Delhi Election Results 2025

নিজেরা শূন্য হয়েও কেজরী, সিসৌদিয়ার যাত্রাভঙ্গ করল কংগ্রেস! কান ঘেঁষে রক্ষা পেয়ে গেলেন শুধু আতিশী

দিল্লি ভোটে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে ফাটলের সুফল পেল বিজেপি। আম আদমি পার্টি (আপ) ক্ষমতাচ্যুত তো হলই, জিততে পারলেন না অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং মণীশ সিসৌদিয়াও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৫
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

দিল্লির ভোটে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে ফাটলের সুফল পেল বিজেপি। আম আদমি পার্টি (আপ) ক্ষমতাচ্যুত তো হলই, জিততে পারলেন না অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং মণীশ সিসৌদিয়াও। নির্বাচনের ফলাফলে পরিষ্কার, কংগ্রেসের সঙ্গে ভোট কাটাকাটিতেই হারতে হয়েছে দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেজরী এবং প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশকে। কোনও ক্রমে রক্ষা পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনা।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতে কংগ্রেস এবং আপের আসনরফা হলেও দিল্লি ভোটে যে তা হবে না, আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন কেজরী। সেই মতো কংগ্রেসও কেজরীর বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে নেমেছিল। তারই খেসারত দিতে হল দুই দলকে! এ বারও কংগ্রেস শূন্য। শুধু তা-ই নয়, নিজেরা শূন্য হয়ে কেজরী এবং মণীশেরও যাত্রাভঙ্গ করেছে কংগ্রেস।

নয়াদিল্লি আসনে বিজেপির প্রবেশ সাহিব সিংহের কাছে হারতে হয়েছে কেজরীকে। কেজরী হেরেছেন ৪,০৮৯ ভোটে। ওই আসনে কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের পুত্র সন্দীপ দীক্ষিতকে। তিনি পেয়েছেন ৪,২৫৪ ভোট। ফলাফলেই স্পষ্ট যে, সন্দীপ ভোট কাটায় হেরেছেন কেজরী। জঙ্গপুরা আসনে ৬৭৫ ভোটে বিজেপির তরবিন্দর সিংহের কাছে হেরেছেন মণীশ। ওই আসনে কংগ্রেস প্রার্থী ফরহাদ সুরি পেয়েছেন ৭,৩৫০ ভোট। এখানেও ছবি খুব স্পষ্ট।

Advertisement

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

কেজরী, মণীশ হারলেও ‘মুখরক্ষা’ করেছেন আতিশী। কালকাজি আসনে বিজেপির রমেশ বিদুরিকে ৩,৫২১ ভোটে হারিয়েছেন তিনি। ওই আসনে কংগ্রেস প্রার্থী অলকা লাম্বা পেয়েছেন ৪,৩৯২ ভোট। ফলাফলে স্পষ্ট, আতিশীও কান ঘেঁষে বেরিয়েছেন! ভোটগণনা শুরু হওয়ার পর প্রথম কয়েকটি রাউন্ডে পিছিয়েই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শেষের কয়েকটি রাউন্ডে বড় ‘লিড’ পেয়ে জিতে যান তিনি।

গত লোকসভা ভোটের পর থেকে ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করেছিল। দিল্লি ভোটে সেই ফাটল আরও স্পষ্ট হয়। কেজরী একা লড়ার কথা জানিয়ে দিতেই তাঁর বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে পড়েছিল কংগ্রেস। দিল্লির কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন কেজরীওয়ালকে ‘ফর্জীওয়াল’ বলেও মন্তব্য করেন। এ-ও বলেন, ২০১৩ সালে আপকে সমর্থন করা দিল্লিতে কংগ্রেসের পতনের সবচেয়ে বড় কারণ। সেই আবহে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল। উত্তরপ্রদেশে উপনির্বাচন ঘিরে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গেও কংগ্রেসের দূরত্ব বেড়েছিল। ফলত দিল্লির ভোটে অখিলেশের দল কেজরীকে সমর্থন করেছিল। কেজরী-অখিলেশ রোড শো-ও করেছিলেন রাজধানীতে।

শনিবার ভোটের ফলাফল প্রকাশ্যে আসার পর অনেকে বলছেন, লোকসভা ভোটের মতো বিধানসভা ভোটেও কংগ্রেস-আপ জোট করে এগোলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হত না দিল্লিতে। শুধু কেজরী বা মণীশই নন, বেশ কয়েকটি আসনে কংগ্রেসের সঙ্গে ভোট কাটাকাটিতে হারতে হয়েছে আপকে। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী তথা ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদল ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লা তো বলেই দিয়েছেন, ‘‘আরও লড়ুন নিজেদের মধ্যে!’’

দিল্লি ভোটে আবার প্রশ্নের মুখে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের ভবিষ্যৎ। জাতীয় রাজনীতির কারবারিদের একাংশের বক্তব্য, দলের এবং নিজের হারে কেজরী স্বাভাবিক ভাবেই দুষবেন কংগ্রেসকে। দিল্লি ভোটের আবহে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তিনি ‘ভাষ্য’ তৈরি করতে চাইছিলেন। ভোটের ফলাফলেও তা-ই প্রতিষ্ঠিত হল। এতে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের ভিতরে কংগ্রেস-বিরোধী গোষ্ঠী শক্তিশালী হবে। যে গোষ্ঠীতে বঙ্গের শাসকদল তৃণমূলও রয়েছে। তবে পাল্টা অভিমতও রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এতে দীর্ঘমেয়াদে কংগ্রেসের হাত শক্ত হবে। আপ বরাবরই কংগ্রেসের বিরোধী। লোকসভা নির্বাচনে নিজেদের দ্বন্দ্ব সাময়িক ভাবে দূরে সরালেও তার স্থায়িত্ব যে বেশি দিন নয়, তা ভোট শেষ হতে না-হতেই বোঝা গিয়েছিল। দিল্লিতে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় যে হেতু আপের দাপট খানিক কমবে, তাতে ‘ইন্ডিয়া’র অন্দরে আখেরে কংগ্রেসই লাভবান হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement