প্রতীকী ছবি।
প্রচারের ঢাক-ঢোল তৈরি। আর বাকি মাত্র ৩৫ হাজার মতো ডোজ়। রাত পোহালেই তা দেওয়া হয়ে যাবে। আর সঙ্গে সঙ্গে একশো কোটি ডোজ় প্রতিষেধক দেওয়ার ‘কৃতিত্বকে’ সামনে রেখে কোভিড মোকাবিলায় নরেন্দ্র মোদীর সাফল্য প্রচারে নেমে পড়তে তৈরি তাঁর সরকার এবং দল। প্রস্তুতি চলছে একাধিক অনুষ্ঠানেরও। বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, ১০০ কোটি ডোজ় টিকাকরণ হলেও, দু’ডোজ টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনও অনেক দেশের তুলনায় বহু পিছিয়ে ভারত।
বিরোধী শিবিরের দাবি, ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের ৯৪ কোটি প্রাপ্তবয়স্ককে টিকাকরণের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দু’টি ডোজ় পেয়েছেন তার মাত্র ২৯%। দেশের মোট জনসংখ্যার ২১%। অথচ বহু উন্নত দেশেই বেশির ভাগ জনকে দু’টি ডোজ় দেওয়া সারা। শুধু তা-ই নয়, অক্টোবরে ফের টিকা দেওয়ার গতি কমে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। সরকারি সূত্রে যদিও দাবি, তা হয়েছে উৎসবের কারণে।
১৫ জানুয়ারি দেশে টিকাকরণ শুরু হয়েছিল। বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে দেওয়া হয়েছে ৯৯.৫৪ কোটিরও বেশি ডোজ়। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আশা, আগামিকাল প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যেই ১০০ কোটির লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলা যাবে। তাই আগামিকাল একাধিক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করে রেখেছে কেন্দ্র। মোদী সরকার জানিয়েছে, ১০০ কোটির লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়ার নেপথ্য কারিগরদের (চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী) ধন্যবাদ দিতে কাল সকাল সাড়ে ১০টায় দিল্লির রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া লাল কেল্লার প্রাঙ্গন থেকে গান ও অডিও-ভিসুয়াল ফিল্মের উদ্বোধন করবেন। ঠিক হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়ার পরেই রেল ও বিমানে টিকাকরণের ওই সাফল্যকে দিনভর ঘোষণা করা হবে।
সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিজেপি নেতা-কর্মীদেরও ব্যাপক ভাবে প্রচারে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষত উত্তরপ্রদেশ-সহ ভোটমুখী পাঁচ রাজ্যে প্রান্তিক মানুষের কাছে গিয়ে টিকাকরণের সাফল্যকে তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছে দল।
বিরোধীরা বলছেন, দেশে এখনও পর্যন্ত প্রথম ডোজ় পেয়েছেন ৭০.৫০ কোটি মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ় প্রায় ২৯.১৫ কোটি। অর্থাৎ, দেশের মোট জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ মাত্র দু’ডোজ় টিকা পেয়েছেন। তারপরেও এত প্রচার! নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল বলছেন, ‘‘১০০ কোটির লক্ষ্যমাত্রা ছুঁলেও এখনও অনেক পথ চলা বাকি।’’ কংগ্রেসের অভিযোগ, সরকারের লক্ষ্য ছিল, এ বছরের মধ্যে ৯৪ কোটি প্রাপ্তবয়স্ককে টিকার আওতায় আনা। সেখানে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ একটিও ডোজ় পাননি। প্রশ্নের মুখে টিকাকরণের গতিও। দেখা গিয়েছে, জুনের পরে অক্টোবরে টিকাকরণের গতি সব থেকে কমে গিয়েছে। ফলে ১৫ অক্টোবর ১০০ কোটি ডোজ়ের লক্ষ্যমাত্রা নিলেও, তা ছুঁতে প্রায় এক সপ্তাহ বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের মতে, উৎসবের মরসুমের কারণে দেশে সামগ্রিক ভাবে টিকাদানের গতি কমেছে। দিপাবলির পরে ফের টিকাকরণের গতি বাড়বে। তাতে জোর দিয়েছেন সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর মতে, “বাড়ি-বাড়ি গিয়ে টিকাকরণ করা দরকার।... এ বছরের মধ্যে দেশের সকলকে দু’টি করে ডোজ় দেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা সরকার নিয়েছিল, সেই লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে যেতে শুরু করেছে দেশ।’’