রূপান্তরকামী সুরক্ষা আইনের নির্দেশিকায় (২০২০) স্পষ্ট উল্লেখ সত্ত্বেও পাসপোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্রে তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। প্রতীকী চিত্র।
দেশের আইন বলছে এক রকম, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেশেরই বিধিতে আটকে যাচ্ছে কাজ। আইন বলছে, নিজের আগের যে-কোনও প্রধান পরিচয়পত্রে নাম, ছবি ও লিঙ্গপরিচয় পাল্টানোর ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী কার্ড বা শংসাপত্র থাকাটাই যথেষ্ট। কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী সুরক্ষা আইনের নির্দেশিকায় (২০২০) এর স্পষ্ট উল্লেখ সত্ত্বেও পাসপোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
অনুপ্রভা দাস মজুমদার নামে এক রূপান্তরকামী নারী তথা সমাজকর্মী নিজের আগের নাম বদলে রূপান্তরকামী পরিচয়ে পাসপোর্ট করাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রান্স বা রূপান্তরকামী শংসাপত্র দেখিয়েও তাঁর সেই কাজটুকু হয়নি। কেন? পূর্বাঞ্চলীয় পাসপোর্ট আধিকারিক আশিস মিদ্যা বলেন, “দু’টি খবরের কাগজে বিজ্ঞপ্তি না-দিলে পাসপোর্টে নাম বদল সম্ভব নয়। পুরুষ, নারী বা রূপান্তরকামী— সকলের জন্যই এটাই নিয়ম।”
অনুপ্রভার প্রশ্ন, “ট্রান্স শংসাপত্রের আবেদনের সময় তো হলফনামা দিয়ে নিজের পছন্দের নাম এবং ট্রান্সজেন্ডার লিঙ্গপরিচয়ের কথা বলেছিলাম। এ বার কি বিভিন্ন ব্যক্তিগত নথি বা পরিচিতি জোগাড়ের জন্য বার বার হলফনামা বা বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে? পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ট্রান্স সুরক্ষা আইন মানা হবে না কেন?” তাঁর বক্তব্য, হেনস্থা এড়িয়ে নিজের পরিচয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতেই রূপান্তরকামীদের জন্য দেশে ট্রান্স শংসাপত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে ১২ হাজারেরও বেশি শংসাপত্র নথিভুক্তও হয়েছে অনলাইন ব্যবস্থায়। তবে জনসংখ্যা বিশারদেরা মনে করেন, ছকে বাঁধা পুরুষ বা নারী পরিচয়ের বাইরে রূপান্তরকামীরা দেশের জনসংখ্যার ১০-২০ শতাংশ। শংসাপত্র থাকলেও এত দিন আধার কার্ড পেতে অনেকে সমস্যায় পড়েছেন। পরে অবশ্য আধার কর্তৃপক্ষ জানান, আইন বদলেছে। ট্রান্স শংসাপত্র থাকলেই আধার পাওয়া যাবে। কিন্তু শিক্ষা সংক্রান্ত নথি জোগাড়েও জটিলতার আশঙ্কা করছেন রূপান্তরকামীরা অনেকে।
কেন্দ্রের রূপান্তরকামী আইনের নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই সব মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে। ট্রান্স শংসাপত্র তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল ডিফেন্সের তরফে বলা হচ্ছে, এই শংসাপত্রের বিষয়ে ক্রমশ সরকারি স্তরে সচেতনতা বাড়ছে। ওই দফতরের তরফে এমন দাবি করলেও এই সব বিষয়ে নির্দেশ আদানপ্রদানের কাজটা যে যথেষ্ট দ্রুত লয়ে হচ্ছে না, অনুপ্রভাদের মতো ভুক্তভোগীরাই তার প্রমাণ। “রূপান্তরকামীদের অধিকারের লড়াইটা বুঝতে পারছি। তবে উপরতলার নির্দেশ না-এলে পাসপোর্টের বিষয়ে নিয়ম পাল্টানো মুশকিল,” বললেন পূর্বাঞ্চলীয় পাসপোর্ট আধিকারিক আশিস।