজস্বী যাদব, ডি রাজা, এম কে স্ট্যালিন, শরদ যাদব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক গহলৌত, রাহুল গাঁধী, হেমন্ত সোরেন, ভূপেশ বঘেল, শিবু সোরেন। রবিবার রাঁচীর মোহরাবাদি ময়দানে। নিজস্ব চিত্র
নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে সব বিরোধী দলই তাদের সাধ্যমতো আন্দোলন চালিয়ে যাবে, এই অঙ্গীকার উঠে এল ঝাড়খণ্ডের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের শপথ অনুষ্ঠানের ফাঁকে। রাঁচীতে ওই শপথ-মঞ্চে রাহুল গাঁধীদের পাশাপাশি অন্যতম মুখ্য চরিত্র ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মোদী সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সব দলকে এক সুরে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে যে চিঠি দিয়েছিলেন মমতা, শনিবার রাতে তার জবাব দিয়ে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গেই একমত হয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। রাঁচীতে রবিবার সনিয়া নিজে ছিলেন না। কিন্তু চিঠি লিখে মমতাকে তাঁর সমর্থন জানানো এবং এ দিন অন্যান্য বিরোধী নেতৃত্বেরও তাতে সহমত হওয়াকে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আজ দুপুরে রাঁচীর মোহরাবাদি ময়দানে শপথ অনুষ্ঠানে মঞ্চে একত্র হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গাঁধী, এম কে স্ট্যালিন, শরদ যাদব, তেজস্বী যাদব, শিবু সোরেন, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজারা। ছিলেন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত, ভূপেশ বঘেলরাও। শপথে আসতে পারেননি শরদ পওয়ার, অরবিন্দ কেজরীবাল, উদ্ধব ঠাকরেরা। কিন্তু তাঁরা সকলেই শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। ছিলেন না শুধু অখিলেশ যাদব আর মায়াবতী। হেমন্তের জয়ের পরে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করলেও আজ রাঁচীতে আসেননি অখিলেশ। লক্ষণীয় ভাবে চুপ মায়াও।
আরও পড়ুন: প্রতিবাদ জারি থাকবে, মমতাকে বার্তা সনিয়ারও
দেড় বছর আগে বেঙ্গালুরুতে কিন্তু এইচ ডি কুমারস্বামীর শপথ-মঞ্চে সনিয়া গাঁধীর হাত জড়িয়ে ধরেছিলেন মায়া। সে দিন সনিয়ার পাশে মঞ্চে ছিলেন হেমন্ত সোরেনও। ২০১৮-র মে মাসের সেই অনুষ্ঠানে বিরোধী ঐক্যের ছবি সামনে এলেও লোকসভা ভোটে রাজ্যে রাজ্যে আসন সমঝোতা করতে সফল হননি বিরোধীরা। তবে সম্প্রতি একাধিক বিধানসভা ভোটের ফলাফল দেখে তাঁরা যে ফের একজোট হতে চাইছেন, এ দিনের অনুষ্ঠান থেকে তা স্পষ্ট। অখিলেশ-মায়া না থাকলেও ফের একবার বিরোধী ঐক্যের প্রদর্শন-মঞ্চই হয়ে উঠল হেমন্তর শপথ অনুষ্ঠান।
নৈকট্য: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাহুল গাঁধী। রবিবার রাঁচীতে। নিজস্ব চিত্র
আনুষ্ঠানিক বৈঠকের অবকাশ না থাকলেও নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন যে সব বিরোধী নেতা, তাঁদের অনেককেই আজ একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। তাঁদের আলাপচারিতায় ঠিক হয়েছে, সব দলই প্রতিবাদ চালিয়ে যাবে। জাতীয় স্তরে কখনও অভিন্ন মঞ্চ থেকে প্রতিবাদের প্রয়োজন হলে বিরোধী নেতারা সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন। মমতার সঙ্গেও এ নিয়ে কথা হয়েছে রাহুল, স্ট্যালিন, গহলৌত, রাজাদের।
আরও পড়ুন: ‘মুসলিম বিদ্রোহ’ নয়, বৈঠক ওয়াইসির শহরে
এ দিন শপথ অনুষ্ঠান শুরুর কিছু আগেই মঞ্চে উপস্থিত হন মমতা। হেমন্ত তাঁকে স্বাগত জানিয়ে মঞ্চে নিয়ে আসেন। বাম ও কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করতে দেখা যায় তৃণমূল নেত্রীকে। মমতার সঙ্গে কথা বলেন সিপিআই নেতা রাজা। মমতার পাশে বসেন স্ট্যালিন, বঘেল। তেজস্বী যাদব, শরদ যাদবও তাঁর কাছে এসে কথা বলে যান। একটু পরেই আসেন রাহুল। মমতার হাত ধরে কথা বলতে দেখা যায় তাঁকেও।
বিরোধী শক্তির এই ঐক্য-বাতাবরণকে মজবুত করার কথা সনিয়াও লিখেছেন মমতাকে শনিবার পাঠানো জবাবি চিঠিতে। নাগরিকত্ব আইন এনে এবং এনআরসি চালু করতে চেয়ে মোদী সরকার ‘দুরভিসন্ধিমূলক’ পথে এগোচ্ছে বলে মমতার যুক্তিতে সহমত হয়েছেন তিনি। সনিয়া লিখেছেন, ‘আমাদের প্রতিবাদ হবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ। সংবিধানের উপরে এই দুঃসাহসী ও নির্লজ্জ আক্রমণকে বিনা প্রতিরোধে মেনে নিতে পারি না’। মমতাকে তাঁর বার্তা, তৃণমূল নেত্রী ও অন্য সমমনোভাবাপন্ন নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই তাঁরা এগোতে চান।
ঝাড়খণ্ডে বিজেপির বিরুদ্ধে মসৃণ জয় ছিনিয়ে এনেই আজ দ্বিতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হলেন ৪৪ বছর বয়সি হেমন্ত। ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত অর্জুন মুন্ডা সরকারে উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০১৩-র জানুয়ারিতে বিজেপির উপর থেকে সমর্থন তুলে নেয় জেএমএম। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়। সে বছরের জুলাইয়েই মুখ্যমন্ত্রী হন হেমন্ত। তখন তাঁর বয়স ৩৮। ঝাড়খণ্ডের কনিষ্ঠতম মুখ্যমন্ত্রী তিনিই।