অধীর চৌধুরী।—ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে সেই গাঁধী পরিবারের হাতেই কংগ্রেসের দায়িত্ব গিয়েছে ফের। এ নিয়ে বিজেপি ক্রমাগত কটাক্ষ করে চলেছে। সেই আবহেই এ বার মুখ খুললেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী। জানিয়ে দিলেন, এ ছাড়া গতি ছিল না। তাঁর মতে, গাঁধী পরিবারের একটা ‘ব্র্যান্ড ইকুইটি’ রয়েছে। বাইরের কারও পক্ষে দায়িত্ব সামলানো কঠিন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধীর বলেছেন, ‘‘গাঁধী পরিবারের বাইরের কারও পক্ষে কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দেওয়া কঠিন। রাজনীতিতে ব্র্যান্ড ইকুইটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে বিজেপিকেই দেখুন। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহকে ছাড়া কি দলটা মসৃণ ভাবে চলতে পারবে? আমাদের কংগ্রেসেও তাই। গাঁধী পরিবারই আমাদের ব্র্যান্ড ইকুইটি। তাতে কোনও ক্ষতি নেই। দলে ওঁদের মতো আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব কারও নেই। এটাই কঠিন বাস্তব।’’
১৯৯৮ সালের শুরু থেকে ২০১৭-র ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত একটানা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন সনিয়া গাঁধী। এর পর মায়ের জায়গায় আসেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর ইস্তফা দেন তিনি, যার পর দীর্ঘ আড়াই মাসেও রাহুলের উত্তরসূরি খুঁজে বার করতে পারেনি। বার বার অনুরোধ করলেও, পদে ফিরতে রাজি হননি তিনি। এমনকি গাঁধী পরিবারের কাউকে সভাপতি করা হোক তাও চাননি তিনি। কিন্তু ১৭ অগস্ট কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির ফের সেই সনিয়াকেই অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি নিয়োগ করা হয়।
আরও পড়ুন: ঢাকা থেকে কলকাতায় এসেছিলেন চোখ দেখাতে, জাগুয়ারের ধাক্কায় আর ফেরা হল না দুই বন্ধুর
তবে রাহুলের সরে যাওয়াকেই সমর্থন করেছেন অধীর। তাঁর মতে, পরাজয়ের দায় নিয়ে সরে গিয়ে বিচক্ষণের মতোই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাহুল। সনিয়ার পদে ফেরা নিয়ে অধীর বলেন, ‘‘শুরুতে দায়িত্বে নিতে চাননি সনিয়া। কিন্তু দলীয় নেতৃত্বের অনুরোধ ফেলতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। চরম দুরাবস্থার সময় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন উনি। ওঁর নেতৃত্বের জোরেই ২০০৪ এবং ২০০৯, পর পর দু’বার সরকার গড়তে পেরেছিল কংগ্রেস।’’ তবে বিরোধীরা একজোট হলে এবং সম্মিলিত ভাবে রাহুল গাঁধীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা হলে, এ বছর নির্বাচনের ফলাফল অন্যরকম হতে পারত বলেও দাবি করেন অধীর।
একই সঙ্গে কংগ্রেসের ব্যর্থতার জন্য আঞ্চলিক দলগুলির আদর্শহীনতা এবং মেরুকরণের রাজনীতিকেও দুষেছেন বহরমপুরের সাংসদ। তাঁর দাবি, আঞ্চলিক দলগুলির উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল ছিল কংগ্রেস। কিন্তু তাদের নিজেদেরই আদর্শে খামতি রয়েছে। দেশও ক্রমশ মেরুকরণের রাজনীতির দিকেই ঝুঁকছিল। অধীরের কথায়, ‘‘আঞ্চলিক দলগুলি যে ভাবে এগোচ্ছে, খুব শীঘ্রই গুরুত্ব হারাবে তারা। তাতে আরও বেশি করে মেরুকরণের রাজনীতির দিকে এগিয়ে যাবে দেশ।’’
কংগ্রেসের একটা আদর্শ রয়েছে, দেশজুড়ে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তাই পারলে একমাত্র তারাই মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়তে পারবে বলেও মত অধীরের। তিনি বলেন, ‘‘আদর্শগত ভাবে এবং রাজনৈতিক ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে মূল লড়াইটা কংগ্রেসই চালিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঠিকই। তবে এটাও স্থায়ী নয়। একটা সময় পরিস্থিতি পাল্টাবেই। বেকারত্ব, খাদ্য সঙ্কট, দৈনিক সমস্যাগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে দেখা দেবে। তার জন্য নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে আমাদের।’’
আরও পড়ুন: জামিন নিয়ে জোরালো আপত্তি তুলল না পুলিশ, মুক্ত টালিগঞ্জ কাণ্ডের মূল পাণ্ডা পুতুল-প্রতিমা
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ নিয়ে এর আগে সংসদেও কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন অধীর। এ দিনও একই সুর ধরা পড়ে তাঁর গলায়। নরেন্দ্র মোদী সরকাররে সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পরিপন্থী বলে দাবি করেন তিনি। এর আগে একটা রাজ্যকে দু’টুকরো করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার ঘটনাও নজিরবিহীন বলে দাবি করেন তিনি।