গণধর্ষণ মামলায় ১১ জনের মুক্তির পর শুরু হয়েছে বিতর্ক ফাইল চিত্র।
গুজরাতের বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা পাওয়া ১১ জন দোষীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে গোধরা জেল থেকে। ওই ১১ জনকে মিষ্টিমুখ করিয়ে বাড়িতে স্বাগত জানাল তাঁদের পরিবার। কেউ করলেন কোলাকুলি, কেউ পা ছুঁয়ে প্রণাম। এই ১১ জনের মুক্তির ঘটনায় হতবাক বিলকিসের স্বামী ইয়াকুব রুসুল। এ নিয়ে আর খুব বেশি কথাই বলতে চান না তিনি। বিলকিসও নিশ্চুপ।
২০০২ সালে গোধরা-কাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলাকালীন ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস-সহ তাঁর মা-বোনকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারে হামলাকারীরা। এই ঘটনায় ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। মামলা চলাকালীন এক জনের মৃত্যু হয়। ১৫ বছর জেলে থাকার পর সুপ্রিম কোর্টে মুক্তির আবেদন জানিয়েছিলেন এক জন। শীর্ষ আদালত বিষয়টি ঠেলে দেয় গুজরাত সরকারের বিবেচনার উপর। আর তার পরেই মুক্তি পান এই ১১ জন।
এই ১১ জনের মধ্যে রাধেশ্যাম শাহ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘পরিবারের সঙ্গে এ বার রোজ দেখা করতে পারব। এ বার একটা নতুন জীবন শুরু করব।’’
এই পুরো ঘটনায় কার্যত বাক্রুদ্ধ বিলকিসের স্বামী। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘আমাদের এই বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি... আমরা শুধু দাঙ্গায় প্রাণ হারানো নিকট আত্মীয়দের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করতে পারি।’’ একটু থেমে তাঁর সংযোজন, ‘‘আমাদের ছোট্ট মেয়ে-সহ যাঁরা এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতিদিন স্মরণ করি।’’ তিনি জানান, এখন স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। কিন্তু কোনও স্থায়ী ঠিকানা নেই।
প্রসঙ্গত, এই গণধর্ষণ মামলায় ১১ জনের মুক্তির পর শুরু হয়েছে বিতর্ক। মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী শামশাদ পাঠানের প্রতিক্রিয়া, এমন নৃশংস ঘটনার অপরাধীদের জন্য কোনও ছাড় দেওয়া উচিত হয়নি। তাঁর যুক্তি, ‘‘নির্যাতিতা ও নির্যাতিতার পরিবারের আইনের উপর আশা-ভরসা কমে যেতে পারে।’’