উপ-রাজ্যপাল নজীব জঙ্গ
উপ-রাজ্যপাল নজীব জঙ্গের সঙ্গে নতুন করে সংঘাতে নামল আম আদমি পার্টি। আজ বিধানসভার অধিবেশনের শুরুতেই তাঁকে বরখাস্ত করার দাবি ওঠে আপ শিবিরে। যা গত দু’সপ্তাহ ধরে চলা দু’পক্ষের সংঘাতকে এক অন্য মাত্রা দিল।
আজ ও আগামিকাল, দু’দিন দিল্লি বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকেছে অরবিন্দ কেজরীবালের সরকার। কেন এই অধিবেশন, তার ব্যাখ্যা দিতে উপ-রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন কেজরীবাল। দু’পক্ষের প্রায় মিনিট কুড়ি বৈঠকও হয়। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে হাসিমুখে একে অপরকে করমর্দনও করতে দেখা যায়। সকালের সেই সৌজন্যতা পাল্টে যায় বেলা গড়াতেই। বিধানসভার অধিবেশন শুরুতেই। স্পিকারের বক্তব্যের পরেই আপের বিধায়ক আদর্শ শাস্ত্রী উপ-রাজ্যপালকে তাঁর পদ থেকে সরানোর জন্য বিধানসভায় প্রস্তাব আনার পক্ষে সওয়াল করেন। যদিও সেই অনুরোধ খারিজ করে দেন স্পিকার। বিষয়টি ওই বিধায়কের ব্যক্তিগত মতামত এবং এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই বলে ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছেন কেজরীবাল। কিন্তু আজ যে ভাবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর নাতি আদর্শ শাস্ত্রী বিধানসভায় সকলের সামনে ওই প্রস্তাব রেখেছেন তা থেকে একটি বিষয স্পষ্ট যে, ওই পদক্ষেপের পিছনে দলীয় নেতৃত্বের প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে। তা না হলে, আদর্শ শাস্ত্রী কখনই ওই সওয়াল করতে পারতেন না বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন আপ নেতৃত্ব।
দিল্লিতে আমলা নিয়োগের ক্ষেত্রে কার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত তার মীমাংসা গতকাল অনেকটাই করে দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। এ যাবৎ কেন্দ্র বলে আসছিল, দিল্লিতে আমলা নিয়োগের ক্ষেত্রে উপ-রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। যা নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিল কেজরীবাল সরকার। গতকাল দিল্লি হাইকোর্ট উপ-রাজ্যপালের ক্ষমতা অনেকটাই বেঁধে দেওয়ায় নতুন করে অক্সিজেন পান আপ নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রের খবর, তার পরেই ঠিক হয়, কেন্দ্র তথা উপ-রাজ্যপালকে বার্তা দিতেই পরিকল্পিত ভাবে ওই প্রস্তাব আনবেন আদর্শ শাস্ত্রী।
সরকারি নির্দেশিকা জারি করে প্রথমে উপ-রাজ্যপালের পাশে দাঁড়ালেও গতকাল হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ আসার পর থেকেই অস্বস্তিতে ভুগছে কেন্দ্র। পরবর্তী শুনানিতে সরকারের জবাব ঠিক করতে যোগাযোগ করা হয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেল অব ইন্ডিয়া মুকুল রোহতগির সঙ্গেও। বিধানসভায় আনা প্রস্তাব প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক শুধু জানিয়েছে, উপ-রাজ্যপালকে যেমন নিয়োগ করার অধিকার দিল্লি সরকারের নেই, তেমন অপছন্দ হলে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও নেই তাদের। কোনও উপ-রাজ্যপালকে সরানো হবে কি না, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কেন্দ্রই নিয়ে থাকে।
দিল্লি সরকার ও উপ-রাজ্যপালের মধ্যে নতুন করে তিক্ততা শুরু হওয়ার আগে সকালে কেজরীবাল নজীব জঙ্গের সঙ্গে দেখা করে কেন ওই বিধানসভা অধিবেশন তিনি ডাকতে বাধ্য হয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করেন। কাল দিল্লি হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে বুঝিয়ে দিয়েছে, দিল্লি সরকারের দুর্নীতি দমন শাখা দুর্নীতি রুখতে প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারিদেরও গ্রেফতার করতে পারে। আদালতের সেই পর্যবেক্ষণ নিয়েও আজ আলোচনা হয় উভয় পক্ষের।