অরবিন্দ কেজরীওয়াল। ছবি: পিটিআই
মহাজোট গঠনের আগেই ভাঙনের ছায়া।
কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি (আপ)-এর মধ্যে রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘাতের আশঙ্কা গোড়া থেকেই ছিল। সমস্যা নিরসনে প্রাথমিক ভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল আপের পক্ষ থেকেও। বলা হয়েছিল, কংগ্রেস যদি দিল্লি ও পঞ্জাব আপ-কে ছেড়ে দেয়, সে ক্ষেত্রে রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি-বিরোধী ভোট ভাগ রুখতে ওই দুই রাজ্যে লড়াইয়ে নামবে না অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল। কিন্তু কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কোনও ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় আজ রাজস্থানের গঙ্গানগর থেকে প্রচার শুরু করে দিলেন কেজরীওয়াল। কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে আপের সভা বানচাল করার অভিযোগ তুলে কেজরীওয়াল বলেন, ‘‘পাঁচ বছর রাজ্যের উন্নয়নে কাজ করলে কংগ্রেসের সমর্থকদের আমার সভা বানচাল করার জন্য ভাঙচুর চালাতে হত না। কিংবা মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতকেও নিজের ছবি দিয়ে ঢাক পেটাতে হত না।’’ আজ রাজস্থানের মাটি থেকে যে ভাবে কেজরীওয়াল সে রাজ্যের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, তাতে আগামী ২৩ জুন পটনায় হতে চলা মহাবৈঠকের আগেই বিরোধী জোটের মধ্যে বিভাজনের ছায়া পড়েছে।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ডাকা বিরোধী জোটের বৈঠকে আগামী শুক্রবার এক মঞ্চে উপস্থিত থাকার কথা কংগ্রেস, তৃণমূল, আপ, জেডিইউ, আরজেডি, ডিএমকের মতো বিজেপি বিরোধী দলগুলির। বৈঠকের মূল লক্ষ্যই হল, আগামী বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী দলগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একজোট হয়ে লড়াইয়ে নামা। কিন্তু গোড়া থেকেই এ নিয়ে আপ ও কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে জটিলতা রয়ে গিয়েছে। দিল্লিতে শীলা দীক্ষিতের সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসা অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে কোনও ভাবেই বাড়তি জায়গা দিতে রাজি নয় কংগ্রেস। এমনকি আমালতন্ত্রের দখল নিয়ে মোদী সরকারের তরফে আসতে চলা সম্ভাব্য বিলের বিরোধিতায় যখন অন্য বিরোধীরা কেজরীওয়ালের পক্ষে, তখন কংগ্রেস তার সমর্থনের বিষয়টি এখনও ঝুলিয়ে রেখেছে।
সামনেই মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। দুই রাজ্যেই ক্ষমতা দখলে ঝাঁপাতে চলেছে কংগ্রেস ও আপ। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী ভোট ভাগাভাগি রুখতে কংগ্রেসের দিকে মৈত্রীর হাত বাড়িয়েছিল আপ। দিন তিনেক আগে আপ সরকারের মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, ‘‘কংগ্রেস যদি দিল্লি ও পঞ্জাব ভুলে যায়, সে ক্ষেত্রে আপ মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে নির্বাচন লড়বে না।’’ আপের দাবি ছিল, ওই রাজ্যগুলিতে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি দ্বৈরথ হলে বিজেপিকে হারানোর সুযোগ তৈরি হবে। আপের সেই প্রস্তাব নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব কোনও উৎসাহ না দেখানোয় আজ মরু-রাজ্যের গঙ্গানগর শহরে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেন কেজরীওয়াল। দেশের অনুন্নয়নের জন্য ওই দুই দলকে দায়ী করে কেজরীওয়াল বলেন, ‘‘গত ৭৫ বছরে ওই দুই দলই কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল। তাই দেশের গরিবি-অনুন্নয়নের জন্য ওই দুই দল দায়ী।’’ বিজেপির তরফে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা রাজেন্দ্র রাঠৌর পাল্টা বলেন, ‘‘ভোটের ঠিক আগে কেজরী এত কথা বলছেন কেন? প্রমাণ থাকলে আগেই তো বলতে পারতেন। রাজস্থানে ওঁর প্রথম জনসভা ফ্লপ।’’ কেজরীওয়াল অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর দল ক্ষমতায় এলে দশ বছরের মধ্যে দেশের দারিদ্র্য দূর করে দেবেন তিনি। দিল্লি ও পঞ্জাবের উন্নয়ন মডেল মেনে রাজস্থানকে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দিল্লি ও পঞ্জাবে আগামী ৫০ বছর আমাদের দল রাজত্ব করবে। রাজস্থানেও আমরা ক্ষমতায় এলে ৫০ বছর রাজত্ব করব। কংগ্রেস সরকার নিয়োগের ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি করেছে, তার পরিবর্তে দুর্নীতিমুক্ত শাসন দেব। চাকরি ও শিক্ষার সুযোগ তৈরি করব। জলের সমস্যা দূর করব।’’
আজ কেজরীওয়াল এই ভাবে কংগ্রেসকে আক্রমণ শানানোয় শুরুর আগেই বিরোধীদের মহাজোটে ফাটলের ইঙ্গিত দেখা দিয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে আপের এই দূরত্ব কমাতে হলে মহাজোটের উদ্যোক্তা নীতীশ কুমারকে যে বাড়তি উদ্যোগী হতে হবে, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। কিন্তু দু’দলের রাজনৈতিক বৈরিতা মিটিয়ে তাদের এক সুরে বেঁধে রাখা সম্ভব কি না, তা নিয়ে রীতিমতো সংশয়ও তৈরি হয়েছে বিরোধী শিবিরে। যে কারণে গোড়াতেই জোটের উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। জটিলতা বাড়ায় স্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। দলের সাংসদ তথা দিল্লির বিজেপি নেতা মনোজ তিওয়ারির কথায়, ‘‘বিরোধী নেতারা সবাই তো প্রধানমন্ত্রী হতে চান। স্বার্থের জোটে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক।’’