water scarcity

দেশে জলসঙ্কট রোজ শিরোনামে, অবস্থা কতটা ভয়াবহ জানেন কি?

মাঝে আর মাত্র একটা বছর। নীতি আয়োগের রিপোর্ট বলছে, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই এবং হায়দরাবাদ-সহ দেশের ২১টি শহরে ভূগর্ভস্থ জল প্রায় শেষ হতে চলেছে পরের বছরেই। তীব্র জল সঙ্কটে পড়বেন অন্তত ১০ কোটি ভারতীয়। ‘শেষের সে দিন’ তবে কি আর খুব বেশি দূরে নয়!

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ১৭:১৬
Share:
০১ ১৯

মাঝে আর মাত্র একটা বছর। নীতি আয়োগের রিপোর্ট বলছে, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই এবং হায়দরাবাদ-সহ দেশের ২১টি শহরে ভূগর্ভস্থ জল প্রায় শেষ হতে চলেছে পরের বছরেই। তীব্র জল সঙ্কটে পড়বেন অন্তত ১০ কোটি ভারতীয়। ‘শেষের সে দিন’ তবে কি আর খুব বেশি দূরে নয়!

০২ ১৯

নীতি আয়োগের রিপোর্ট থেকে আরও জানা যাচ্ছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশুদ্ধ পানীয় জলের প্রবল সঙ্কটে পড়বেন ৪০ শতাংশেরও বেশি ভারতীয়। ভারতের ইতিহাসে এ রকম ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।

Advertisement
০৩ ১৯

চলতি বছরে প্রায় ২০০ দিন ছিটেফোঁটা বৃষ্টির মুখ না দেখায় চেন্নাই জুড়ে দেখা যাচ্ছে জলের হাহাকারের চিত্র। শুকিয়ে গিয়েছে তিনটি নদী, চারটি জলাশয়, পাঁচটি জলাভূমি। ক্রমাগত জলবায়ুর পরিবর্তনে বেড়ে চলেছে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি। চলতি জুন মাসের ১ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত চেন্নাইতে এই ঘাটতি ৬৫ শতাংশের মতো।

০৪ ১৯

মধ্যপ্রদেশের ছবিটাও মোটামুটি একই। দিনের বেলা তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকছে। সঙ্গে তীব্র জল সঙ্কট। মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। শুধু মানুষই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বন্যপ্রাণও। মধ্যপ্রদেশের দেওয়াসে পুঞ্জাপুরা জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছে ১৫টি হনুমানের দেহ। প্রচণ্ড গরমে জলের অভাবে হিটস্ট্রোকে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে বন আধিকারিকদের অনেকের মত।

০৫ ১৯

কিন্তু কেন এই তীব্র জল সঙ্কট? রাষ্ট্রপুঞ্জের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৩৬ কোটি। এই বিপুল জনসংখ্যার চাপ স্বাভাবিক ভাবেই এসে পড়ছে প্রকৃতির উপর। এ ছাড়া জল সঞ্চয়ের বিষয়ে বেশির ভাগ মানুষের সাধারণ সচেতনতার অভাব জল সঙ্কটের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা।

০৬ ১৯

নাসা এবং জার্মানির অ্যারো স্পেস সেন্টারের এক যৌথ সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে ভূগর্ভস্থ জল হ্রাসের অন্যতম কারণ কৃষিক্ষেত্র এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে জলের যথেচ্ছ ব্যবহার। ভারতের মতো কৃষিপ্রধান দেশে ধান এবং গম চাষে যে পরিমাণ ভূগর্ভস্থ জল খরচ হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সেই পরিমাণ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জল-সমস্যা বেড়েই চলেছে।

০৭ ১৯

ভূগর্ভস্থ জল হ্রাসের আরেক কারণ ব্যাপক হারে বৃক্ষছেদন। চেন্নাইয়ের অলাভজনক সংস্থা 'কেয়ার আর্থ ট্রাস্ট' এর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ব্যাপক হারে শিল্পায়ন এবং শহরায়নের ফলে চেন্নাইয়ের বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করার একমাত্র প্রাকৃতিক জলাভূমি পাল্লিকারানাইয়ের আয়তন বর্তমানে ৫৯৩ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে যা ১৯০০ সালে ছিল ৬০০০ হেক্টরের কাছাকাছি।

