এআইএফএফের সভাপতি ছিলেন প্রফুল্ল পটেল। চলতি বছরের ১৮ মে সুপ্রিম কোর্ট প্রফুল্ল এবং তাঁর কার্যনির্বাহী কমিটিকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। ফেডারেশনের কাজকর্ম দেখার জন্য নিয়োগ করে সিওএ।
সিওএ আদালতে জানায়, প্রফুল্লই ফেডারেশনের কাজকর্মে পিছন থেকে হস্তক্ষেপ করছেন। পটেলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের হয়।
ফিফাও সিওএ-কে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয়, গণতান্ত্রিক ভাবে ফেডারেশনের নির্বাচন হলে তবেই ভারতকে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে দেওয়া সম্ভব হবে। বিশ্বকাপ আয়োজনের ক্ষেত্রে হাতে মাত্র দু’মাস সময় রয়েছে।
এখন ফেডারেশনের নির্বাসনের জন্য মূলত দায়ী করা হচ্ছে প্রফুল্লকে। গত ২৩ মে এআইএফএফ জানায়, তারা সূত্র মারফত জানতে পারে, প্রফুল্ল নিজের অপসারণ নিয়ে ফিফাকে চিঠি পাঠিয়েছেন। উল্লেখ্য, তিনি ফিফারও সদস্য।
এখন অনূর্ধ্ব-১৭ মেয়েদের বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন অনিশ্চয়তার অন্ধকারে পড়েছে। ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়েও তৈরি হয়েছে প্রশ্নচিহ্ন। এই গোটা ব্যবস্থার জন্য প্রফুল্লকে দায়ী করছেন একটা বড় অংশ। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ কি রাজনীতির হাতে বন্দি হয়ে এই পরিস্থিতির মুখে?
ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে রাজনীতির কারবারিরা জড়িয়েছেন। তবে শরদ পওয়ার কিংবা অরুণ জেটলি বা হালে অনুরাগ ঠাকুররা ক্রিকেটের গুরুদায়িত্ব পেয়ছেন ঠিকই। কিন্তু ফুটবলের মতো ক্রিকেটের প্রশাসন পুরোটা কখনও রাজনীতিকদের হাতে যায়নি। এক দিকে জগমোহন ডালমিয়ার আমলে ভারতীয় ক্রিকেট যখন সাফল্যের পর সাফল্য পেয়েছে, ফুটবলে প্রিয়রঞ্জন কিংবা প্রফুল্লের আমলে তেমন কিছুই হয়নি।
১৯৮৮ সালে এআইএফএফের প্রেসিডেন্ট হন কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। খালিফা জিয়াউদ্দিনের পরে প্রেসিডেন্ট হন তিনি। প্রিয়রঞ্জনই প্রথম রাজনীতিক, যাঁর হাতে ভারতীয় ফুটবলের দায়িত্ব উঠে আসে।
ভারতীয় ফুটবলের ওঠা-পড়ায় প্রিয়রঞ্জনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ২০০৮ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ১৯৮৪ সালের পর ২০১১ সালে দোহায় এএফসি এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ভারত। প্রিয়রঞ্জনের আমলে ‘ভিসন ইন্ডিয়া প্রোজেক্ট’ শুরু হয়।
প্রায় দু’দশক প্রিয়রঞ্জন এআইএফএফের প্রেসিডেন্টের পদ সামলান। তাঁর অসুস্থতার কারণে প্রফুল্ল হন প্রেসিডেন্ট।
১৯৫৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রফুল্লের জন্ম। বাবা মনোহরভাই পটেল ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা। পরে মহারাষ্ট্রের গোন্দিয়া ভান্ডারা জেলার সভাপতিও ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক পরিবেশে বড় হওয়া প্রফুল্লের পড়াশোনা মুম্বইয়ে। বম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক পাশ করে পুরোদস্তুর রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করেন তিনি।
১৯৯১ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন প্রফুল্ল। পরেও দু’বার সাংসদ হন। একাধিক মন্ত্রকের মন্ত্রী ছিলেন। ২০০০ সালে রাজ্যসভার সাংসদ হন।
প্রফুল্লের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ডিএফবি) সঙ্গে এআইএফএফের চুক্তি হয়ে। কিছু দিন পর ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গেও।
ভারতীয় মহিলা ফুটবল বিশেষ গুরুত্ব পায় প্রফুল্ল জমানায়। ২০১৭ সালে নয়াদিল্লিতে ভারতীয় মহিলা লিগ শুরু হয়। এর মধ্যে ২০১৬ সালে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন তিনি।
সাফল্য রয়েছে। কিন্তু রাজনীতির ফাঁসে ভারতীয় ফুটবলকে ভুগতেও হয়েছে। এমনটাই মত ওয়াকিবহল মহলের একাংশের।
তবে ফিফার এই সিদ্ধান্তের পর অন্য মতও উঠে আসছে। যেমন এতে আখেরে শাপে বর হল বলে মনে করছেন ভাইচুং ভুটিয়া। দেশের প্রাক্তন ফুটবল অধিনায়ক জানাচ্ছেন, ফুটবল প্রশাসনে সংস্কারের এটাই সুযোগ।