তিনি মূলধারার ছবি ও ধারাবাহিকের পেশাদার অভিনেত্রী, অথচ তাঁকে পর্ন তারকা ভেবে ভুল করেন অনেকেই।
বলিউডের অভিনেত্রী মাহিকা শর্মা জানিয়েছেন, তাঁকে যৌনকর্মীও ভেবে নেন কেউ কেউ। নেটমাধ্যমে তাঁকে লক্ষ্য করে আপত্তিকর মন্তব্যও করেন অনেকেই।
অথচ মাহিকা টিভি দুনিয়ার পরিচিত মুখ। 'রামায়ণ', 'তু মেরা অগল বগল হ্যায়'-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে কাজ করেছেন।
দিন কয়েকের মধ্যে একটি সিনেমাও আসতে চলেছে মাহিকার। ছবির নাম ‘দ্য মডার্ন কালচার’।
ছবিতে মাহিকার নায়ক একজন বিদেশি পর্ন তারকা। নাম ড্যানি ডি।
মাহিকা জানিয়েছেন, ড্যানির সঙ্গে তাঁর ছবি করার খবর জানাজানি হতেই নেটমাধ্যমে তাঁকে লক্ষ্য করে এই ধরনের মন্তব্য বেশি করে আসা শুরু হয়েছে।
অথচ মাহিকা নিজে বরাবর যৌনকর্মীদের জন্য বহু কাজ করেছেন। তাঁদের নিয়ে সমাজে যে সব প্রচলিত ধ্যানধারণা রয়েছে, তা বদলানোর চেষ্টাও করেছেন।
মাহিকা মনে করেন, দেহ ব্যবসা কোনও পেশা হওয়া উচিত নয়। এই পেশার মানুষদের অনেক মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যা কোনও পেশাতেই কাম্য নয়। কোনও পেশাকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিভঙ্গীতেও দেখাও উচিত নয়।
সম্প্রতি সিনেমার সেটে তাঁর সহকর্মী এবং পর্ন তারকা ড্যানি ডি-র সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে মাহিকার।
মাহিকা জানিয়েছেন, তার পর থেকেই তাঁকেও পর্ন তারকা বলে ভেবে নেওয়া হয়েছে।
শুধু নেটমাধ্যম নয়, ফিল্ম জগতের বিভিন্ন মহলেও যে তাঁকে আলাদা করে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তাঁর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে, সে সব স্পষ্ট বুঝতে পারেন অভিনেত্রী।
মাহিকা জানিয়েছেন, সব বুঝেও মুখ বুজে থেকেছেন তিনি। কারণ ফিল্ম জগতের এই ধারণাকে বদলানোর ক্ষমতা তার মতো উঠতি নায়িকার যে নেই, তা তিনি জানেন।
বিতর্কিত বিষয়ে নিজের মতামত জানাতে কোনওদিনই দ্বিধা করেন না মাহিকা। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর জোরালো মন্তব্যই তাঁকে খবরের শিরোনামে এনেছে বার বার।
পর্ন তারকা ড্যানি ডি-র প্রতি নিজের ভাল লাগার কথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন মাহিকা।
পর্ন তারকাদের পেশাকে সমর্থন করে বলেছিলেন, বলিউডে যে ভাবে উঠতি নায়িকাদের কাস্টিং কাউচের শিকার হতে হয়, ক্যামেরার আড়ালে তাঁদের যা যা করতে বাধ্য করা হয়, তার চাইতে সে সব ক্যামেরার সামনে এনে পর্ন ছবি করাই ভাল।
যদিও ভারতে পর্ন ছবি বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে মাহিকার মত আলাদা। কিছু দিন আগে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আইন করে পর্ন ছবি বন্ধ করা হলেও এখনও আইন ভেঙে ছবি বানানো হচ্ছে। স্থানীয় শিল্পীদের দিয়ে ছবি বানিয়ে অন্য ডিজিটাল মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ছবিগুলি। এ সব বন্ধ হওয়া দরকার।’’
ড্যানি ডি-র সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব এবং তা নিয়ে তাঁকে যে পেশাগত সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে, সে কথা মেনে নিয়েই মাহিকা বলেছেন, আমি সংযত থাকার চেষ্টা করছি। তবে আমাদের সমাজে মেয়েদের নিয়ে সহজেই বিরূপ মন্তব্য করা যায়। এটাই দুঃখের। এই মনোভাব বদলানো দরকার।
ইনস্টাগ্রামে ৭৩ হাজার অনুগামী তাঁর। কিন্তু সম্প্রতি সেখান থেকে তাঁর সমস্ত ছবি মুছে ফেলেছেন মাহিকা।
তাঁর ছবিতে নেটাগরিকদের অপমানজনক মন্তব্যগুলি দেখে খারাপ লাগছিল তাঁর। তবে ভেঙে পড়েননি মাহিকা। বরং নিজের বেদনাকে তূলনা করেছেন একজন যৌনকর্মীর যান্ত্রণার সঙ্গে। বলেছেন, ‘‘আমি ভেবেছি, কী ভয়ানক মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে প্রতি মুহূর্ত কাটাতে হয় ওঁদের। আমার যন্ত্রণা, অপমান সেখানে কিছুই নয়।’’
এই ভাবনা থেকেই যৌনকর্মীদের নিয়ে সামাজিক ধ্যানধারণা বদলানোর একটি প্রচার পরিকল্পনাও শুরু করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, ‘‘যৌনকর্মীরা অনেক ক্ষেত্রেই হিংসা, অপমানজনক ব্যবহারের শিকার হয়ে থাকেন। আমার লক্ষ্য, সমাজকে ওঁদের শ্রদ্ধা করতে শেখানো।’’