কথায়, গল্পে এবং আলোচনায় শুরু হয়েছিল অনুষ্ঠান। বক্তব্য রাখতে গিয়ে নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় স্মরণ করলেন প্রখ্যাত কবি ও নাট্যকারদের।
kolkata bookfair

কথায় গল্পে, নাটক ও কবিতার মিশেলে এক অভাবনীয় সন্ধ্যার সাক্ষী রইল বইমেলার জনতা

কথায়, গল্পে এবং আলোচনায় শুরু হয়েছিল অনুষ্ঠান। বক্তব্য রাখতে গিয়ে নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় স্মরণ করলেন প্রখ্যাত কবি ও নাট্যকারদের।

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ ১৭:৩৭
Share:

নানা রঙে, নানা ছবিতে, সাদা-কালো হরফ, বইয়ের গন্ধে সেজে উঠেছে ৪৫ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। বইমেলার সন্ধেকে আরও একটু রঙিন করতে ৫ মার্চ, শনিবার বইমেলা প্রাঙ্গনেই আয়োজন করা হয়েছিল অপূর্ব একটি নাট্যসন্ধ্যার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় এবং শেখর সমাদ্দার। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সৌমিত্র মিত্র। শ্রী সিমেন্টের সহযোগিতায় প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন এবং পূর্ব পশ্চিমের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই আয়োজন বইমেলার ভিড়ের মধ্যেও সকলের নজর কেড়েছিল। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল আনন্দবাজার ডিজিটাল।

কথায়, গল্পে এবং আলোচনায় শুরু হয়েছিল অনুষ্ঠান। বক্তব্য রাখতে গিয়ে নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় স্মরণ করলেন প্রখ্যাত কবি ও নাট্যকারদের। তিনি জানালেন, “নাটক আসলে কবিতারই রূপান্তর। লেখকের মনের ভাব ফুটে ওঠে সেই নাটকে। আমাদের চারপাশে যা ঘটছে, সেই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট, লেখকের ভাবনা, ফুটে ওঠে কলমের ছোঁয়ায়। আর নাটকের কথা উঠলেই মনে পড়ে যায় কিংবদন্তি উইলিয়াম শেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা মাইকেল মধুসূদন দত্তের কথা। যাঁরা একাধারে ছিলেন দক্ষ কবি, অন্যদিকে নাট্যকার। যাঁদের হাত ধরেই নাটকের যুগ থেকে যুগান্তরের রাস্তা আরও মসৃণ হয়েছে।” পাশাপাশি তিনি অতিথি শেখর সমাদ্দারের নাট্যরচনা ‘তীর্থযাত্রা’র কথাও তুলে ধরলেন আলোচনায়। যাঁর নাটক যেন কাব্যিক সারমর্মে পরিপূর্ণ অপরূপ সৃষ্টি।

অন্যদিকে শেখর সমাদ্দার জানালেন যে তাঁর কাছে ভাব-প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে কবিতার গুরুত্ব অনেক বেশি। নাটকের তুলনায় কোনও কবিতার মাধ্যমে কবির ভাবনার গুঢ় অর্থ সহজেই প্রকাশ করা যায়। শেখর সমাদ্দার তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরলেন তাঁর নিজের ছাত্রজীবনের কথা। শঙ্খ ঘোষের হাত ধরেই তাঁর কবিতায় দীক্ষা। উল্লেখ করলেন তালিমের কথা। এমন গুরুর সান্নিধ্য পেয়ে সত্যিই ধন্য তিনি। গুরুর প্রতি সম্মান জানিয়ে শেখর সমাদ্দারের লেখা ছ’টি গদ্যের সংকলন খুব শীঘ্রই পাওয়া যাবে দেজ পাবলিশিং হাউজে। অভিনয়, কবিতা, নাট্যরচনা — সাহিত্য জগতে তাঁর কর্মকান্ডের বিস্তৃতি এক কথায় অভাবনীয়। পাশাপাশি তিনি জানালেন তাঁর পরবর্তী পরিকল্পনার কথা। সমসাময়িক নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকার ব্রাত্য বসু ও বিভাস চক্রবর্তীর সহায়তায় একটি নাটকের গল্পের উপরে তাঁর কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। একটি থিয়েটার গ্রুপ এবং কিছু শিল্পীদের সঙ্গে তিনি যুক্তও রয়েছেন।

