—প্রতীকী চিত্র।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক তরুণী যদি স্বামীর সঙ্গে থাকতে চান, নিজের ইচ্ছায় জীবন কাটাতে চান, সেই স্বাধীনতা রয়েছে তাঁর। ‘লাভ জিহাদ’-এর অজুহাতে একের পর এক বিজেপি শাসিত রাজ্য যখন বিয়ের নামে ধর্মান্তরণ প্রতিরোধী আইন কার্যকর করতে উঠেপড়ে লেগেছে, সেইসময় ভিন্ধর্মী এক দম্পতিকে নিয়ে মামলার শুনানিতে এমনই রায় দিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। আদালত সাফ জানিয়েছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার সিদ্ধান্তে কোনও তৃতীয় ব্যক্তির নাক গলানোর অধিকার নেই।
উত্তরপ্রদেশে ধর্মান্তরণ আইন কার্যকর হওয়ার আগে, ইটায় সলমন নামের এক তরুণের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শিখা নামের এক তরুণী। তা নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে সলমনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন শিখার পরিবারের লোকজন। অভিযোগ করেন, তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করেছেন সলমন। জোর করে শিখাকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে বাধ্য করেছেন তিনি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শিখাকে শিশু কল্যাণ কমিটি-র হেফাজতে পাঠিয়ে দেন জেলার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। সেখান থেকে বাবা-মায়ের হাতেই আসে শিখার হেফাজতের ভার।
জেলা আদালতের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সম্প্রতি ইলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সলমন। বেআইনি ভাবে তাঁর স্ত্রীকে আটকে রাখা হয়েছে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সোমবার সেই মামলার শুনানি চলাকালীন উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন এবং মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকেই একহাত নেয় ইলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি পঙ্কজ নকভি এবং বিবেক অগরওয়ালের ডিভিশন বেঞ্চ। তারা জানায়, মাথা খাটানো তো দূর, মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট এবং শিশু কল্যাণ কমিটির সিদ্ধান্তে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, আইন-কানুন সম্পর্কে কতটা শ্রদ্ধাশীল তাঁরা।
আরও পড়ুন: অমর্ত্যকে নিয়ে সঙ্ঘাতের জের? বিশ্বভারতীকে দেওয়া রাস্তা ফিরিয়ে নিলেন মমতা
শিখার সঙ্গেও একদফা কথা বলেন দুই বিচারপতি। আদালতে শিখা জানান, সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছেয় সলমনকে বিয়ে করেন তিনি। আদালতে স্কুলের শংসাপত্র জমা দিয়ে শিখা জানান, ১৯৯৯ সালের ৪ অক্টোবর তাঁর জন্ম। সেই হিসেবে আইনত প্রাপ্তবয়স্ক তিনি। তার পরেও জোর করে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করা হচ্ছে তাঁকে। শিখার অভিযোগ পেয়ে ইটা পুলিশকেও তীব্র তিরস্কার করে আদালত। সলমনের সঙ্গে শিখা শ্বশুরবাড়ি না ফেরা পর্যন্ত ওই দম্পতিকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেন তাঁরা।
এর আগে, গত সপ্তাহেই ধর্মান্তরণ প্রতিরোধী আইনে ৩২ বছরের এক মুসলিম যুবককে গ্রেফতার না করার নির্দেশ দিয়েছিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। আদালত জানায়, ধর্মান্তরণের জন্য কাউকে জোর করেছেন, এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি ওই যুবকের বিরুদ্ধে। তাই বয়ান দেওয়ার জন্য তাঁর উপর জোরাজুরি করা যাবে না।
আরও পড়ুন: হোমগার্ডে বদলি ডায়মন্ড হারবারের সেই পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে
মুসলিম ছেলের সঙ্গে হিন্দু মেয়ের বিবাহকে ‘লাভ জিহাদ’ আখ্যা দিয়েছে দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। তাঁদের যুক্তি, ধর্মান্তরণের উদ্দেশ্য নিয়েই হিন্দু মেয়েদের ভালবাসার জালে ফাঁসায় মুসলিম যুবকরা। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরব ছিলেন। শেষমেশ এ বছর নভেম্বরে রাজ্যে বিতর্কিত বিয়ের নামে ধর্মান্তরণ আইন পাশ করে তাঁর সরকার। উত্তরপ্রদেশের দেখাদেখি, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং কর্নাটকও বিয়ের নামে ধর্মান্তরণ আইন কার্যকর করতে উঠেপড়ে লেগেছে।