ফাইল চিত্র।
দিল্লি বিধানসভা দখলের লড়াই কঠিন ছিলই। পার্শ্ববর্তী রাজ্য হরিয়ানার ফল চিন্তা বাড়িয়ে দিল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের। আগামী ছ’মাসের মধ্যে দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন। লোকসভায় দিল্লির সাতটি আসনে জিতলেও, হরিয়ানার ফলাফলের পর বিধানসভায় আম আদমি পার্টিকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব।
ক’দিন আগেই দিল্লির একাধিক বস্তিকে সরকারি কলোনির মর্যাদা দিয়েছে কেন্দ্র। যার ফলে উপকৃত হবেন প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ। কিন্তু ভোটে তার ফায়দা কতটা উঠবে, এখন তা-ও ভাবছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁরা ভেবেছিলেন, লোকসভার মতোই জাতীয়তাবাদের প্রচার করে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাবে হরিয়ানা-মহারাষ্ট্রে। কিন্তু দু’রাজ্যের ফলাফল থেকে স্পষ্ট, আর্থিক মন্দার প্রভাবে লক্ষ-লক্ষ মানুষের চাকরি হারানোর বিষয়টি বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়। বিজেপি নেতাদেরই বিশ্লেষণ, শহরের ভোট তাদের পক্ষে থাকলেও, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার গ্রাম বুঝিয়ে দিয়েছে মানুষের সমর্থন হারাতে শুরু করেছে দল। যার বড় কারণ, আর্থিক সঙ্কটে চাকরি হারানো ও গ্রামীণ ভারতের আয় কমে যাওয়া।
কিন্তু দিল্লির মতো শহরেও কি তার প্রভাব পড়বে? আপ নেতৃত্ব বলছেন, বিজেপি লোকসভায় ৩০০-র বেশি আসন পেলেও তাদের যে ধাক্কা দেওয়া সম্ভব, তা দুই রাজ্যের ফল থেকেই তা স্পষ্ট। মোদী সরকারের ছ’বছরের শাসনে সরকারি চাকরি শুধু নয়, বেসরকারি চাকরির বাজারও যে ছোট হয়ে আসছে, তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে মানুষের কাছে। সময়ের আগে অবসর নেওয়ার নীতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে সরকারি কর্মীমহলে। সুদ কমছে স্বল্প সঞ্চয়ে। যা প্রভাব ফেলেছে বর্ষীয়ান নাগরিকদের উপরে। আপের দাবি, বিজেপি সরকারের পাশ থেকে সরছেন উচ্চবিত্তেরাও।
বরাবরই আপের ভোটব্যাঙ্ক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। তাদের কথা মাথায় রেখে গত পাঁচ বছরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে ঢেলে সাজিয়েছেন অরবিন্দ কেজরীবাল। সরকারি হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোগত উন্নতির পাশাপাশি দিল্লিতে অত্যাধুনিক তিনটি হাসপাতাল তৈরি করেছে আপ সরকার। পাড়ায়-পাড়ায় নিখরচায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ওষুধ বিতরণের জন্য খোলা হয়েছে মহল্লা ক্লিনিক।
সরকারি স্কুলগুলির সার্বিক উন্নয়ন ঘটানোয় দেশের মধ্যে দিল্লিতেই বেসরকারি স্কুল ভর্তির হার আগের চেয়ে কমে গিয়েছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণিও এখন ঝুঁকেছে সরকারি স্কুলের দিকে। বিনা মূল্যে জলের পাশাপাশি মাসুল কমানো হয়েছে বিদ্যুতের। আপের এক নেতার কথায়, ‘‘এই সব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন সব শ্রেণির মানুষ। দিল্লিকে ঘিরে থাকা উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানায় বিজেপি শাসিত রাজ্যের তুলনায় দিল্লিবাসীর কতটা সাশ্রয় হচ্ছে তা সকলেই বুঝতে পারছেন। বিজেপি এলে জনহিতে নেওয়া পদক্ষেপ যে প্রত্যাহার হবে সেই আশঙ্কা রয়েছে উচ্চবিত্তদেরও।’’
আপ শিবিরের দাবি, বিজেপির উপরে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী শ্রেণিও। বেআইনি নির্মাণের অভিযোগে দিল্লির বিজেপি শাসিত পুরসভায় বাজার বন্ধ করে দেওয়া, তার উপরে নোট বাতিল-জিএসটির কোপে ব্যবসায়ী শ্রেণি এখনও বিজেপির উপরে ক্ষুব্ধ।
সেই ক্ষোভকে কাজে লাগাতে সক্রিয় আপ নেতৃত্ব।