শুধু আলোচনাই নয়, নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের শিল্প নির্দশনও পাওয়া গেল বইমেলার মঞ্চে। প্রাচীন কাব্য মনসা মঙ্গল এবং চন্ডী মঙ্গল মঞ্চস্থ করলেন তিনি। অবশ্যই নিজ আঙ্গিকে। বরাবরই কোনও প্রাচীন গল্প বা আত্মজীবনী নিজ আঙ্গিকে উপস্থাপনা করায় নিপুণ উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তাঁর হাতেই যেন অন্য রূপে ফুটে উঠেছে গিরিশ চন্দ্র ঘোষ, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির গল্পকথা।

কোনও শিল্পীর আসল পরিচয় হল তাঁর রচনা। শিল্পী সেই রচনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন নিজের ভাব। উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় তার প্রতিটি গল্প, কাব্য, উপন্যাস, নাট্যরচনা বা মজার গল্পে তাঁর নিজস্বতা ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি এমনই এক মঞ্চস্থ হওয়া নাটকের কথা জানালেন — ‘এক মঞ্চ, এক জীবন’। যে নাটক দেখে তিনি অঝোরে কেঁদেছিলেন। যে নাটকটি ৭৯ বার দেখার পরেও তাঁর কাছে প্রতিবার যেন নতুন মনে হয়েছিল। উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি তাঁর নিজস্ব রচনার মূল্যায়নের পাশাপাশি সমালোচনাও গ্রহণ করতে সক্ষম। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্যে উঠে এল এমন কয়েকজন নাট্যকারের নাম যাঁরা সফলভাবে নাটকের চরিত্রগুলিকে মঞ্চে জীবন্ত করে তুলেছেন। তিনি নিজেও স্বীকার করলেন নাটকের প্রতি তাঁর প্রেমের কথা এবং সেগুলিকে মঞ্চস্থ করার জন্য কোনও পরিচালক বন্ধুর প্রয়োজনীয়তার কথা।

অপর প্রান্তে, প্রাচীন নাট্যরচনাগুলিকে পুনর্গঠন করা এবং নতুন আঙ্গিকে সেগুলিকে উপস্থাপন করার প্রতি যে ভালবাসা, তা প্রকাশ পেয়েছে শেখর সমাদ্দারের বক্তব্যে। এই প্রসঙ্গ টেনেই তিনি উল্লেখ করলেন ‘চিড়িয়াখানা’ গল্পেরই সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে তৈরি করা ‘ব্যোমকেশ কলোনি’র কথা। শেখর সমাদ্দারের ব্যোমকেশ প্রীতির কথা হয়তো অনেকেই জানেন। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন এবং ওয়েব সিরিজে উপস্থাপিত ব্যোমকেশ বক্সিকে নিয়ে তিনি গভীরভাবে গবেষণা করেছেন। তাঁর এই নতুন উদ্যোগ 'ব্যোমকেশ কলোনি'তে বর্তমান সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপটের চিত্রায়ন করা হয়েছে। শেখর সমাদ্দার ব্যাখ্যা করেছেন যে কী ভাবে একজন নাট্যকারের মননে কোনও ধারণা আসে এবং সেই ধারণা থেকে গল্পকার একটি গল্পের বুনোট বাঁধেন।

পাশাপাশি অনুষ্ঠানে অনুপ বন্দোপাধ্যায় শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান শঙ্খ ঘোষ। উন্মোচন করেন ‘আলাপে উদ্ধৃতিতে শঙ্খ ঘোষ’।

অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অনিন্দিতা চট্টোপাধ্যায় জানালেন, “অতিমারির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আখর যাত্রা শুরু করেছিল। সাহিত্যপ্রেমীদের জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ শুরু করেছিলাম। প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগকে সফল করতে বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের আন্তরিক সমর্থনে আমরা অভিভূত। বিশেষ করে কলকাতা বইমেলায় এই অধিবেশনের আয়োজন করতে পেরে আমরা আপ্লুত।”

এই প্রতিবেদনটি প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন