এখনও পরিস্থিতি থমথমে। শ্রীনগরে।—ছবি পিটিআই।
কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে দাবি করেও গ্রেফতার রাজনৈতিক নেতারা কবে মুক্তি পাবেন, তা বলতে পারলেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা। তাঁর কথায়, পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হলে স্থানীয় প্রশাসন সেই সিদ্ধান্ত নেবে। জানিয়েছেন, কাশ্মীরে মোতায়েন বাড়তি আধাসেনা সরিয়ে নেওয়ারও প্রশ্ন নেই এখন।
এর মধ্যেই প্রশাসনের চিন্তা বাড়িয়েছে— গা-ঢাকা দেওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের কাশ্মীরবাসীর উদ্দেশে দেওয়া একটি বিবৃতি। প্রশাসনের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে কাল শুক্রবার নমাজের পরে রাস্তায় বেরিয়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন এই নেতারা। পুলিশ মুখে বলছে, শুক্রবারের বিক্ষোভ কাশ্মীরে প্রতি সপ্তাহের ব্যাপার। কিন্তু বিক্ষোভ দমনে তাদের কিছু প্রস্তুতিও চোখে পড়েছে। আজ সন্ধ্যা থেকেই রাস্তায় চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। সেতুগুলিতে বসেছে বাড়তি পাহারা।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্র জানাচ্ছে, কাশ্মীরে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আফগানিস্তানে প্রশিক্ষিত শ’খানেক জঙ্গিকে সীমান্ত টপকে উপত্যকায় পাঠানোর চক্রান্ত করেছে পাকিস্তান। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের লিপায় জইশ-ই-মহম্মদের ১৫ জন জঙ্গিকে নিয়ন্ত্রণ রেখার পাশে মজুত রাখা হয়েছে। জইশ-প্রধান মাসুদ আজহারের ভাই রউফ আসগার নিজে বাছাই করেছে তাদের। এই গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পরে সীমান্তে ও নিয়ন্ত্রণ রেখায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তবে ৩ অগস্ট রাতে কার্ফু জারি করার পর থেকে কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কারও প্রাণহানি হয়নি— এই সরকারি ভাষ্যের বিপরীত তথ্য উঠে আসছে। এএফপি এমন অন্তত তিনটি মৃত্যুর খবর সামনে এনেছে। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছে। শ্রীনগরে নিজের বাড়ির ঘরে ছোটদের পড়াচ্ছিলেন রফিক সাগুর স্ত্রী ফেহমিদা। বাইরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ চলছিল। হঠাৎই জানলার কাচ ভেঙে একটি কাঁদানে গ্যালের সেল এসে পড়ে ঘরে। প্রচণ্ড শব্দ করে ফাটে সেটি। ছোটদের ঘরের বাইরে বার করা গেলেও ফেহমিদা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মোটরসাইকেলে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা যান। হাসপাতাল থেকে দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে, ‘কাঁদানে গ্যাসের বিষাক্ত গ্যাস ফুসফুসে ঢুকে মারা গিয়েছেন।’
বছর ১৫-র উসাইব আহমেদ মারা গিয়েছেন পুলিশের তাড়ায় নদীতে পড়ে। পাঁচ ঘণ্টা পরে নদী থেকে তার দেহ তুলতে পারে পরিবার। উসাইবের এক আত্মীয় জানান, শেষকৃত্যের আগে তার দেহ কেড়ে নিতে এসেছিল পুলিশ। তাদের যুক্তি ছিল, শেষকৃত্যে বিক্ষোভ হতে পারে।
আবার নিজের বাড়ির দোরগোড়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছেন ৬২ বছরের মহম্মদ আয়ুব খান। তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোতে থাকে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে বলা হয় আয়ুব খান মারা গিয়েছেন। তাঁর শেষকৃত্যে মাত্র ১০ জন স্বজনকে পুলিশের গাড়িতে তুলে কবরখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সব চেয়ে বড় কথা, তার পর থেকে ঘোরাঘুরি করেও এখনও ডেথ সার্টিফিকেট জোগাড় করতে পারেনি আয়ুব খানের পরিবার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পুলিশ তাঁদের নির্দেশ দিয়েছে ডেথ সার্টিফিকেট না-দিতে।