গোটা দেশ মুগ্ধ এই ছবি দেখে। ছবি- ফেসবুক
স্বাধীনতা দিবসে একটা ছবি গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিল!
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখন লালকেল্লায় তাঁর ভাষণে মঙ্গলযান, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, নোটবন্দির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করছেন। ঠিক কাছাকাছি সময়ে, এ দেশেরই প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি স্কুলে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পতাকা তোলা হচ্ছিল। এই দৃশ্য লালকেল্লার জাঁকজমক, কুচকাওয়াজ, প্রদর্শনী— কোনও কিছু থেকেই পিছিয়ে ছিল না। বরং বেশ কয়েক কদম এগিয়েই ছিল। যা শিহরিত করল গোটা দেশকে। আবেগে ভাসলেন দেশের মানুষ!
আরও পড়ুন- স্বাধীনতার সকালে পাওয়া দু’টি বিস্কুটই ছিল নিজের অর্জন
কী সেই দৃশ্য?
খালি গায়ে, গলা-জলে দাঁড়িয়ে ছাত্ররা। আর কোমর জলে প্রধান শিক্ষক। সকলে মিলে স্বাধীনতা দিবসের সকালে পতাকা তুললেন। গোটা স্কুল ভেসে গিয়েছে জলে। কিন্তু, স্বাধীনতা দিবস বলে কথা! তাই ডোবা-জলেই তোলা হল পতাকা। এই দৃশ্য গর্বিত করল গোটা দেশকে। মুহূর্তেই ভাইরাল হল সেই ছবি।
ঘটনাটা ঠিক কী?
অসমের ধুবুড়ির ফকিরগঞ্জ থানার নস্করা প্রাথমিক বিদ্যালয়। দু’কিলোমিটার দূরে ব্রহ্মপুত্র। সাম্প্রতিক বন্যায় তার জল ভাসিয়ে দিয়েছে এলাকার একাধিক গ্রাম। রেহাই পায়নি ওই স্কুলটিও। ভেসে গিয়েছে ক্লাসরুম। বেশ কয়েক দিন ধরেই স্কুল ছুটি। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, বন্যা কবলিত স্কুলগুলিতে স্বাধীনতা দিবস পালন করতে বারণই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।
আরও পড়ুন- ভালবাসার জোরেই কাশ্মীরিদের মন জিততে হবে: নরেন্দ্র মোদী
কিন্তু, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাজেম শিকদার একটু উল্টো পথেই হেঁটেছেন এ দিন। প্রতি বছরের মতো এ বারও স্বাধীনতা দিবস পালন করার অঙ্গীকার নিয়ে স্কুল রওনা দিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন আরও তিন সহ শিক্ষককে। মিজানুর রহমান, নৃপেন রাভা এবং জয়দেব রায়কে নিয়ে প্রধান শিক্ষক যখন স্কুলে ঢুকলেন, জল থৈ থৈ করছে ক্লাসরুম থেকে স্কুল চত্বর। কী ভাবে উদযাপন করবেন স্বাধীনতা দিবস? ভেবে যখন কূল কিনারা পাচ্ছেন না, সে সময় ওই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির দুই ছাত্র জিয়ারুল আলি খান এবং হায়দর আলি খান চলে আসে।
কোমর জলেই তাঁরা পতাকা তুললেন। স্কুলের ছাদ ছাড়িয়ে যেন আকাশ ছুঁয়েছে সেই তেরঙ্গা। খালি গায়ে ছাত্র আর কোমরে জামার গিঁট বেঁধে প্রধান শিক্ষক স্যালুট জানালেন সেই তেরঙ্গাকে। আর সেই ছবি ক্যামেরা বন্দি করলেন শিক্ষক মিজানুর রহমান। ফেসবুকে পোস্টও করলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি পোস্ট হওয়ার পর রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এলাকায় বিদ্যুত্ নেই। ইন্টারনেটের অবস্থাও বেশ খারাপ। আমাদের স্কুলে যে ভাবে দিনটি পালিত হয়েছে, সেটা বন্ধুদের জানাতেই ওই ছবি অনেক কষ্টে পোস্ট করেছিলাম। কিন্তু, সেটা যে এ ভাবে ভাইরাল হয়ে যাবে ভাবিনি।’’
শিক্ষকদের এই পদক্ষেপকে স্যালুট জানায় গোটা দেশ। বন্যার জলে নয় গোটা দেশের আবেগেই ভেসে গিয়েছে নস্করা প্রাথমিক বিদ্যালয়।