সংসদে রাহুল গাঁধী। —ফাইল চিত্র
সংসদের অধিবেশন শুরুর দু’দিন আগেই বিদেশ থেকে ফিরেছেন রাহুল গাঁধী। শাসক শিবিরের চাপে কংগ্রেসকে শেষ পর্যন্ত জানাতেই হল, রাহুল ইটালি থেকে ফিরেছেন। আর বিমানবন্দরে করোনা সংক্রমণের পরীক্ষাও হয়েছে তাঁর।
ঘন ঘনই বিদেশ যান রাহুল গাঁধী। আগেও যেতেন। লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে ইস্তফার পর এর মাত্রা আরও বেড়েছে। অথচ কংগ্রেসের ‘নবীন’ ব্রিগেডের একটি অংশ এখনও মনেপ্রাণে চাইছে, কংগ্রেসের সভাপতির পদে এ বারে ফিরে আসুন রাহুল।
গত শুক্রবারের কথা। লোকসভা মুলতুবি হয়েছে। সংসদে আসেননি সনিয়া গাঁধী। রাহুলকে ঘিরে শশী তারুর, মণীশ তিওয়ারি, কেরলের সাংসদেরা। যাঁরা এখন রাহুলেরই অনুগামী। রাহুলকে সামনে পেয়ে একযোগে আবদার করে বসলেন, ‘‘ফিরে আসুন। আপনাকে চাই।’’ দু’দিন আগে দিল্লির নেতা অজয় মাকেনও একই দাবি করেছেন। রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ‘‘নেপথ্যে থেকে দল এখন রাহুল গাঁধীই চালাচ্ছেন। তিনিই দলের পরবর্তী সভাপতি। ঘোষণা শীঘ্রই হবে।’’
কিন্তু যে নেতা এত ঘন ঘন বিদেশে যান, তিনি দল সামলাবেন কী করে? প্রশ্নটি করতেই রাহুল ব্রিগেডের এক নেতা ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘‘রাহুল দেশে থাকুন কিংবা বিদেশে, ইস্তফা দেওয়ার সময় তিনি যে সব বিষয় উত্থাপন করেছেন, সেগুলির সমাধান হয়েছে? দলের অনেক নেতার সঙ্গে রাহুলের মত মিলছে না। ইস্তফা দেওয়ার সময় রাহুল চেয়েছিলেন, বাকিরাও পদ ছাড়ুন। যাতে দলকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে পারেন। এক জনও ইস্তফা দিয়েছেন?’’
প্রশ্ন হল, সনিয়াও তো রাহুলের ইচ্ছে অনুযায়ী কাউকে ইস্তফা দিতে বলেননি। প্রবীণদের অনেকেই ক্ষমতাকেন্দ্রের আশপাশে ঘুরছেন। ঘনিষ্ঠ মহলে আহমেদ পটেল বলেছেন, এখনই দলে নতুন কোনও সভাপতি হওয়ার কথা নেই। কোনও প্লেনারি অধিবেশন ডাকারও পরিকল্পনা নেই। আনন্দ শর্মা ঘরোয়া মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘প্রবীণ বলে কি আমাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো হবে? আমাদের ছাড়া দল চলবে?’’ অতএব? নবীনেরা কী করবেন? রাহুল-ঘনিষ্ঠ এক নেতার যুক্তি, ‘‘রাহুলের ফিরে আসা যাঁদের পছন্দ নয়, তাঁরা অবসর নিতে পারেন।’’ কিন্তু সনিয়া গাঁধী কেন তাঁদের সরাচ্ছেন না? জবাব: ‘‘রাহুল এসে নিজের টিম তৈরি করবেন, সেই অপেক্ষায় আছেন।’’
রাহুল নিজে কী বলছেন? সম্প্রতি সংসদ চত্বরে তিনি একাধিক বার বলেছেন, ‘‘আমি ফিরছি না।’’ গত শুক্রবারও যখন সাংসদেরা তাঁকে ঘিরে সভাপতি হওয়ার আর্জি জানান, সে দিনও রাহুল জানিয়ে দেন, ‘‘যে ভাবে দল চলছে, তার নেতৃত্ব আমি দিতে চাই না। কিছু নেতা যে ভাবে কাজ করছেন, তা একেবারেই ঠিক নয়। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমার ও তাঁদের অবস্থানে ফারাক আছে। আমি জানি, কী করে লড়াই করতে হবে, আরও আক্রমণাত্মক হতে হবে। ছোটখাটো লড়াইয়ে লাভ নেই।’’
কিন্তু প্রশ্নটা হল, লড়াই করতে কে আর বাধা দিচ্ছেন তাঁকে? না কি এ সব কথা বলে তাঁর প্রত্যাবর্তনের দাবিতে দলে ‘ধ্বনি-ভোট’ বাড়ানোর কৌশল নিচ্ছেন?