তৃণমূলে এ এক নতুন গেরো!
দার্জিলিং সমস্যা, জলপাইগুড়িতে বন্যার মতো হাজারো বিষয় নিয়ে গত দু’দিন ধরে দিল্লিতে ব্যস্ত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যেই এক উটকো সমস্যা এসে পড়ল ঘাড়ে! দলের এক ডজন সাংসদের ক্রস ভোটের অভিযোগ নিয়ে গোয়েন্দাগিরি!
ঘটনাটা কী?
উপরাষ্ট্রপতি ভোটের সময় দিল্লিতে ছিলেন তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়। বিজেপি শিবির থেকে প্রচার করা হয়, মুকুলের নেতৃত্বে তৃণমূলের প্রায় ১২ জন সাংসদ উপরাষ্ট্রপতি ভোটে ক্রস ভোট দিয়েছেন। সংসদের আনাচে কানাচে, সেন্ট্রাল হলের লবিতে জোর গবেষণার বিষয় হয়ে ওঠে, তৃণমূলের কে কে বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে ভোট দিয়েছেন? মুকুল নাকি বিজেপি নেতাদের জানিয়েছেন, যে এক ডজন তো বটেই। বিজেপি এই দাবি করলেও মুকুল একে নেহাতই অপপ্রচার বলে দাবি করে বলেন, ‘‘বিজেপির তোষামোদ করাটাই যদি লক্ষ্য হতো, তা হলে পূর্ব মেদিনীপুরের জনসভায় গিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতাম না। মমতাদি আমার নেত্রী ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।’’
এ যাত্রায় মমতা দিল্লিতে আসতে না আসতেই নানা সূত্রে তাঁর হাতে একটি তালিকা পৌঁছে যায়। তাতে বেশ কয়েক জন তৃণমূল সাংসদের নাম। বলা হয়েছে, এটি মুকুলের তৈরি তালিকা। সেই তালিকায় যে নামগুলো রয়েছে, তাঁরা হলেন— প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুপম হাজরা, শতাব্দী রায়, দেব, অপরূপা পোদ্দার, শিশির অধিকারী, দিব্যেন্দু অধিকারী, দশরথ তিরকে, দীনেশ ত্রিবেদী, কে ডি সিংহ এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত কাল রাতে মমতার বাসভবনে নৈশভোজে এসেছিলেন সুদীপ ও তাঁর স্ত্রী নয়না। সেখানেই মমতাকে সুদীপ বলেন, ‘‘জানি না কেন এ সব অপপ্রচার করা হয়েছে। অন্যদের কথা জানি না, আমি পাগল হয়ে যাইনি।’’ আজ সকালে অপরূপা পোদ্দারও পুষ্পস্তবক হাতে নিয়ে মমতার কাছে হাজির হন। মমতাকে তিনি বলেন, ‘‘দিদি, আমাকে কেউ খেতে ডাকলে আমি খেতে যাই। কিন্তু অন্য কারো কথায় দলের নির্দেশ অমান্য করে ক্রস ভোট দেব কেন?’’ একই বক্তব্য দীনেশ ত্রিবেদীরও। তিনি তো দলের মধ্যে মুকুলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করে বলেছেন, এ সবই ওঁর অপপ্রচার। বাকিরাও একই ভাবে নেত্রীর কাছে জানিয়েছেন, এ সবই অপপ্রচার। তাঁরা কেউই ক্রস ভোট দেননি।
মমতা সকলের সঙ্গেই কথা বলেছেন। তৃণমূল নেত্রীর ধারণা, কে ডি সিংহ ছাড়া অন্য কেউই ক্রস ভোট দিতে পারেন না। ঘটনা হল, রাজ্যসভা ভোটে কেউ ক্রস ভোট দিলে তা জানা যায়। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি ভোটে তা কোনও ভাবেই জানা যায় না। তা ছাড়া এই ভোটে হুইপ জারি হয় না। এটা বিবেকের ভোট।
তবু একগুচ্ছ নাম নিয়ে দিল্লিতে ক্ষমতার অলিন্দে চলছে অবিরাম জল্পনা। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি মুকুলের নেতৃত্বে এই সাংসদেরা বিজেপির দিকে পা বাড়াতে চাইছেন?