অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
বাংলার সরকারের বিরুদ্ধে এ বার লোকসভায় সরব হল কংগ্রেস। ঝালদায় কংগ্রেসের কাউন্সিলর তপন কান্দুর হত্যার ঘটনা লোকসভায় জানিয়ে কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরি খোলাখুলিই বললেন, ‘‘বাংলায় অরাজকতা চলছে।’’ ভরা লোকসভায় অধীরের সেই বক্তব্যে টেবল চাপড়ে সমর্থন জানাতেও দেখা গেল কংগ্রেসের সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে।
রবিবার বিকেলে ঝালদায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন কংগ্রেসের নব নির্বাচিত কাউন্সিলর তপন। লোকসভায় সে কথা জানিয়ে অধীর বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলার ক্রমশ অবনতি হচ্ছে।’’ সোমবার লোকসভার অধিবেশনে ছিলেন না অধীর। স্পিকারকে কংগ্রেস সাংসদ জানান, তিনি আসতে পারেননি কারণ তঁকে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার ঝালদা পুরসভা এলাকায় যেতে হয়েছিল। লোকসভার অধীর গোটা বক্তৃতাই দেন বাংলায়। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ঝালদায় আমি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনার সাক্ষী হয়েছি। কংগ্রসের টিকিটে জেতা পুরসভার কাউন্সিলর তপন কান্দুকে সেখানে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে।’’ কেন হত্যা করা হয়েছে তপনকে, তার কারণও ব্যাখ্যা করেন অধীর। তিনি বলেন, ‘‘ঝালদায় কংগ্রেস পুরবোর্ড তৈরির কাজে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শাসকদলের একটি অংশ পুলিশের সাহায্য নিয়ে তপনকে হত্যা করে।’’ অধীর অভিযোগ করেন, ঝালদার পুরবোর্ডের দখল নিতেই কংগ্রেস কাউন্সিলরকে হত্যা করা হয়েছে।
অধীর যখন এই বক্তৃতা দিচ্ছেন, তখন তাঁকে লক্ষ্য করে পাল্টা স্লোগান দিতে দেখা যায় তৃণমূলের সাংসদদেরও। ‘খুনি অধীর, গুণ্ডা অধীর’ স্লোগানও শোনা যায় নেপথ্যে। তবে তাতে কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতাকে থামানো যায়নি। বরং সনিয়া-সহ দলের সাংসদের অধীরের সমর্থনে টেবল বাজাতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, এই প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় স্তরে এ ভাবে সরব হতে দেখা গেল কংগ্রেসকে। এর আগে বিজেপি বাংলায় ভোট চলাকালীন এবং ‘ভোট পরবর্তী’ হিংসার অভিযোগ করলেও কংগ্রেস জাতীয় স্তরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সে ভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। কিন্তু শনিবার অধীরকে লোকসভায় বলতে শোনা গেল, ‘‘বাংলায় নির্বাচন চলাকালীন এবং নির্বাচনের পরে খুন, রাহাজানি, হিংসা, দাঙ্গা, সন্ত্রাসের ঘটনা নির্বিচারে চলছে। লাগামহীন ভাবে চলছে।’’ এমনকি বিভিন্ন হিংসার ঘটনার উদাহরণ দিতে গিয়ে টেনে আনেন ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রসঙ্গও। কংগ্রেস সাংসদকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আনিসকে পুলিশ খুন করেছে’’।
সম্প্রতিই পাঁচরাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। তারপর তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন বিজেপিকে সরাতে আর কংগ্রেসের উপর ভরসা না করাই উচিত। মমতা অবশ্য এই প্রথম এ কথা বলছেন তা নয়। নির্বাচনের আগেও তিনি কংগ্রেস ছাড়া অন্য স্থানীয় দলগুলিকে জোটবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। এমনকি, ভোটের আগে লোকসভায় যখন কংগ্রেস বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, তা এড়িয়ে যেতেও দেখা গিয়েছিল তৃণমূল সাংসদদের। এ বার লোকসভাতে কংগ্রেস আক্রমণ করল বাংলার তৃণমূল সরকারকে। এমনকি ঝালদায় কাউন্সিলরের হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তও দাবি করেছেন অধীর।