প্রতীকী ছবি।
অনেকের চোখেই এটা এক্কেবারে উলটপুরাণ। কেননা হারকে এখানে এক রকম জিত বলে দেখানো হচ্ছে।
মাওবাদীরা দলের কয়েক জন নেতানেত্রীর সাম্প্রতিক আত্মসমর্পণের ঘটনাকে ইতিবাচক ভাবে তুলে ধরে প্রচার শুরু করেছে বলে খবর পেয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এবং সিআরপি-র একটি অংশ। তাঁদের দাবি, ক্যাডার ও সমর্থকদের উদ্দেশে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি আত্মসমর্পণকারী নেতানেত্রীদের সরকার যে-ভাবে গ্রহণ করেছে, প্রকাশ্যে ফুলমালা দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছে, তাতে এটাই ফের প্রমাণিত যে, মাওবাদীরা দুষ্কৃতী বা সন্ত্রাসবাদী নন, তাঁরা বিপ্লবী। এই ধরনের উদ্দীপক কথা বলে ক্যাডারদের আরও পরিশ্রম করার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ও সিআরপি-র তথ্য অনুযায়ী সংগঠন এখন দুর্বল, তার উপরে আর যাতে ভাঙন না-হয় এবং আর কোনও ক্যাডার যাতে দল না-ছাড়েন, সেটা মাথায় রেখে ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার বেশ কিছু তল্লাটে এই ধরনের প্রচার শুরু করেছে মাওবাদীরা। পড়শি রাজ্যের এলাকা হলেও ওই সব জায়গা দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির অধীনে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ২ মে জানিয়েছিলেন, ২০১৭ সালে ১১১ জন এবং তাঁর দু’দফার শাসনকালে এ-পর্যন্ত তিনশোরও বেশি মাওবাদী রাজ্যে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে দুই শতাধিক প্রাক্তন মাওবাদী চাকরি পেয়েছেন স্পেশ্যাল হোমগার্ডের। একই সঙ্গে আত্মসমর্পণকারী সকলেই পেয়েছেন পুনর্বাসনের জন্য সরকারের দেওয়া বিভিন্ন আর্থিক সুযোগ-সুবিধে।
মাওবাদীরা আত্মসমর্পণ করলে সাধারণ ভাবে সেটা সংগঠনের শক্তিক্ষয় এবং সরকারের জয় বলেই গণ্য হয়। সেই আত্মসমর্পণকে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা তো হয়ই, কখনও কখনও বিশ্বাসঘাতকতা বলেও মনে করেন মাওবাদীরা। অথচ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এবং সিআরপি-র একাংশের তথ্য অনুযায়ী মাওবাদীরা এখন প্রচারে বলছে, সরকার কখনও দুষ্কৃতীদের সম্মান জানায় না। ইয়াসিন ভটকলের মতো সন্ত্রাসবাদী, ছোটা রাজনের মতো ডন ধরা না-পড়ে যদি আত্মসমর্পণও করত, তা হলে সরকার তাদের কখনও সংবর্ধনা দিত না। জানুয়ারিতে কলকাতার ভবানী ভবনে সস্ত্রীক রঞ্জিত পালের আত্মসমর্পণ, ফেব্রুয়ারি এবং মে মাসে ঝাড়খণ্ডে যথাক্রমে কানুরাম মুন্ডা এবং কুন্দন পাহানের সাড়ম্বর আত্মসমর্পণের ঘটনা প্রচারে তুলে ধরা হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি। তাঁদের একাংশের ব্যাখ্যা, মাওবাদীদের এই ধরনের প্রচার তাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থারই প্রমাণ।
তবে পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে যুক্ত আছেন, এমন এক জনের মতে, ‘‘এই কৌশলে স্থানীয় ভাবে কোথাও কোথাও হয়তো সাময়িক লাভ হতে পারে। তবে এটা দলের অবস্থান হতে পারে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। এঁদের আত্মসমর্পণ যে সংগঠনকে দুর্বল করেছে, সেটা আগে স্বীকার করে নিতে হবে।’’