নিজেরা তো ডুবেছেনই। ওঁদের উপরে ভরসা রেখে বিহারে ভরাডুবি হয়েছে বিজেপিরও। ভোটের ফল বেরোনোর পরে প্রশ্নের মুখে বিজেপি’র তিন শরিক— রামবিলাস পাসোয়ানের এলজেপি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝির হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা এবং উপেন্দ্র কুশওয়াহার রাষ্ট্রীয় লোক-সমতা পার্টি।
প্রকাশ্যে এখনও পর্যন্ত বিজেপি নেতারা কেউই অবশ্য শরিকদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের পথে হাঁটেননি। তবে দলের অন্দরে অনেক নেতাই বলছেন, ‘‘এই তিন দলকে একটু বেশিই ভরসা করেছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। যার ফল ভুগতে হয়েছে।’’ প্রকাশ্যে শরিকদের বিরুদ্ধে এখনও কেউ বিরক্তি প্রকাশ করেনি। বরং দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা নন্দকিশোর যাদবের কথায়, ‘‘আমরা ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়েছি। তার মধ্যে তো শরিকদেরও ভোট আছে। শরিকদের ছাড়ার কোনও প্রশ্নই উঠছে না।’’
লালু ও নীতীশের পিছড়ে বর্গ এবং দলিত ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরাতেই পাসোয়ান-কুশওয়াহা এবং মাঁঝির সঙ্গে জোটে গিয়েছিল বিজেপি। যার সুফল মিলেছিল লোকসভাতে। এলজেপি এবং রাষ্ট্রীয় লোক-সমতা পার্টির কাঁধে ভর করে বিহারে ৪০-এর মধ্যে ৩১টি আসনই জিতেছিল এনডিএ। তার জেরে কেন্দ্রে ভাল মন্ত্রকও ইনাম পেয়েছেন রামবিলাস এবং উপেন্দ্র। বিধানসভায় ভরাডুবির পরে তাঁদের একই রকম গুরুত্ব থাকবে কি না— তা নিয়ে ইতিমধ্যেই এনডিএ শিবিরে জল্পনা শুরু হয়েছে।
শরিকদের খারাপ ফলের পিছনেও লালু-নীতীশ জোটকেই মূল কারণ বলে মনে করছেন এনডিএ নেতারা। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘পিছড়ে বর্গ এবং দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ এখনও লালু-নীতীশকেই নেতা মনে করে। এ বারের ভোটে তা ফের প্রমাণিত। সে কারণেই কুশওয়াহা, মাঝিদের ভরাডুবি হয়েছে।’’ ৪২টি আসনে লড়ে রামবিলাসের দল জিতেছে মাত্র দু’টি আসন। একই অবস্থা কুশওয়াহা ও মাঁঝির দলেরও। দু’জনের দল যথাক্রমে ২৩ এবং ২১টি আসনে লড়েছিল। মাঁঝি শুধুমাত্র নিজে জিতেছেন। আর কুশওয়াহার দল জিতেছে মাত্র দু’টি আসনে।
সব চেয়ে খারাপ অবস্থা মাঁঝিরই। নীতীশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে দল ছেড়েছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন নরেন্দ্র সিংহ, বৃষণ পটেল, নীতীশ মিশ্রের মতো জেডিইউ নেতারা। কিন্তু ওই তিন নেতাকেই হার স্বীকার করতে হয়েছে। তিন জনেরই রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের মুখে।
উপেন্দ্র ও রামবিলাস ফল বেরোনোর পর থেকে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। দুই নেতাই পটনা ছেড়ে দিল্লিতে। এলজেপি-র এক নেতার কথায়, ‘‘কেন্দ্রে নিজেদের গুরুত্ব এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, ওঁরা তা-ই নিয়েই আশঙ্কায়।’’
জিতনরাম অবশ্য বিজেপিকে দুষছেন। তিনি নিজে যে দু’টি আসন থেকে দাঁড়িয়েছিলেন, তার মধ্যে একটিতে হেরে গিয়েছেন। জিতেছেন শুধু ইমামগঞ্জ থেকে। তিনি এই হারের দায় চাপিয়েছেন বিজেপির উপরেই। তাঁর কথায়, ‘‘মোহন ভাগবতের মতো নেতারা বিহারকে না-বুঝে যে ভাবে উল্টোপাল্টা বক্তৃতা দিয়েছেন, তারই ফল ভোগ করতে হয়েছে এনডিএ-কে।’’ বিহারকে না বোঝার এই অভিযোগ বিজেপির ভিতর থেকেও উঠেছে। বিহারিবাবু শত্রুঘ্ন সিনহা ফল বেরোনোর পরেই সরব হন। তাতে কৈলাস বিজয়বর্গীয় তাঁকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা করে বিদ্রুপ করেন। আজ আবার শত্রুঘ্ন পাল্টা টুইট করেছেন, ‘‘হাতি চলে বিহার, ...ভোকে হাজার!’’ বেগুসরাইয়ের বিজেপি সাংসদ ভোলা সিংহ এক ধাপ এগিয়ে সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকেও আক্রমণ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, মোদীর ‘অসংসদীয়’ কথা বিহারে দলের বিপর্যয় ডেকে এনেছে।