ত্রিপুরার সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।
নির্বাচনের দেড় বছর আগেই রবিবার ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রসের নির্বাচনী সুর বেঁধে দিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় এখন খুঁটিপুজো হল। আগামী ২০২৩ সালে রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিসর্জন হবে। আগামী ডিসেম্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ত্রিপুরায় সভা করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
এই দফায় এ দিনই ত্রিপুরায় প্রথম বড় সভা করেছে তৃণমূল। আগরতলার সেই সভায় অভিষেক বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল যে সব প্রকল্প চালু করেছে, ক্ষমতায় এলে ত্রিপুরাতেও সেগুলি নেওয়া হবে।’’ রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ করে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ত্রিপুরায় বিজেপি দুয়ারে গুন্ডারাজ এনেছে! ক্ষমতায় এলে তৃণমূল দুয়ারে সরকার পৌঁছে দেবে।’’ বিজেপি-তৃণমূলের সাম্প্রতিক সংঘাতের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘‘আজ যারা অত্যাচার করছে, তারাই সে সময় ‘দুয়ারে সরকার’-এ লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্ম পূরণ করবেন!’’
ত্রিপুরার নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলের এই তৎপরতাকে অবশ্য এ দিনও কটাক্ষ করেছেন দুই রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘ওঁর বিসর্জন কবে হয়, সেটাই দেখুন! আগে ইডি, সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচুন। তার পরে বিজেপির বিসর্জন দেখবেন।’’ ত্রিপুরা বিজেপির মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের ডায়মন্ড হারবার, কোচবিহার থেকে লোক এনেও পাঁচশো জনকে জড়ো করতে পারেননি।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরায় আসার আগে নিজের মুখে কয়লা ধুয়ে আসতে পারতেন!’’ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘বিজেপি তো হাই কোর্টকেও মানে না। তাই কটাক্ষ করে এ সব বলেছে। কোর্টের নির্দেশেই পাঁচশো লোকের বেশি জমায়েত করিনি আমরা।’’
রাজ্যে ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই ত্রিপুরায় সংগঠন বিস্তারে জোর দিয়েছে তৃণমূল। বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে দলের বিপুল জয়ের পরে বিজেপি-বিরোধী লড়াইকে বাংলার বাইরে নিয়ে যাওয়ার এই পরিকল্পনায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন অভিষেকই। ত্রিপুরার আসন্ন পুর-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে দিয়েই সরাসরি লড়াইয়ের মাঠে নামতে চলেছেন তাঁরা। আগরতলার রবীন্দ্র ভবন সংলগ্ন রাস্তায় এ দিনের সভায় সেই বার্তা দিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘তিন মাসের মধ্যে গোয়ায় নির্বাচন। সেখানে বিজেপিকে হঠিয়ে তৃণমূল সরকার গড়বে। তার পরে ত্রিপুরা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিপ্লব দেব (ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী )এখন বিগ ফ্লপ দেব!’’
ত্রিপুরায় তৃণমূলের এই কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপড়েন চলছিল। করোনা আবহে বিধিনিষেধের কথা জানিয়ে প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে এই রকম সভা-সমাবেশ নিয়ে আপত্তি করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত শনিবার হাই কোর্টের নির্দেশে এই সভার আয়োজন করে তৃণমূল। সেই প্রসঙ্গের উল্লেখ করে অভিষেক এ দিন বলেন, ‘‘আমাকে আটকাতে কখনও ১৪৪ ধারা জারি করছে। কখনও করোনার বিধি দেখাচ্ছে। এক জন হাওয়াই চপ্পল পরা মহিলার ভয়ে বিপ্লব দেব কাঁপছেন!’’ সেই সঙ্গে অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘আগের সিপিএম সরকার তুলনায় ভাল ছিল। সে সময় ত্রিপুরার মানুষের অন্তত স্বাধীনতা ছিল। সিপিএমের সময়েও এখানে সভা করেছি। তখন কোনও বাধা আসেনি। এখন সবার উপরে অত্যাচার চলছে।’’
আগরতলার সভামঞ্চে এ দিন তৃণমূলে যোগ দেন মমতা-সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গেই ত্রিপুরার বিজেপি-ত্যাগী বিধায়ক আশিস দাসও আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ত্রিপুরার দলীয় নেতারা ছাড়াও এ দিনের সভায় ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত তৃণমূলের দুই রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব, শান্তনু সেন।