প্রতীকী ছবি।
আধার, ভারতের অন্যতম প্রধান বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র প্রকল্প। ২০০৯-এ এর কাজ শুরু হয়। এক জন ভারতীয়ের পরিচয়ের সমস্ত তথ্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে এক জায়গায় নথিবদ্ধ করে রাখাই হল ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন বা আধার। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের জমানায় আধারের কাজ শুরু হয়। আজ এই আধারই সারা বিশ্বকে উজ্জীবিত করেছে। এই প্রকল্পের প্রশংসায় পঞ্চমুখ খোদ বিশ্ব ব্যাঙ্ক।
বিশ্বকে নতুন পথের দিশা দেখাচ্ছে আধার। একে ওয়েব জগতের নতুন সদস্য বলা হলে অত্যুক্তি হবে না বোধ হয়। ১১০ কোটির এই সুবিশাল প্ল্যাটফর্মকে ইতিমধ্যেই নতুন ওয়েব বলতে শুরু করেছেন অনেকে।
ভারতের যে কোনও প্রান্তে এক জন নাগরিকের পরিচয় জানার সেরা ঠিকানা এই আধার। ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে পেনশন, চাকরি— এখন সব কিছুই এই আধারের আওতায়।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ পল রোমার বলেন, “ভারতে এই আধুনিকতম পদ্ধতি দেখেছি। আমাদের মনে হয়েছে এটা খুবই কার্যকরী। বিশেষ করে সব রকম যোগাযোগ এবং লেনদেনের জন্য। সারা বিশ্ব যদি এই পদ্ধতিকে গ্রহণ করে তা হলে খুবই উপকৃত হবে।”
আরও পড়ুন: দেশের ৬০ শতাংশ ইঞ্জিনিয়ার বেকার, বলছে সমীক্ষা
পল আরও জানান, ভারতের এই পদ্ধতিকে পাথেয় করে যদি স্ট্যান্ডার্ড বিশ্বজনীন পরিচয়পত্র তৈরি করা যায়, তা হলে এক জন ব্যক্তি বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে প্রমাণস্বরূপ তা ব্যবহার করতে পারবেন।
স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলোতে পরিচয়ের মাহাত্ম্য অনেক বেশি। অথচ বিশ্বের ১৫০ কোটি মানুষের কাছে সেই পরিচয়পত্রটুকুই নেই! তাই ২০৩০-এর মধ্যে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের বৈধ পরিচয়পত্র তৈরির লক্ষ্যে নেমেছে ইউনাইটেড নেশনস সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল।
ভারতের ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন প্রকল্পের প্রতি ইতিমধ্যেই আগ্রহ দেখিয়েছে রাশিয়া, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, মরক্কো, আলজিরিয়া এবং তিউনিশিয়ার মতো দেশগুলি।
২০১৬-র ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টে বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে তুলে ধরতে, তথ্য সংক্রান্ত সমস্যা দূর করতে ভারতের আধারের মতো ডিজিটাল পরিচয়পত্র অবশ্যই জরুরি।
ভারতের মতো ১১০ কোটি মানুষের দেশে প্রমাণপত্র হিসাবে বিভিন্ন নথি প্রয়োজন পড়ত। আধার আসার পর সেই সমস্যা অনেকটাই দূর হয়েছে। আজ দেশের ৯৯ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষের ডিজিটাল পরিচয়পত্র রয়েছে, যাঁদের ৮৪টি সরকারি পরিষেবার আওতায় আনা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আগামী দিনে খাদ্য সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাকেও আধারের আওতায় আনা হবে বলে জানা গিয়েছে। একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, এই আধার ব্যবস্থার কারণেই মোদী সরকারের বছরে ২০০ কোটি ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। ২০১৮-তে আশা করা হচ্ছে, তা বেড়ে দাঁড়াবে ৭০০ কোটি ডলারে।
আধারে তথ্যের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।এমনকী ক্ষমতায় আসার আগে মোদীও আধারের বিরোধিতা করেছিলেন। বলেছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তাকে লঙ্ঘন করবে তো বটেই, পাশাপাশি, নাগরিকদের গোপন নথির নিরাপত্তাও আর থাকবে না। কিন্তু এখন এই আধারই তাঁর কাছে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার।