বিক্ষোভ ঠেকাতে কাঁদানে গ্যাস বাহিনীর। শ্রীনগরে। ছবি: রয়টার্স
ফের ফিরে এল বিধিনিষেধ, রাস্তায় কাঁটাতার আর খালি গাড়ি আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে তৈরি করা ব্যারিকেড। অস্ত্র উঁচিয়ে আধাসেনার কুচকাওয়াজ। সারা দিন অচল রইল দিন কয়েক আগে জীবন ফিরে পাওয়া ল্যান্ডলাইনের সংযোগ। শ্রীনগর ও জেলাগুলির প্রধান প্রধান মসজিদগুলোয় নমাজের জমায়েতেও অনুমতি দিল না প্রশাসন। তবে শুক্রবার দিনের শেষে প্রশাসন খুশি, কারণ এই বিধিনিষেধে প্রায় কোনও জায়গাতেই বড়সড় বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়নি নিরাপত্তা বাহিনীকে।
আত্মগোপনে থাকা হুরিয়ত নেতারা ডাক দিয়েছিলেন, বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে রাস্তায় বেরিয়ে শুক্রবার নমাজের পরে যেন বিক্ষোভ দেখান কাশ্মীরিরা। সে বিক্ষোভ মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই তোড়জোড় চোখে পড়েছিল। শ্রীনগরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে, সেতুগুলির ওপরে বাড়তি আধাসেনা মোতায়েন হয়েছিল। এ দিন ভোর চারটে থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল পুরনো বিধিনিষেধ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল রাস্তায় যান চলাচল। সরকারি কর্মী ও সাংবাদিকদের দেওয়া কার্ফু পাসও এ দিনের জন্য স্থগিত করে দেয় প্রশাসন। শহরের চার প্রধান মসজিদ জামিয়া মসজিদ, হজরতবাল, দস্তগীর সাহিব ও সাইদা সাহিব মসজিদে নমাজের জমায়েত করা যাবে না বলে ঘোষণা করা হয়। জেলাগুলির প্রধান প্রধান মসজিদেও এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। কাঁটাতার ও জংলা গাড়ি দিয়ে ব্যারিকেড গড়ে শ্রীনগরের ‘ঘণ্টাঘর’ এলাকাকে ফের নিঝুমপুরী করে দেওয়া হয়। এতে বড় বিক্ষোভ ঠেকানো গিয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যায় পুলিশ জানায়, পুরনো শহরের ইদগা, নওয়াকাদাল, তালিবাল ও অন্য কয়েকটি জায়গায় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হয়েছে। মারমুখী তরুণদের ঠেকাতে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠি চালাতে হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে। কোথাও কোথাও পাথরও ছোড়া হয়েছে।
অবরুদ্ধ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কাশ্মীরে চিকিৎসা এবং টিকাকরণের মতো পরিষেবা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। সরকারকে এ বিষয়ে বাড়তি নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। ৫ অগস্ট থেকে টেলিফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সেখানকার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে কোনও খবর মিলছে না জানিয়ে চিকিৎসকেরা বিবৃতিতে বলেছেন, তবে অবরুদ্ধ অবস্থায় পরিষেবা ভালই ব্যাহত হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ছররা বুলেটে কিছু মানুষের জখম হওয়ার খবরও মিলছে। ছররা বুলেটে আহতদের চিকিৎসাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে চিকিৎসকেরা জিনিয়েছেন, এই আঘাত পঙ্গুত্ব ডেকে আনে। সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি টিকাকরণের মতো রোগ-প্রতিরোধী স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকেও কাশ্মীরিরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানিয়ে চিকিৎসকেরা বলেছেন, প্রয়োজনে কাশ্মীরের বাইরে থেকে ডাক্তারের দল নিয়ে গিয়ে তা চালু রাখা হোক। না হলে সেখানে নানা অসুখ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্যও প্রশাসনরে কাছে আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এ মাসের ৫ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত শ্রীনগরের প্রধান দুই হাসপাতাল শের-এ-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস এবং শ্রী মহারাজা হরি সিংহ হাসপাতালে কাঁদানে গ্যাসের সেল এবং ছররা বুলেটে জখম ১৫২ জনের চিকিৎসা করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই কিশোর। সরকারের দাবি, অবরোধের পরে কাশ্মীরে কোনও বিক্ষোভকারীর প্রাণহানি ঘটেনি। সংবাদ সংস্থা এএফপি অবশ্য এই সময়ের মধ্যে কাঁদানে গ্যাসের বিষক্রিয়া বা তার সেলের ঘায়ে তিন জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে।