গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
চাকরির জন্য আবেদনও করতে হচ্ছে না আজকাল। সরকারের বদান্যতায় আপনা আপনিই তা জুটে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশাবলীরও ধার ধারছে না মোদী সরকার। নিজেদের পছন্দ মতো প্রার্থীকে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে বসিয়ে দিচ্ছে তারা। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনে (সিআইসি) নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এ বার এমনই অভিযোগ তুললেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা সিআইসি-র নিয়োগ কমিটির সদস্য অধীররঞ্জন চৌধুরী। কেন্দ্রের বাছাই করা কিছু প্রার্থীর নিয়োগে আপত্তি জানিয়েছেন তিনি।
তথ্য জানার আধিকার আইনে (আরটিআই) ২০০৫ সালে সিআইসি গঠিত হয়। আরটিআই-এর মাধ্যমে নাগরিকরা সঠিক তথ্য পাচ্ছেন কি না, তাঁদের কী অভাব অভিযোগ রয়েছে, তা দেখাই সিআইসি-র দায়িত্ব। কোনওরকম গাফিলতি চোখে পড়লে তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিস ধরাতেও পারে তারা। আরোগ্য সেতু অ্যাপ কারা বানিয়েছে, তার সদুত্তর দিতে না পারায় সম্প্রতি মোদী সরকারকে নোটিস ধরিয়েছে সিআইসি।
গত দু’মাস ধরে সিআইসি-র মুখ্য তথ্য কমিশনারের পদটি ফাঁকা ছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের নিয়োগ কমিটি এত দিন সেই শূন্যস্থান পূরণ নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা চালায়। গত ২৪ অক্টোবর তাঁদের বৈঠকে মুখ্য তথ্য কমিশনার হিসেবে দু’টি নাম উঠে আসে, অবসরপ্রাপ্ত ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস (আইএফএস) অফিসার তথা বর্তমানে তথ্য কমিশনার হিসেবে কর্মরত যশবর্ধনকুমার সিনহা এবং নীরজকুমার গুপ্তর। মুখ্য তথ্য কমিশনার ছাড়াও সর্বাধিক ১০ জন তথ্য কমিশনার নিয়োগ করা যায়। সেই পদে নাম উঠে আসে সাংবাদিক উদয় মাহুরকর, ডেপুটি কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল সরোজ পুনহানি, প্রাক্তন প্রতিরক্ষা উৎপাদন সচিব সুভাষচন্দ্র, ডেপুটি সিএজি মীনাক্ষী গুপ্ত, অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর জেনারেল (নিউজ) ইরা জোশী, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব অরুণকুমার পান্ডা এবং প্রাক্তন শ্রম সচিব হীরালাল সামারিয়ার।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে কালো তালিকায় চায় ভারত, পুলওয়ামা মন্তব্যের ‘সাফাই’ ইমরানের মন্ত্রীর
এ নিয়ে যশবর্ধন এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য না করলেও, তিনি নিয়োগপত্র পেয়ে গিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন মাহুরকর। এই দু’জনের নিয়োগ নিয়েই আপত্তি তুলেছেন অধীর। তাঁর যুক্তি, এর আগে ব্রিটেন এবং শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় হাই কমিশনারের দায়িত্ব সামলেছেন যশবর্ধন। এই মুহূর্তে তথ্য কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত তিনি। কিন্তু সিআইসি-র মুখ্য কমিশনার হওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যে অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন, সেই অভিজ্ঞতা তাঁর নেই। এ ক্ষেত্রে তাঁর চেয়ে ঢের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে সিনিয়র তথ্য কমিশনার ভঞ্জনা সারনার। তাঁকে বাদ দিয়ে যশবর্ধনকে কেন মুখ্য তথ্য কমিশনারের পদে তুলে আনা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অধীর।
একই সঙ্গে তথ্য কমিশনারের পদের জন্য ৩৫৫টি আবেদন জমা পড়েছিল। তার মধ্যে থেকে ১৩৯ জন আবেদনকারীকে শর্টলিস্ট করা হয়েছিল। অথচ আবেদন না জানানো সত্ত্বেও সাংবাদিক মাহুরকরের নাম কী ভাবে সুপারিশ করা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অধীর। ২০১৭ সালে মোদী সরকারের শাসনকালের ভূয়সী প্রশংসা করে একটি বই লিখেছিলেন মাহুরকর। একাধিক বার প্রকাশ্যে বিজেপিকে সমর্থনও করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তাই অধীরের বক্তব্য, ‘‘মাহুরকরের নাম বোধহয় আকাশ থেকে এসে পড়েছে। ঘোষিত ভাবেই শাসকদল এবং তাদের আদর্শের সমর্থক উনি।’’
শুধু তাই নয়, তথ্য কমিশনে নিয়োগের ক্ষেত্রে কাউকে সুপারিশ করতে গেলে, তাঁর যোগ্যতা সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য তুলে ধরতে হয়। সুপ্রিম কোর্টের তরফে অন্তত তেমনই নির্দেশ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোদী সরকার সেই নির্দেশাবলীর তোয়াক্কা করেনি বলেও অভিযোগ করেছেন অধীর। তবে কেন্দ্রের তরফে এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
আরও পড়ুন: চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ, ইসরো-র বাণিজ্যিক শাখাকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলল আমেরিকার আদালত
যশবর্ধনকে নিয়ে এই মুহূর্তে সিআইসি-তে পাঁচ জন তথ্য কমিশনার রয়েছেন। এত দিন মুখ্য তথ্য কমিশনার এবং তথ্য কমিশনারদের কার্যকালের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। ৬৫ বছর বয়স পর্যন্তও কাজ করার সুযোগ ছিল তাঁদের। কিন্তু গতবছর আরটিআই আইনে সংশোধন ঘটিয়ে তাঁদের কার্যকালের মেয়াদ কমিয়ে তিন বছর করা হয়। সেই হিসেবে মুখ্য তথ্য কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হলে ২০১৩-এর অক্টোবর পর্যন্ত ওই পদে থাকবেন যশবর্ধন।