—প্রতীকী ছবি।
দেশে প্রতি ১০০ জন স্নাতকের মধ্যে প্রায় ১৩ জন বেকার। সংসদে হলুদ গ্যাস কাণ্ডের পরে যখন বেকারত্বের প্রশ্নে আবহ উত্তপ্ত, তখন খোদ সরকারি সমীক্ষায় উঠে আসা এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর, কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের গত বছরের জুলাই থেকে এ বছর জুন পর্যন্ত করা সমীক্ষা অনুযায়ী, স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৩.৪%। যা তার আগের বছরের ওই সময়ের প্রায় ১৫% (১৪.৯%) থেকে কিছুটা কম। তবে বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, ১০% পেরিয়ে যাওয়া বেকারত্ব উদ্বেগের। দেশে কাজের সুযোগ তৈরি হওয়া নিয়ে বিতর্ককে আরও উস্কে দেবে। বিশেষত লোকসভায় ঢুকে ও সংসদের বাইরে হাঙ্গামায় অভিযুক্তেরা বেকারত্বের হতাশা থেকে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে যখন দাবি করেছে বিরোধী শিবির। অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির অবশ্য পাল্টা জবাব, ভারতে এখন বেকারত্বের হার ৩.২%। ছ’বছরে সব থেকে কম।
লোকসভা ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা অবশ্য বারবার ভারতের দ্রুততম বৃদ্ধির অর্থনীতির দেশ হওয়ার তকমাকে প্রচারের হাতিয়ার করছেন। বলছেন, অর্থনীতির বহরের দ্রুত ৫ লক্ষ কোটি ডলার ছুঁয়ে ফেলার কথাও। তবে এই বিষয়টি নিয়েও রবিবার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনের দাবি, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতীয় অর্থনীতির ৫ লক্ষ কোটি ডলারে পৌঁছনো কার্যত অসম্ভব। অতিমারির আগে থেকে গত চার বছরে বৃদ্ধির হার ছিল ৪%। তা বেড়ে ৬.৫ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে। অর্থনীতির আনুমানিক বহর এখন ৩.৫ লক্ষ কোটি ডলার। অর্থাৎ, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে পৌঁছতে গেলে বৃদ্ধির হার ১২%-১৫% হতে হবে।
এই পরিস্থিতিতেই সামনে এসেছে কেন্দ্রের ‘পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে’ (পিএলএফএস)। ২০২২-২৩ সালের (জুলাই-জুন) সমীক্ষা রিপোর্টে স্নাতকদের কর্মহীনতা নিয়ে চর্চা দানা বাঁধার পরে বিরোধী শিবির মনে করিয়েছে, বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির মসনদে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তাঁর জমানায় বেকারত্ব উল্টে বিপুল বেড়েছে। কাজ না থাকার ছবিটা আরও ভয়ানক হয়েছে খাদ্য-সহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগুন হওয়ায় এবং খরচ সামলাতে গিয়ে বহু ক্ষেত্রে সঞ্চয়ে হাত দিতে হওয়ায়। সম্প্রতি রাজনও বলেন, ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি তার ১৪০ কোটি জনসংখ্যা। কিন্তু তাঁদের অর্থনীতির জন্য ঠিক মতো কাজে লাগাতে হলে সব ক্ষেত্রে চাকরি তৈরি করা জরুরি।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ভোটের বাজারে বেকারত্ব এবং মূল্যবৃদ্ধিই যে তাদের সব থেকে বড় মাথাব্যথা, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে কেন্দ্র। কাজহীন বৃদ্ধি এবং বেড়ে চলা বৈষম্য নিয়ে সতর্কবার্তাও আসছে রাজন, প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু-সহ বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের তরফে।