০৮ ১৯

কেন্দ্রীয় ভূগর্ভস্থ সংস্থার সমীক্ষা বলছে, ভারতে ৪০ শতাংশ জলের উৎস ভূগর্ভস্থ জল। গ্রেটার চেন্নাইয়ে প্রতিদিন জলের খরচ হয় প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি লিটার। কিন্তু সেই চাহিদার ১ শতাংশও পূর্ণ করা যায়নি এ বার।

০৯ ১৯

কর্নাটকেও ছবিটাও মোটামুটি একই। পানীয় জলের অভাবের জন্য সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল। জলের অভাবে চাষবাসের ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। এক বেসরকারি সমীক্ষা জানাচ্ছে, খরার প্রভাব পড়েছে ৮২ লক্ষ কৃষকের উপর।

১০ ১৯

তা ছাড়াও কল-কারখানা থেকে বার হওয়া দূষিত বর্জ্য পদার্থ ভূগর্ভস্থ জলকে ক্রমাগত ঠেলে দিচ্ছে দূষণের দিকে। পরিশ্রুত জল হয়ে উঠছে বিষাক্ত।

১১ ১৯

রাজধানী দিল্লিও তীব্র জল সঙ্কটের আশঙ্কায় রয়েছে। দিল্লি জল বোর্ড জানাচ্ছে, রাজধানী শহরে জল সঙ্কট মোকাবিলার সমস্ত রকম পরিকাঠামোই রয়েছে। কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বৃষ্টির হার কমে যাওয়ায় নদী শুকিয়ে যাচ্ছে, কমছে মাটির তলার জল। গ্রাফিক:তিয়াসা দাস

১২ ১৯

আসন্ন এই বিপদের মোকাবিলা করার কি কোনও উপায় নেই? পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, রেন ওয়াটার হারভেস্টিং বা বৃষ্টির জল সংরক্ষণ কিছুটা হলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে।

১৩ ১৯

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'জল ধরো জল ভরো' নামে যে কর্মসূচি গ্রহণ করেন, তার মূল বক্তব্য ছিল— যে কোনও উপায়ে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও তার ব্যবহার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য অনুযায়ী এই প্রকল্পে প্রায় ১ লক্ষ ২ হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে। এর জন্য প্রতিটি ব্লকে নির্ধারিত টাকাও বরাদ্দ করা হয়েছিল। তবে তা কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন বিরোধীরা।

১৪ ১৯

অন্য দিকে চেন্নাইয়ে জয়ললিতার আমলে বৃষ্টির জল সংগ্রহ করার জন্য জলাধারের ব্যবস্থা করা হলেও, এখনও সে ভাবে পরিকল্পনা আদৌ বাস্তবায়িত হয়নি। সঠিক পরিকল্পনার অভাবই এর পেছনে দায়ী।

১৫ ১৯

জল সমস্যা মোকাবিলায় ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দিতে সম্প্রতি ‘নল সে জল’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর জন্যও প্রয়োজন বৃষ্টির। মৌসম ভবনের তথ্য অনুযায়ী জুনের শেষ সপ্তাহেও মৌসুমী বায়ু দুর্বল, ফলে প্রকল্প থাকলেও তাতে জল ধরার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি।

১৬ ১৯

পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে নবগঠিত জলশক্তি মন্ত্রকের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। নদী-নালার জল পরিশ্রুত করে পাইপের সাহায্যে সরবরাহ করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের ফলে তাও থমকে রয়েছে।

১৭ ১৯

পরিস্থিতি মোকাবিলায় বারেবারে যে বিষয়টি বিভিন্ন মহল থেকে সামনে উঠে এসেছে তা হল, বিপুল পরিমাণে গাছ লাগানো। ভুমিক্ষয় রোধ করে, বৃষ্টিপাতে সাহায্য করে, ভূগর্ভস্থ জলের ঘাটতি সামাল দিতে পারে গাছই।

১৮ ১৯

সরকারের প্রকল্প তো রয়েছেই, তা ছাড়া নিজেকেও করতে হবে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ। সংরক্ষণের সময় দু’টি জিনিস মাথায় রাখতে হবে। প্রথম পড়া বৃষ্টির জল কিছুতেই সংগ্রহ করবেন না। সংগ্রহ করা বৃষ্টির জল যেন অতি অবশ্যই মাটির ৬০ ফুট নীচ পর্যন্ত পৌঁছয়।

১৯ ১৯

সর্বোপরি নিজে সচেতন হন। অন্যকেও সতর্ক করুন। আগামী প্রজন্মকে এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়ার থেকে বাঁচাতে পারি আমরাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement