Accident

‘প্রথমে বুঝিনি গন্ধটা মৃত্যুরই’

যখন খবর পাই, আমরা অনেকেই বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব দিইনি।

Advertisement

রাম মোহন (স্থানীয় বাসিন্দা)

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২০ ০৩:১৪
Share:

গ্যাস লিকের পরে ওই কারখানা । বৃহস্পতিবার বিশাখাপত্তনমে। —ছবি রয়টার্স।

গন্ধটা খুব ঝাঁঝালো নয়। আমার তো ভালই লাগছিল প্রথমে। অনেকটা নেলপালিশ রিমুভারের মতো গন্ধ। একটু মৃদু। কিন্তু সেই গ্যাস যে এমন বিষাক্ত, কারও ধারণাই ছিল না। মানুষ, গবাদি পশু, পোষ্য কুকুর-বিড়াল নির্বিশেষে এলাকা ছাড়তে যাঁরা দেরি করেছিলেন, সাতসকালে নিষ্প্রাণ দেহ মিলেছে তাঁদের অনেকের।

Advertisement

স্ত্রী-পুত্রকে পিলিয়নে বসিয়ে রাতের অন্ধকারে স্কুটার ছুটিয়েছিলেন এক মধ্যবয়সি। বেঙ্কটপুরমে এলজি পলিমার্সের কারখানার খুব কাছেই তাঁদের বাড়ি। এক কিলোমিটারও যেতে পারেননি। জ্ঞান হারিয়ে একে একে পড়ে যাওয়ার পরে উল্টে যায় স্কুটারটি। পিছনের চাকা ঘুরতে ঘুরতে স্থবির হয়ে যায় এক সময়। দিনের আলো যখন ফুটেছে, গোটা পরিবার রাস্তায় শুয়ে, নিথর। স্টাইরিন গ্যাসের তীব্র বিষক্রিয়ায় সকলের চোখের মণি কেমন ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে।

যখন খবর পাই, আমরা অনেকেই বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব দিইনি। আমাদের বাড়ি এনএডি জংশন লকডাউনের অরেঞ্জ জ়োনে। ঠিক সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে বেঙ্কটপুরমও তাই, যেখানে এলজি-র ফ্যাক্টরি। শেষ রাতে ঘুম ভেঙে যায় পরিচিত এক জনের ফোনে। পুলিশ তাঁদের ডেকে তুলে এলাকা ছেড়ে দূরে চলে যেতে বলছে। যাওয়ার মতো বন্ধু-স্বজনদের বাড়ি থাকলে ভাল, না-হলে কোনও সরকারের তৈরি অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে। একে করোনা-জনিত লকডাউনের বিরক্তি। তার উপরে পুলিশের এই সতর্কতা বাড়তি হ্যাপা ছাড়া অন্য কিছু মনে হয়নি সকলের। ফোনে আমার বন্ধুর কথাতেও সেই সুর। তবে পুলিশের গাড়িতে তাঁরা বাড়ি ছেড়ে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। ভাগ্যিস!

Advertisement

আরও পড়ুন: ৩৬ বছর আগে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার স্মৃতি ফেরাল বিশাখাপত্তনম, কী ঘটেছিল সে দিন

লকডাউনের রাতে আর বেরোইনি। ঘুম ভাঙল সেই গন্ধের রেশ নিয়ে। কিন্তু সকাল ছ’টাতেই তীক্ষ্ণ হুটার বাজিয়ে ছুটে চলেছে একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স। বাইরে শোরগোল। টেলিভিশনের খবরের চ্যানেলে তখন একের পর এক দেহ আবিষ্কার চলছে। পর পর উদ্বিগ্ন টেলিফোন। খবর পেলাম বেশ কয়েক জন পরিচিত অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ফোন করলাম এক জনকে। বেজে বেজে কেটে গেল। আরও অনেককে। কারও ফোনেই সাড়া নেই। এক অদ্ভূত মৃত্যুভয় ধীরে ধীরে আমাকে গ্রাস করতে লাগল।

ছুটে বেরিয়ে গেলাম বাড়ি থেকে। ঘড়িতে সোয়া সাতটা। লকডাউন অমান্য করে অনেকেই রাস্তায়। তখনই ফোন এক জনের, যাঁকে আগে ফোন করে পাইনি। বললেন, গলায় ভয়ানক জ্বালা। হাপরের মতো শ্বাস নিচ্ছেন। মাথার যন্ত্রণা। অল্প কথায় যা বললেন, পুলিশ সময়ে ধাক্কা দিয়ে না তুলে দিলে তাঁর মতো অনেকেই ঘুমের মধ্যেই মরে পড়ে থাকতেন। আপাতত হাসপাতালে। আরও অনেকেই বলছেন, পুলিশ সময়ে না নামলে ভোপাল কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি হতো বিশাখাপত্তনমেও।

আরও পড়ুন: ভোপালের ছায়া বিশাখাপত্তনমে, গ্যাস লিকে মৃত ১১, অসুস্থ ১০০০

গুনছি অ্যাম্বুল্যান্স। সাতটা, দশটা এক সঙ্গে দৌড়চ্ছে হাসপাতালের দিকে। সামনে পুলিশের গাড়ি। ভেতরে থাকা মানুষগুলো যে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ছটফট করছেন, দিব্যি বোঝা যাচ্ছে।

গ্যাসের গন্ধটা এখন ভীষণ অসহ্য লাগছে। যেন অসহায় মৃত্যুর গন্ধ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement